প্রশ্নে ‘সদিচ্ছা’, থেকেও নেই সবেধন স্কিন ব্যাঙ্ক

একেই বোধহয় বলে থেকেও না থাকা! একেই আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা শুধু কলকাতার হাতে গোনা হাসপাতালে সীমাবদ্ধ।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

এসএসকেএম শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

একেই বোধহয় বলে থেকেও না থাকা!

Advertisement

একেই আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা শুধু কলকাতার হাতে গোনা হাসপাতালে সীমাবদ্ধ। সেখানেও চিকিৎসকেরা বহু ক্ষেত্রে অসহায়। তাঁরা বুঝছেন, রোগীকে বাঁচাতে চামড়া প্রতিস্থাপন দরকার। কিন্তু দেহের এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে কোথাও থেকে চামড়া কেটে নেওয়ার অবকাশ নেই। এই পরিস্থিতিতে বাঁচাতে বিকল্প স্কিন ব্যাঙ্ক। সেখান থেকে চামড়া নিয়ে তা প্রতিস্থাপিত করে বাঁচানো যায় বহু প্রাণ। বেসরকারি হাসপাতালে নয়, সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে তৈরি হয়েছিল রাজ্যের একমাত্র স্কিন ব্যাঙ্ক। তার পরেও স্রেফ সদিচ্ছা ও পরিকাঠামোর অভাবে অকেজো জীবনদায়ী ওই কেন্দ্রটি।

২০১৩ সালের এপ্রিলে ব্যাঙ্কটি চালু হওয়ার পরে কয়েকটি দেহ থেকে চামড়া জমাও পড়েছিল। দ্রুত সেই ভাঁড়ার খালি হতে শুরু করে। তার পরেই ঝাঁপ গোটানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যাঙ্কটি তৈরি করার পরেও কেন এমন হল? এর স্পষ্ট উত্তর কেউ দিতে পারেননি। কিন্তু ‘সদিচ্ছা’ই যে একটা বড় বাধা, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারাই।

Advertisement

এক কর্তার কথায়, ‘‘কত তুচ্ছ যুক্তি দেখানো হয়। যেমন, মৃতদেহ থেকে চামড়া তুলে নেওয়ার জন্য এক ধরনের ব্লেড জাতীয় সরঞ্জাম দরকার হয়। খুবই সামান্য দাম। কিন্তু মাস কয়েক আগে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, ওই ব্লেডের অভাবেই নাকি কাজ হচ্ছে না। কেন ব্লেডটি কিনে নেওয়া হল না, সে প্রশ্নের উত্তর নেই।’’

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, ‘‘স্কিন ব্যাঙ্ক চালানোর জন্য পৃথক পরিকাঠামো ও লোকবল দরকার। সেটা নেই।’’ তাঁরা কি এই সমস্যা স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছেন? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান বিজয় মজুমদারের আবার দাবি, স্কিন ব্যাঙ্ক চালানোর পরিকাঠামোয় সমস্যা নেই। লোকবলও আছে। কিন্তু মৃতদেহ থেকে চামড়া সংগ্রহে পরিবারের লোকেরাই রাজি হচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘চামড়া সংগ্রহ করতে তো কিছুটা সময় লাগে। বাড়ির লোকেরা সেই সময়টা অপেক্ষা করতে চান না।’’

এ রাজ্যে মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের কর্ণধার ব্রজ রায় এই যুক্তি মানতে চাননি। তিনি মনে করেন, মৃতের আত্মীয়দের বিষয়টি বোঝানোর ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা থেকে গিয়েছে। যথাযথ কাউন্সেলিং হলে যাঁরা অন্য অঙ্গ দান করতে আগ্রহী, তাঁরা চামড়ার ক্ষেত্রেও ‘না’ বলবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘মৃতদেহ থেকে চামড়া নিলে তা শুধু বহু মানুষের প্রাণ বাঁচাবে তাই নয়, সরকারের আয়ও বাড়বে। বেসরকারি হাসপাতাগুলিও ওই ব্যাঙ্ক থেকেই ত্বক সংগ্রহ করবে। তবু যে কেন রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে উৎসাহী হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃতদেহ থেকে চামড়া তোলা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন চামড়া নিলে দেহটি বীভৎস হয়ে যাবে। সেটা একেবারেই নয়। মূলত পিঠ এবং উরু থেকে চামড়া নেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেখে বোঝাই যায় না। প্লাস্টিক সার্জন সিতি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পোড়ার ক্ষেত্রে মৃত্যুহার খুব বেশি। দেহের ৪০ শতাংশের বেশি পুড়লেই বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। পশ্চিমের দেশগুলিতে মৃত্যুহার অনেক কম, কারণ ওদের স্কিন ব্যাঙ্ক রয়েছে। এসএসকেএমের বিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন আমি বহু চেষ্টা করেছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার মনে হয়, পোড়ার চিকিৎসায় স্কিন ব্যাঙ্ক অপরিহার্য। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এখানে তা গড়ে তুলেও কার্যকরী রাখা যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন