আত্মরক্ষার পাঠে এ বার ডাক্তারেরাও

প্রশিক্ষক আশিস রায় জানান, জুডো, বক্সিং, কুস্তির বিভিন্ন কৌশলের মিশ্রণে ক্রাভ মাগা একটি আত্মরক্ষার কৌশল। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর বিশেষ দলকে এটি শেখানো হয়। কেউ আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করাই শেখানো হয় ক্রাভ মাগায়। যে কোনও বয়সের মানুষ এটি শিখতে পারেন।

Advertisement
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০২:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি বুকে সংক্রমণ নিয়ে কাঁকুড়গাছির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন এক রোগী। গভীর রাতে তিনি মারা যান। কর্তব্যরত না থাকলেও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার জন্য ভোরে হাজির হন এক প্রৌঢ় চিকিৎসক। কিন্তু চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে রোগীর পরিবার তাঁকে মারধর করেন। চিকিৎসক নিজেই গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগিণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাঁর পরিবার চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীদের মারধর করেন। হয় ভাঙচুরও।

এই টুকরো ছবিগুলো নিত্য দিনের ঘটনা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ঘটনায় রোগীর পরিজনেদের হাতে নিগ্রহের শিকার হওয়া যেন দস্তুর হয়ে উঠেছে। পুলিশ-প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও এই ধরনের ঘটনা আটকানো যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন। তাই অন্যের জীবন রক্ষার দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি আত্মরক্ষার তালিমও নেবেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

তাঁদের আত্মরক্ষার জন্য ক্রাভ মাগা প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছে ডক্টর্স ফর পেশেন্ট (ডোপা) নামে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। শহরের কিছু বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কর্মরত সব চিকিৎসককেই মাসে এক দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর আগে এনআরএসের মেডিক্যাল পড়ুয়াদেরও আত্মরক্ষার পাঠ দেওয়া শুরু হয়েছে।

প্রশিক্ষক আশিস রায় জানান, জুডো, বক্সিং, কুস্তির বিভিন্ন কৌশলের মিশ্রণে ক্রাভ মাগা একটি আত্মরক্ষার কৌশল। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর বিশেষ দলকে এটি শেখানো হয়। কেউ আক্রমণ করলে তা প্রতিহত করাই শেখানো হয় ক্রাভ মাগায়। যে কোনও বয়সের মানুষ এটি শিখতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘‘একাধিক ব্যক্তি ঘিরে ধরলে কী ভাবে বেরিয়ে আসতে হয়, তাই চিকিৎসকদের শেখানো হবে। একটি দল ঘিরে বিক্ষোভ দেখালে দলটি কতটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে, তা বোঝার প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।’’ চিকিৎসকদের এই কৌশল শেখার জন্য কতটা সময় বরাদ্দ করতে হবে? আশিসবাবু জানান, চিকিৎসকেরা আত্মরক্ষার করার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নয়। তাই এক ঘণ্টার ২৫টি ক্লাস করলেই তাঁরা আত্মরক্ষা করতে পারবেন।

ওই সংগঠনের তরফে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগীর পরিজনেদের হাতে যে ভাবে চিকিৎসকেরা প্রায় রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে আত্মরক্ষার কৌশল শেখা জরুরি হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির পরে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’ সংগঠনের আর এক সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের সংগঠন রোগীদের জন্যই। আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে থাকি। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে কাজ করার অধিকার সবার আছে। তাই এই উদ্যোগ।’’

একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও সভ্য দেশে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে আত্মরক্ষার কৌশল শিখতে হয় কি না, জানা নেই। তবে চিকিৎসকেরা এই কৌশল শিখলে কর্তৃপক্ষ কিছুটা চিন্তামুক্ত হবেন।’’ তবে চিকিৎসকদের আক্রমণের এই ধারা বজায় থাকলে চিকিৎসা পরিষেবার কী ভাবে উন্নতি হবে সেই প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন