পিক-থুতু ফেললে জরিমানা এখনও এ শহরের ভাবনাতেই

এপ্রিলে যা আমদাবাদ পুরসভা করল, বাংলা তা ভেবেছিল নভেম্বরে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০২
Share:

রঞ্জিত: হাওড়া সেতুর স্তম্ভ। নিজস্ব চিত্র

স্বচ্ছ অভিযানে গুজরাত পারে। নির্মল বাংলায় তৎপরতা দেখা যায়। এলাকা নোংরা করলে কী ভাবে আইনের সাহায্যে অভিযুক্তের জরিমানা করা সম্ভব তা নিয়ে কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা হয়। তবে বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। কিন্তু গুজরাতের আমদাবাদ পুরসভা (এএমসি) সেটাই করে দেখিয়েছে।

Advertisement

গত ৫ এপ্রিল আমদাবাদের সর্দার পটেল স্ট্যাচু রোডের ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন মুখে গুটখা ছিল বাইক আরোহী মহেশ কুমারের। নির্দ্বিধায় তিনি গুটখার পিক রাস্তায় ফেলেন। মহেশের এই ‘কীর্তি’ আমদাবাদ পুরসভার সিসি ক্যামেরা দেখে ফেলে। বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। এই অপকীর্তির জন্য নারোদার বাসিন্দার বাড়িতে সে রাজ্যের আইন মেনে ১০০ টাকা জরিমানার রসিদ পাঠিয়েছেন আমদাবাদ পুর কর্তৃপক্ষ।

এ শহরে অবশ্য টালা থেকে টালিগঞ্জে এ দৃশ্য দেখতে মোটেও কসরত করতে হবে না। এমনকি মেট্রো স্টেশনের বাইরে এবং সরকারি হাসপাতালের দেওয়ালও সেই অভ্যাস থেকে ছাড় পায় না। অথচ মহানগরীর বিভিন্ন ট্র্যাফিক সিগন্যালের নজরদারি ক্যামেরার মেমোরি চিপ ঘাঁটলেও এমন দৃশ্যের দেখা মিলতে পারে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এপ্রিলে যা আমদাবাদ পুরসভা করল, বাংলা তা ভেবেছিল নভেম্বরে। উদ্বোধনের পরপরই ৬ নভেম্বর পান-গুটখার পিকে চিত্রিত হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক। এক দিন পরে ফের এক যুবককে সেখানে থুতু ফেলতে দেখে তাঁকে ধরে ফেলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এর পরে ওই যুবককে দিয়েই তাঁর ফেলা নোংরা পরিষ্কার করানো হয়। বস্তুত, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতেই শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেন। নবান্ন সূত্রের খবর, এলাকা নোংরা করলে জরিমানা করার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের কথাও ভাবা হয়েছিল। তার রূপরেখা ঠিক করতে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, কেএমডিএ-র আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই সময়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, ‘‘অসেচতন অবস্থায় অথবা ইচ্ছা করে যত্রতত্র থুতু, পানের পিক ফেলে এলাকা নোংরা করা হচ্ছে। আইন দেখে জরিমানার রূপরেখা তৈরি করবে কমিটি।’’

আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে ট্রমা কেয়ারের সামনে। নিজস্ব চিত্র

এর পর মাস পাঁচেক কেটেছে। এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ হয়েছে এমন নিশ্চয়তা রবিবারেও প্রশাসনিক কর্তাদের কোনও স্তর থেকেই পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে, আমদাবাদ। সেখানে সিগন্যালের সিসি ক্যামেরা থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গাড়ির নম্বর প্লেটের সূত্র ধরে মালিকের ঠিকানা জোগাড় করা হয়। সেখানে পৌঁছে যায় জরিমানার রসিদ। আমদাবাদের পুর কমিশনার বিজয় নেহরা সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রকাশ্য রাস্তায় থুতু-পিক ফেললে দোষীদের জরিমানা করার জন্য পুরসভার একটি দল রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় স্তরে ‘স্বচ্ছ সুরবেক্ষণ’ সমীক্ষায় তালিকার প্রথম দশে রয়েছে আমদাবাদ।

রবিবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘আমদাবাদ পুরসভা খুব ভাল ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে গেলে, সুন্দর জিনিস রক্ষণাবেক্ষণ করতে সব জায়গায় এমন কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’’ সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আমদাবাদ পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সেখানের সিসি ক্যামেরাগুলি প্রযুক্তিগত ভাবে এতখানি উন্নত যে তা আঠারো রকমের ট্র্যাফিক ও জনস্বাস্থ্য আইন লঙ্ঘন চিহ্নিত করতে পারে।

পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ফাঁকা জমি-বাড়িতে আবর্জনা কেউ জমিয়ে রাখলে জরিমানা সংক্রান্ত আইন আছে। কলকাতা পুর এলাকায় এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কিন্তু তাতে পিক বা থুতু ফেলে রাস্তাঘাট এবং এলাকার যত্রতত্র নোংরা করার বিষয়টি সেখানে নেই। এ ক্ষেত্রে জরিমানা করা নিয়ে আমরা আগেই ভেবেছি। তবে এখনও আইনে পরিণত হয়নি। ভোটের পরে আমাদের সরকার এ বিষয়ে সচেষ্ট হবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement