নব সাজে গ্রন্থনবিভাগ
আর পারছেন না রবীন্দ্রনাথ। নানা রকম আশীর্বাদ-উপহারের কবিতা লিখে লিখে ক্লান্ত তিনি। চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখছেন, ‘চারু আর তো পারা যায় না। ক্রমাগত ফরমাস আসচে নানাদিক থেকে। বিষয়টা এক কলমটাও এক অথচ বাণীকে করতে হয় বিচিত্র। তোমাদের অনুরোধ এড়াবার জো নেই— অতএব...’। তবু পাঠালেন একটা কবিতা, এই চিঠির সঙ্গেই, চারুচন্দ্রের মেয়ে পুষ্পমালা-অমরেন্দ্রর বিয়ে উপলক্ষে। এমন নানা কবিতা এর আগে সংকলিত হয়েছে তাঁর লেখন ও স্ফুলিঙ্গ-এ। আরও কিছু কবিতা এ বার বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-রচনাবলির নতুন খণ্ডে। কবির অনেকগুলি মন্দির-ভাষণও সংকলিত হয়েছে এই নবতম ৩৩ খণ্ডে। শঙ্খ ঘোষের উপদেশনায় প্রস্তুত এই খণ্ডে আছে আশিস পাঠক ও শ্যামাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের করা সবিস্তার গ্রন্থপরিচয়ও। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আট দশক ধরে চলা বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-রচনাবলি-র কাজ আর এক খণ্ডে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা। গত বাইশে শ্রাবণ রচনাবলির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল বিশ্বভারতী পত্রিকার নন্দলাল বসু সংখ্যার বিশেষ প্রতিলিপি সংস্করণের। ১৯৬৬-তে সুশীল রায়-সম্পাদিত সংখ্যাটির এই প্রতিলিপি সংস্করণে বাদ যায়নি বিজ্ঞাপনগুলিও। প্রথম প্রকাশের কাপড়ে বাঁধাইও অবিকল একই রকম রাখা হয়েছে (সঙ্গে নন্দলালের ‘শিবের বিষপান’ ছবিটি সেই সংখ্যা থেকেই)। বদলে গিয়েছে গ্রন্থনবিভাগের চিরাচরিত পুস্তকতালিকার প্রচ্ছদটিও। শহরের এই নব্বই-পেরনো প্রকাশনা-সংস্থাটি নতুন করে সেজে উঠছে, আশার কথা বইকি!
প্রয়াণ
তিনি শুধু ঋষি বঙ্কিম কলেজে অধ্যাপনাই করেননি, একালের বাঙালির কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের অস্তিত্বকে সজীব করে তুলেছিলেন। নৈহাটিতে তাঁরই যত্ন ও উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র। তাঁর সম্পাদনায় আবার প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল ‘বঙ্গদর্শন’। অধ্যাপক সত্যজিৎ চৌধুরী (১৯৩১-২০১৭) বঙ্কিমবলয়ে মগ্ন থাকতে ভালবাসতেন। তাঁর সম্পাদনায় খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা সংগ্রহ। অবশ্য তাঁর আগ্রহ কেবল উনিশ শতকের বাঙালি মেধার কাছেই নত নয়, শিল্পসংস্কৃতির অন্য পরিসরেও তিনি ছিলেন সমান সচল। অবনীন্দ্রনাথ-নন্দলালের ছবি, চলচ্চিত্রবিদ্যা
এ সবেও ছিল তাঁর মেজাজি যাতায়াত। মৃদুভাষী, রুচিশীল, ধুতিপাঞ্জাবি পরিহিত সুভদ্র মানুষটি পঠন-পাঠন ও গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ও সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর সঙ্গেও। প্রয়াত হলেন তিনি, রুচির সমগ্রতায় বিশিষ্ট এক বাঙালি চলে গেলেন। ৮ সেপ্টেম্বর ৫টায় নৈহাটির ঐকতান মঞ্চে সত্যজিৎ চৌধুরী স্মরণ সমিতির আহ্বানে তাঁর স্মৃতি তর্পণ।
চলচ্চিত্রশিল্পী
ফিল্মে হাতেকলমে কাজ শুরু ১৯৩৮-এ, তবু দশ বছর পেরনোর পর, জাঁ রেনোয়া যখন কলকাতায় এলেন ‘রিভার’ ছবির কাজে, তাতে অপারেটিং ক্যামেরা-র দায়িত্বে যুক্ত হলেন রামানন্দ সেনগুপ্ত, বলেছিলেন ‘ওঁর চোখ দিয়েই আমি ভারতবর্ষকে নতুন ভাবে চিনতে শিখেছি।’ জন্ম ১৯১৬-য়, ঢাকার মানুষ, সতীশচন্দ্র-সুরমার সন্তান। মামা ক্ষিতিমোহন সেনের হাত ধরে ১৯২৫-২৬-এ শান্তিনিকেতনের শিশুবিভাগে শিক্ষা শুরু। রেনোয়াই তাঁকে ইংল্যান্ডের টেকনিকালার স্টুডিয়োতে পাঠিয়েছিলেন বিশদ ভাবে রঙিন ছবির কাজ শিখতে। ঋত্বিক ঘটকের নাগরিক, মৃণাল সেনের রাতভোর সহ নতুন ইহুদি, হেডমাস্টার, ডাক হরকরা, বিন্দুর ছেলে, অভিশপ্ত চম্বল, হংসমিথুন, তিন ভুবনের পারে, ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট, শেষরক্ষা... এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ বাংলা ছবির সিনেমাটোগ্রাফার তিনি, কাজ করেছেন ওডিয়া অসমিয়া ছবিতে, তথ্যচিত্রেও। লড়াই করে সহকর্মীদের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়ো। শতবর্ষ পেরনো মানুষটি হঠাৎই চলে গেলেন সদ্য।
ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে
‘দাঙ্গার আগুন হঠাৎ জ্বলে ওঠে, আবার অল্পে অল্পে একদিন নিভেও যায় তা, অপেক্ষা থাকে পরবর্তী আরো কোনো এক নতুন দাঙ্গার জন্য। এই মধ্যবর্তী সময়টায় আমরা কী করি? সাম্প্রদায়িক অপচেতনার বিষ যাতে মনের ভিতরে ভিতরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য কতটা আয়োজন থাকে আমাদের দৈনন্দিনে?’— দেড় দশক আগে এই ভাবেই আত্মপ্রশ্নে আমাদের সচেতন করতে চেয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। বলেছিলেন— ‘কথা বলতে হবে দুই সম্প্রদায়েরই কূট মৌলবাদের বিরুদ্ধে, কথা বলতে হবে দুই সম্প্রদায়েরই ভালোভাবে বেঁচে থাকবার আয়োজনের সপক্ষে।’ এই পথনির্দেশকে সহায় করে, শঙ্খ ঘোষের উপস্থিতিতেই ‘অহর্নিশ’ এবং ‘ক্র্যাকার সাহিত্যপত্র’ আয়োজন করেছে ‘ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আমরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান, ১০ সেপ্টেম্বর, পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে, সময় সন্ধ্যে ৬টা। থাকবে ‘লোহার দাম’ নাটকের পাঠ-অভিনয়, পরিবেশনায় অশোকনগর নাট্যমুখ।
সুচিত্রা উৎসব
গানকে শ্রোতার অনুভবগত করে তোলা, বাচনভঙ্গির ঋজুতা, উচ্চারণের স্পষ্টতা, সর্বোপরি দৃশ্যবাহিত ও শ্রুতিবাহিত পরিবেশনা শিক্ষণীয় ছিল সুচিত্রা মিত্র-র কাছে। এ জন্য রবীন্দ্রপাঠের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতেন তিনি। কবির গানের বাণী ভাবের পূর্ণতা পায় সার্থক রবীন্দ্রপাঠে। এই মন্ত্রবীজ তিনি বপন করে দিতেন শিক্ষার্থীর মনে। তাঁর শিক্ষক জীবনের অবদানকে জন্মদিনের অবসরে শ্রদ্ধা জানাতে এ বছর তাঁরই প্রিয় ছাত্রী মন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে, তাঁর সংস্থা পূরবীর ‘সুচিত্রা মিত্র উৎসব’-এর ভাবনা ‘আচার্যদেবো ভব’। রবীন্দ্রসদনে ১২, ১৩ সেেপ্টম্বর ও হাওড়া শরৎ সদনে ২১ সেপ্টেম্বর, সন্ধে সাড়ে ৫টায়। উৎসবে থাকবে বিশিষ্টদের স্মৃতিচারণা, মন্দিরার একক পরিবেশনা ও হাজারেরও বেশি শিল্পী সমাবেশ। দেখা যাবে গীতিনৃত্য আলেখ্য ‘হে ভৈরব’। দ্বিতীয় দিনে রবীন্দ্র রূপক নাট্যের গ্রন্থনা ‘বাঁধন ছেঁড়ার গান’। শেষ দিনে শিশু-কিশোরদের অনুষ্ঠান ‘ছুটির বাঁশি’।
কিংবদন্তি
বড় বড় রাজদরবার থেকে তাঁর কাছে অনুরোধ আসত— সেখানকার সভাবাদক হিসেবে আসন অলংকৃত করার জন্য। কিন্তু তিনি অনড়। ‘প্রথম অন্নদাতা’কে ছেড়ে কোত্থাও যাবেন না। অর্থাৎ মধ্যপ্রদেশের মাইহারের রাজা ব্রজনাথ সিংহর দরবারেই জীবন কাটাবেন। তা-ই করলেন। ১৯৭২-এর ৬ সেপ্টেম্বর মাইহারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তার অনেক আগেই জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন আলাউদ্দিন খান— সর্বজনীন ‘বাবা’, সেনী মাইহার ঘরানার জনক। এ বার ‘বাবা’র স্মৃতিরক্ষা ও ভাবধানা রূপায়ণে ব্রতী ‘বাবা আলাউদ্দীন স্মারক সমিতি’ আচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগিতায় আয়োজন করেছে সংগীত সমারোহ। থাকবেন মাইহার ঘরানার পণ্ডিত মনোজশংকর, বাবার প্রপৌত্র সিরাজ আলি খান, সুরঞ্জনা বসু, রঞ্জন ঘোষ-সহ বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ।
