কলকাতার কড়চা: স্মৃতির ছবিতে কলকাতা

আলোকচিত্রী জয়ন্ত পটেলের ক্যামেরার চোখে যে বইটিতে ধরা পড়েছে এক অদেখা কলকাতা। পার্ক স্ট্রিটে অবস্থিত ছিল সে কালের বম্বে ফটো স্টোর্স। কলকাতার অমলিন স্মৃতির সঙ্গেই যা জুড়ে রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪১
Share:

আলোকচিত্র নীরব ভাষায় কথা বলে’, ক্যালকাটা ১৯৪০-১৯৭০: ইন দ্য ফটোগ্রাফস অব জয়ন্ত পটেল (নিয়োগী বুকস) শীর্ষক বইটির মুখবন্ধে লিখেছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। আলোকচিত্রী জয়ন্ত পটেলের ক্যামেরার চোখে যে বইটিতে ধরা পড়েছে এক অদেখা কলকাতা। পার্ক স্ট্রিটে অবস্থিত ছিল সে কালের বম্বে ফটো স্টোর্স। কলকাতার অমলিন স্মৃতির সঙ্গেই যা জুড়ে রয়েছে। বিদেশ থেকে ফিরে জয়ন্তের বড় ভাই এই ব্যবসা শুরু করেন ১৯৪০-এ। কিন্তু কলকাতার এই বিপণির সঙ্গে ‘বম্বে’ কেন জুড়ে তা আজও অজানাই! জয়ন্তবাবু গভর্নমেন্ট হাউসের (রাজভবন) জন্য ছবি তুলতেন। তবে সে কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। বরং সাদা-কালো ছবিতে ওঁর ক্যামেরা খুঁজে বেড়িয়েছে বাড়ি, স্থাপত্য, জনজীবন ইত্যাদি এই শহরের সঙ্গে সংযুক্ত নানা বিষয়। এসেছেন রাজাগোপালাচারী, নেহরুর মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। দেশভাগের আগে এবং পরের কলকাতা ধরা পড়েছে ওঁর ছবিতে। একবার তিনি যখন অসুস্থ, সেই সময় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ‘ম্যাজেস্টিক ক্যালকাটা’ শীর্ষকে। এই প্রদর্শনীর বিপুল সাফল্যের পর গোপালকৃষ্ণ গাঁধী প্রস্তাব দেন এটি বই আকারে প্রকাশ করবার। বইটির জন্য লেখক-প্রকাশকের ব্যবস্থা করতেই অনেকখানি সময় চলে যায়। এপিজে কলকাতা লিটারারি ফেস্টিভ্যালের অংশ হিসেবে সম্প্রতি হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্টস সেন্টারে প্রকাশ পেল সেই বহু-প্রতীক্ষিত বইটি, ওঁর স্ত্রী লীলা পটেলের আগ্রহে। নন্দিতা পালচৌধুরীর সঞ্চালনায় এ দিন গ্রন্থ প্রকাশের পর মুখবন্ধটি পাঠ করে শোনান ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন কিশোর ভিমানি। বইটিতে ছবির সঙ্গে বিবরণ লিখেছেন সৌমিত্র দাস। সঙ্গের ছবিতে লীলা পটেল ও ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দ্বিশতবার্ষিকী

Advertisement

বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের (২১১ বিধান সরণি) গ্রন্থাগার শিবনাথ মেমোরিয়াল হলে। দেবেন্দ্রনাথের বিভিন্ন বয়সের ছবিসহ তাঁর কর্মমুখর জীবনের নানান দিক যেমন স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার, সমাজ-সংস্কার, ধর্মশিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রদর্শনীতে। থাকছে তাঁর অন্তিম ইচ্ছাপত্র, তাঁর প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববোধিনী সভা ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার কিছু দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্রও। আয়োজনে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ২০ জানুয়ারি এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পবিত্র সরকার, চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই উপলক্ষে প্রকাশিত হল তিনটি গ্রন্থও— তত্ত্ববোধিনী সভার কথা (গৌতম নিয়োগী ও অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়), উনিশ শতকের বাংলা ও বাঙালি (সম্পা. দেবব্রত ঘোষ) এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ: দ্বিশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি (সম্পা. সনৎ নস্কর)। দেবেন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সাময়িকপত্রে লেখা প্রবন্ধগুলি সংগ্রহ করে প্রকাশিত হয়েছে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ‘তত্ত্ব-কৌমুদী’র (সম্পা. প্রেমময় দাস) বিশেষ সংখ্যাও। সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথের দুর্লভ ছবিটি তাঁর ত্রিশ বছর বয়সের, রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়ামের সৌজন্যে।

হোমসনামা

রহস্যকাহিনি ভালবাসেন আর শার্লক হোমসের গল্প পড়েননি, এমন মানুষ বিরল। কিন্তু গল্পের মধ্যেও যে আরও অনেক গল্প লুকিয়ে থাকে, তা পড়েন ক’জন? কৌশিক মজুমদার পড়েছেন, আর তারই ফল হোমসনামা (বুকফার্ম) বইটি। এক দিকে তিনি চিনিয়েছেন লেখক আর্থার কোনান ডয়েলকে, লিখেছেন তাঁর জীবনী। অন্য দিকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন তাঁর গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে। হোমস শুধুই কাগুজে, না রক্তমাংসের? তাঁর জন্ম কবে? তাঁর জীবনযাত্রাই বা কেমন ছিল? হোমসের লন্ডন কেমন? কেমন ছিল ভিক্টোরীয় ইংল্যান্ডের অপরাধজগৎ? হোমস-কাহিনিতে তার প্রতিফলন কতটা? সবই আছে এই বইয়ে। আছে মানে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিয়ে তথ্যের উপর তথ্যে ঠাসা নয়, ঝরঝরে ভাষায় সেই গল্প শুনিয়েছেন কৌশিক। পাশাপাশি রয়েছে ৩০০টিরও বেশি দুষ্প্রাপ্য ফটোগ্রাফ, মানচিত্র, বিজ্ঞাপন, কার্টুন ও অলংকরণ। পড়ার সঙ্গে মৌজ করে দেখার আশও মিটিয়েছেন লেখক। এমন বই বাংলায় আরও হওয়া দরকার। সঙ্গে বইটির প্রচ্ছদ।

নিক্বণ মেলা

শুধু বাঙালি জীবনেই নয়, মাছ রয়েছে পুরাণে, লোককথায়, গানে, কবিতায়, রান্নায়। এ বার সেই মাছ নিয়ে মেলাও হচ্ছে হাওড়ার বালিতে। শঙ্খ ঘোষের অভিভাবকত্বে আয়োজিত সেই নিক্বণ সাংস্কৃতিক মেলা ’১৮-র থিম: লোকসংস্কৃতিতে মাছ। বালি রেল কোয়ার্টারের মাঠে এই চার দিনের মেলা শুরু হবে ২৫ জানুয়ারি। থিম অনুযায়ী সাজানো হবে মেলার মাঠ এবং মঞ্চ। মাঠ সাজাতে ইতিমধ্যেই নানা জিনিস দিয়ে পাঁচ হাজার মাছ তৈরি করে ফেলেছেন নিক্বণের সদস্যরা। থাকবে মাছের ওপর স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রদর্শনী। ছবির প্রদর্শনী। আর থাকবে মাছ নিয়ে দেশের এবং রাজ্যের নানা প্রান্তের লোকনাচ-গান। এ বার এই মেলা পা দিচ্ছে চতুর্দশ বর্ষে। মেলার পরিকল্পনা এবং আয়োজনের প্রধান দায়িত্বে সংস্থার সম্পাদক পার্থ নাগ।

হিরণ লাইব্রেরি

১৯০৯। কলকাতা তখনও ভারতের রাজধানী। সে বছরই বিডন স্ট্রিটে জন্ম হল হিরণ লাইব্রেরির। প্রতিষ্ঠাতা হিরণকুমার ঘোষ, সঙ্গী ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বাবা কালীকৃষ্ণ ভদ্র, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু জগদীশনাথ রায় এবং গোয়েন্দা লেখক পাঁচকড়ি দে। একটি বাড়ির একতলায়, ৫১ টাকা ভাড়ায় শুরু হয়েছিল পাঠাগারটি। ভাড়াটা এখনও একই রয়েছে। এখানে নিয়মিত আসতেন সজনীকান্ত দাস, হেমেন্দ্রকুমার রায়। শিবরাম চক্রবর্তী ছিলেন এর সদস্য। গত শতকের দুষ্প্রাপ্য বই এবং পত্রিকা আজও পাঠাগারের সম্পদ। কিছুটা সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যেটুকু বেঁচে আছে, তা রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন পাঠাগারের সঙ্গে যুক্ত কিছু মানুষ। পাঠাগারের সম্পাদক সমর দে-র কথায়, গত বছর রাজ্য সরকারের দেওয়া দশ লক্ষ টাকায় শুরু হয়েছে পুরনো বইয়ের রক্ষণাবেক্ষণ। সহায়ক বই এবং ইন্টারনেট পরিষেবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের। এতে সাড়াও মিলেছে। শিশু ও কিশোরদের আগ্রহ বাড়াতে পাঠাগারের তরফে ১৪ জানুয়ারি শোভাবাজার নাটমন্দিরে এক কুইজ প্রতিযোগিতা হয়ে গেল। তাতে যোগদান করে হিন্দু, স্কটিশ চার্চসহ আটটি স্কুল। সিস্টার নিবেদিতার দখলে যায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান এবং তৃতীয় হয় বেথুন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ছিল সমাজজীবনে পাঠাগারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা।

বাংলায় বিজ্ঞান

অনেকেরই মত, বাংলা ভাষায় কাব্য-টাব্য চমৎকার হয়, কিন্তু বিজ্ঞানচর্চার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ইংরেজিতেই করা ভাল। সেই মতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে, ডা. অভিজিৎ চৌধুরীর সম্পাদনায় শুরু হল ওয়েবজিন ‘বিজ্ঞানভাষ’। প্রথম সংখ্যায় লিখেছেন নবনীতা দেব সেন সংগ্রাম গুহ সন্তোষ রাণা আশীষ লাহিড়ী দেবশঙ্কর হালদার ও আরও অনেকে। ‘ঐতিহ্য’ অংশে আছে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর নিবন্ধ। বিকাশ সিংহ লিখেছেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের সঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। ভারত সরকারের জৈব-প্রযুক্তি দফতরের সচিব কৃষ্ণস্বামী বিজয়রাঘবনের প্রবন্ধে পড়া যাবে, ইংরেজি ভাষার কাছে বৌদ্ধিক দাসত্ব আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি, তার অন্যতম কারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে আমরা সেই ভাষার প্রতি অন্ধ নির্ভরতার বাইরে বেরোইনি। সম্পাদক তাঁর কলমে লিখেছেন, বিদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা নানাখানা করে বলা আর পাথরপ্রতিমার কথা চেপে যাওয়ার যে প্রবণতা বাঙালি বিজ্ঞানীদের এখন হয়েছে, তার বাইরে অন্য পরিসর তৈরি করতে চায় এই পত্রিকা।

শতবর্ষে

‘‘গোয়েন্দাগল্প-পড়িয়ে হিসেবে মা ছিলেন বাবার থেকে বেশ কয়েক ধাপ উপরে।... ফেলুদার গল্প হলে তো কথাই নেই, মা-র হাতে পাণ্ডুলিপি ও একটা পেনসিল ধরিয়ে দিয়ে বাবা বলতেন, ‘দেখো তো রহস্য ও তার মোটিভটা যথেষ্ট জোরালো হয়েছে কিনা!’’ বিজয়া রায় সম্পর্কে এমন অজানা তথ্যের পাশাপাশি এ কথাও জানাতে ভোলেননি সন্দীপ রায়, ‘বাবার সব চিত্রনাট্যের প্রথম পাঠিকা ছিলেন মা।’ সন্দেশ-এ (সম্পাদক: সন্দীপ রায়) এ বারের সংখ্যার মূল আকর্ষণ: ‘বিজয়া রায় ১০০’। চারুলতা-য় ভূপতির নকশা করা রুমাল বা সোনার কেল্লা-য় মুকুলের লাল টুকটুকে সোয়েটার তাঁর হাতেই তৈরি। তাঁর শতবার্ষিকীর বছরে সন্দীপের লেখা যেন উপুড়-করা স্মৃতির ঝাঁপি, তাতে সত্যজিতের কাজের নিত্যসঙ্গীর নানান অনুষঙ্গ। বিজয়ার গলায় রবীন্দ্রনাথ নিজের গান শুনে খুশি হয়েছিলেন। আর সুপ্রভার গলায় গান শুনে বিস্ময়ে মুগ্ধ সুকুমার রায় স্থির করেন যে তাঁকেই বিয়ে করবেন... লিখেছেন বিজয়া। তাঁর আরও দুটি লেখা এই সংখ্যায়, একটি নিজের ছেলেবেলা নিয়ে। সঙ্গে দুর্লভ সব ছবি।

