নাশকতা নয়, গাফিলতিতেই হাই স্পিড তেলের ট্যাঙ্কে আগুন লেগে বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যায় ম্যান অব ওয়ার জেটিতে বাঁধা নৌবাহিনীর স্পিড বোট।
লালবাজারের দাবি, ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে এমনই তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তাই নৌবাহিনীর তরফে ওই স্পিড বোটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মুম্বইয়ের বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। আহত হন আরও এক জন।
পুলিশ জানায়, জলপথে নজরদারি চালাতে মুম্বইয়ের ওই সংস্থার থেকে দু’টি স্পিড বোট ভাড়া করেছিল নৌবাহিনী। প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে ম্যান অব ওয়ার জেটি-তে ওই বোট দু’টি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাঁধা ছিল। ৪ অক্টোবর সকালে ওই সংস্থার দুই কর্মী রবীন্দ্রনাথ শী ও সুকান্ত মাইতি পাম্প চালিয়ে স্পিড বোটের ভিতরকার জল বার করতে যান। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে আহত হন তাঁরা। দু’দিন পরে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সুকান্তর।
লালবাজার সূত্রের খবর, নৌবাহিনীর তরফে অভিযোগ দায়ের না হলেও প্রথামিক তদন্তের পরে মুম্বইয়ের ওই বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। গাফিলতির অভিযোগের পাশাপাশি ৬৩ ইনল্যান্ড ভেসেল অ্যাক্টেও মামলা দায়ের হয়। কিন্তু জখম কর্মী সুকান্ত মাইতির মৃত্যুর পরে মামলায় ওই সংস্থার বিরুদ্ধেই গাফিলতিতে মৃত্যুর ধারা যুক্ত করে পুলিশ। ঘটনার পরেই নৌবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল স্পিড বোটটি তাদের নিজস্ব নয়, ভাড়া নেওয়া। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও মুম্বইয়ের সংস্থাটিরই ছিল বলে পুলিশকে জানায় নৌবাহিনী।
কীসের ভিত্তিতে মুম্বইয়ের সংস্থাটির বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করল পুলিশ?
তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, ঘটনার দিন সকালে ম্যান অব ওয়ার জেটি-তে বাঁধা ওই বোটের দুই আসনের মাঝে জমে থাকা জল বার করার কাজ করতে যান যান রবীন্দ্রনাথ এবং সুকান্ত। রবীন্দ্রনাথকে পাম্প চালাতে বলে নিজে ইঞ্জিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ান সুকান্ত। রবীন্দ্রনাথবাবু পাম্প চালানোর হাতলে টান দিতেই আলোর ঝলকানি এবং বিস্ফোরণ। তাতেই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন সুকান্ত। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বোটের দুই আসনের নীচে রয়েছে হাই স্পিড পেট্রোলের ট্যাঙ্ক। পাম্প চালাতেই দাহ্য বস্তু কোনও ভাবে ওই জ্বালানীর সংস্পর্শে চলে আসে। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশের দাবি, রবীন্দ্রনাথবাবুর বয়ানের সঙ্গে ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীদের কথার মিল রয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে নাশকতা নয়, গাফিলতি এবং সতর্কতার অভাবেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে নাশকতার কোনও প্রমাণ না মিললেও বোটের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। মুম্বইয়ের ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি কলকাতায় তাদের সুপারভাইজারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কথা বলা হবে নৌবাহিনীর সঙ্গেও।