চিকিৎসক-স্মরণ
বড় হয়েছিলেন রাজনীতির পরিবেশে। ঠাকুর্দা বিখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র, বাবা প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট আইনজীবী কাশীকান্ত মৈত্র। সুব্রত মৈত্র (১৯৫৬-২০১৬) কিন্তু ডাক্তার হলেন। বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরে চিকিৎসা শুরু করলেন। শহরের নানা প্রান্তের রোগীদের পরিষেবা দিতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে গড়ে তুললেন মেডিক্যাল কনসর্টিয়াম। স্বামী রঙ্গনাথানন্দের চিকিৎসার সূত্রে তাঁর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন, পরে তাঁর কাছেই দীক্ষা নেন। বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুন্দরবনের আগরহাটিতে গড়ে তোলেন চিকিৎসাকেন্দ্র। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় বহু পরামর্শ দিয়েছেন। মাত্র ৫৯ বছর বয়সে আকস্মিক ভাবে প্রয়াত হন তিনি। ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটেয় রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের বিবেকানন্দ হল-এ তাঁর নামাঙ্কিত প্রথম স্মারক বক্তৃতা, বলবেন ডা. কুণাল সরকার। স্মৃতিচারণে ডা. কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়।
দার্জিলিঙের ছবি
হিমালয় তাঁর কাছে নিছক দূর থেকে দেখা নিসর্গ নয়, সেখানকার মানুষজনকে নিয়ে গড়ে ওঠা এক সজীব সত্তা। হিমালয়ের প্রতি পটপরিবর্তন তাঁর নখদর্পণে। দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কিউরেটর, শিল্পী চন্দ্রনাথ দাস তাঁর ছবির বিষয় হিসাবে স্বাভাবিক ভাবেই বেছে নিয়েছেন দার্জিলিংকে। দেশবিদেশে প্রদর্শনী করেছেন, বই লিখেছেন। চন্দ্রনাথের ‘দার্জিলিং মাই মিউজ’ প্রদর্শনীটি দেখা যাবে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ, ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ৩-৮টা। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে।
নাটক সমগ্র
‘উন্নয়নের নামে ইকলজির গরুটিকে দুইয়ে দুইয়ে পরিবেশটাকে নষ্ট করা তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’ এ সংলাপ বাংলা থিয়েটারে অপ্রতুল ছিল যখন সুপ্রীতি মুখোপাধ্যায় ‘বিতত বিতংস’ লিখেছিলেন। নাটকটি শাঁওলী মিত্রের নির্দেশনায় ১৯৯৬-এ মঞ্চস্থ করে পঞ্চম বৈদিক। আবার ২০০৫-এ মঞ্চস্থ তাঁর ‘উদ্বাস্তু উদ্বাস্তু’-তে লিখেছেন ‘আজ রাষ্ট্রের ভাণ্ডারে যে অস্ত্র, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতেও সমান বিধ্বংসী অস্ত্র।’ তাঁর প্রতিটি নাটকেই এই অসম গণতন্ত্রের সমাজে ব্যক্তির বিপন্নতার কথা উঠে আসে... অগ্নিমন্থ, সুজন ব্রতীর সীমান্ত, ভবভূতির আখ্যান, গরল ভাসান, খেলার পুতুল, পুপুর জন্মদিন। ১৯৮৮ থেকে ২০০৮-এর মধ্যে লেখা এ সমস্ত ক’টি নিয়ে বেরল তাঁর নাটক সমগ্র (এম সি সরকার)। গত ২২ অগস্ট সন্ধেয় জীবনানন্দ সভাঘরে, শম্ভু মিত্রের জন্মদিন উপলক্ষে।
স্মারক বক্তৃতা
তখন স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তাল এ দেশ, রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম সহ-সংঘাধ্যক্ষ স্বামী অচলানন্দ এক যুবকের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন ‘স্বামীজির কাজের জন্য জীবন দাও।’ সেই যুবকই পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ সংঘের পঞ্চদশ সংঘাধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ (১৯১৯-২০১৭)। পিতা রামনারায়ণ ভট্টাচার্য ছিলেন চৈতন্যপার্ষদ গদাধর পণ্ডিতের বংশধর, আর মা ননীবালা বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর ভাইঝি। পরিবারের এই আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারই স্বামী আত্মস্থানন্দের মধ্যে। ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টোয় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির, বেলুড় মঠের আশাজ্যোতি কনফারেন্স হলে প্রথম স্বামী আত্মস্থানন্দ স্মারক বক্তৃতা দেবেন লোকনাথ চক্রবর্তী, সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদান্ত-র অধ্যাপক। বিষয়: ‘ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও আমরা’। এ ছাড়াও সেদিন প্রকাশ পাবে দু’টি বই: বিপিনচন্দ্র পালের অধ্যাপক ম্যাক্স মূলর (সম্পা: চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল) ও সৌরীন ভট্টাচার্যের মননের স্বাধীনতা ও আধুনিকতা। প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠান সূত্রধর ও রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির, বেলুড় মঠের দর্শন বিভাগের সম্মিলিত আয়োজনে অনুষ্ঠানটি হবে।
একরৈখিক
একরৈখিক! এক টানে জীবনের প্রবাহের নানা রূপ। রোজ জীবনের নানা অনুভূতি এ ভাবেই বহু বছর ধরে জমা হয়েছে শিল্পী কৌস্তভ চক্রবর্তীর আঁকার খাতায়। তা দিয়ে কখনও তৈরি হয়েছে ছোট ছোট গল্প, কখনও বা তা ফুটে উঠেছে শুধুই ক্ষণিকের ভাবনা। সৃষ্টির আগে থেকে যে প্রবাহ শুরু হয়েছে, সময়ের সঙ্গে বদলে বদলে গিয়েছে তা দেখার চেষ্টা। শিল্পীর একরৈখিক ছবিও খুঁজে বেরিয়েছে সেই প্রবাহকেই। শিল্পীর সেই সন্ধানের ৬০টি ছবি নিয়ে গত ১ তারিখ থেকে আইসিসিআর-এর যামিনী রায় গ্যালারিতে শুরু হয়েছে একক প্রদর্শনী। চলবে ৭ তারিখ পর্যন্ত, ৩-৮টা। সঙ্গে থাকছে একরৈখিক ছবি এবং প্রবাহের ভাবনা ঘিরে আলোচনা, গান ও নাটক।
দশনামী
শঙ্করাচার্যের সূত্রে সম্পৃক্ত হয়ে ওঁরা ছড়িয়ে পড়েছিলেন গঙ্গার তীর ধরে, গুপ্তিপাড়া থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত। শিবভক্ত এই সম্প্রদায়ের মানুষদেরই অভিহিত করা হয় দশনামী সম্প্রদায় হিসেবে। সপ্তদশ থেকে উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত এদের প্রধান গদি ছিল তারকেশ্বর। আমেরিকার টাফ্ট্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক ব্রায়ান এ হ্যাচার দীর্ঘদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে চলেছেন এই বাংলায়। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজের ফেলোশিপে এই কাজটি করছেন তিনি। ওঁর অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে বৈদ্যবাটি, হুগলি বা মেদিনীপুরের দশনামী মন্দির বা মোহন্তদের সমাধি। গুপ্তিপাড়ায় এদের আগমন ১৬৮০ নাগাদ, আর ১৭০৪-এ বৈদ্যবাটি। মোহন্ত পূরণ গিরিকে ভোটবাগানের জমিটি ১৭৭৮-এ দান করেন স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস। কী ভাবে এই সম্প্রদায়ের অবস্থা ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসছে, সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এই শহরের সঙ্গে ব্রায়ানের গভীর সম্পর্ক। কিছুকাল কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনে। বাংলা বুঝতে এবং বলতেও পারেন চমৎকার। গত ২৯ অগস্ট কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাসে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে তিনি বললেন দশনামী নেটওয়ার্কস ইন আর্লি কলোনিয়াল সাউথওয়েস্ট বেঙ্গল শীর্ষকে। উপস্থাপন করলেন অনালোকিত ধর্ম ইতিহাসের এক অধ্যায়।