নতুন ঠিকানা

গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ম্যাক্সমুলার ভবন-এর দরজা আবার অবারিত কলকাতার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজনের জন্যে। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ভবনটি নিশ্চয়ই আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ী নস্টালজিয়া, তবু তো তা একটু দক্ষিণপন্থীই ছিল, উত্তরের লোকজন জ্যামজট ঠেলে আসতে-আসতে হাঁপিয়ে পড়তেন। এ বারে উত্তর-দক্ষিণ দুই কলকাতা, সঙ্গে বাকি কলকাতাবাসীর কাছেও বাড়তি আগ্রহ— পার্ক ম্যানসন। পার্ক স্ট্রিটের এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটিতেই নতুন করে উদ্বোধন হল ম্যাক্সমুলার ভবন-এর, অতীতের সঙ্গে ভবিষ্যতের হাত মেলানো। ১৩ জানুয়ারি ঝলমলে শীতের সন্ধ্যায় সূচনা-ভাষণে অধিকর্তা ফ্রিজো মেকার বললেনও: ‘ফর দ্য প্রেজেন্ট অ্যান্ড দ্য ফিউচার রুটেড ইন দ্য পাস্ট।’ এ শহরে ষাট বছরেরও ওপর ঠাঁইগাড়া ম্যাক্সমুলার ভবন-এর স্থানান্তরের পর মাত্র সাত মাস সময় লাগল গুছিয়ে নিতে... এ বারে আরও বিশদাকারে লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম, ভাষাশিক্ষার আয়োজন, আরও কত নতুন ব্যবস্থার পত্তন নতুন ভবনে। সঙ্গের ছবিতে পার্ক ম্যানসন।

পুতুলের বই

পুতুলের চিত্ররূপময় আবেদন অথবা তাদের সরলীকৃত রূপের তীব্র অভিঘাত হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের চেতনায় প্রোথিত হয়ে আছে। সংবেদনশীল বাঙালির মন পুতুলের রং, গড়ন, বিভঙ্গে খুঁজে পেয়েছে প্রাণের আনন্দ, চোখের আরাম এবং হয়তো বা আত্মার শান্তিও। কিন্তু প্রযুক্তি-শাসিত আজকের বিশ্বায়িত সমাজে ক্রমেই পিছু হটছে এই লৌকিক পরম্পরা। আজকের শিশু কিশোর-কিশোরীদের কাছে বড়াইবুড়ি, ঘাড়নাড়া বুড়ো, পক্ষিরাজ ঘোড়া, তালপাতার সেপাই এক অশ্রুত পদাবলি। বাংলার পুতুলের নষ্টকোষ্ঠী উদ্ধারে অল্প কিছু মানুষ অনেকটা সময় এবং শ্রম দিয়েছেন। পুতুল-বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনাকে মনে রেখে স্বাদু পরিচ্ছন্ন গদ্যে পুতুলের সাত সতেরো (কুবোপাখি প্রকাশন) লিখেছেন দীর্ঘ দিনের পুতুল-সংগ্রাহক অগ্নিবর্ণ ভাদুড়ী। সচিত্র বইটি ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় অবনীন্দ্র সভাঘরে প্রকাশ করবেন রবীন মণ্ডল। থাকবেন গৌতম সেনগুপ্ত, কালীকৃষ্ণ গুহ প্রমুখ।

অতৃপ্তির নেশা

চোখ থাকলেই দেখা যায় না’, বলছিলেন বাংলাদেশের গবেষক ও শিশুসাহিত্যিক খন্দকার মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন ‘উপোসী চোখ থাকলেই দেখা যায়। আমার মা এই অতৃপ্তির নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন।’ মা ছিলেন সাহিত্যের ছাত্রী। বাবা গণিতের শিক্ষক, ’৫২-র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। এঁদের কাছ থেকেই শেখা, বাংলার নিজস্ব রূপ আছে। বাড়িতে বইপত্রের আনাগোনা ছিল। তা থেকেই প্রচুর পড়াশোনার সুযোগ ঘটে যায়। সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ বা বাঙালি জাতির শিকড় সন্ধানে তৈরি হয় প্রবল আগ্রহ। ‘বড় হয়ে যখন পুরনো স্থাপত্য দেখতাম, তখন মনে প্রশ্ন ভিড় করে আসত। শুরু হল অনুসন্ধান। আসলে ইতিহাসের সত্যায়ন হল পুরাকীর্তি। এই সত্যায়নের তাগিদে আমি পুরাকীর্তি নিজে দেখা শুরু করলাম। এটি এমন একটা বিষয় যা নিজ হাতে স্পর্শ না করলে এই অনুভব পাওয়া সম্ভব নয়!’ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। গবেষণার সুবাদে ঘুরেছেন দুই বাংলার অনেকটাই। বাংলাদেশের পুরাকীর্তি কোষ প্রাচীন এবং মধ্যযুগ— দুই খণ্ডে লিখে ফেলেছেন এই অভিজ্ঞতা থেকেই। তিনি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ গ্রন্থের প্রণেতা জাকারিয়া সাহেবের কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি ওঁর সঙ্গী ছিলাম।’ সাহিত্য, শিশুসাহিত্য, সাময়িকপত্র এবং চলচ্চিত্র নিয়েও কাজ করেছেন তিনি। এখন তিনি এই শহরে। শৃণ্বন্তু-র আয়োজনে গত ১৫ জানুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইন্দুমতী সভাগৃহে এক সারস্বত সম্মেলনে ওঁকে সম্মাননা জানানো হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন