Ladies Compartment

‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র ট্রেনে মহিলা কামরা অরক্ষিতই

রাত ১০টা ২৭ মিনিট। সোনারপুর লোকালের মহিলা কামরা। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা থেকে ট্রেন যখন ছাড়ল, তখন গোটা কামরায় সওয়ার মাত্র তিন জন।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ১০:০০
Share:

সুনসান: মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার সময়ে সোনারপুর লোকালের মহিলা কামরা (উপরে)। কামরায় চেনের জায়গা থাকলেও চেন উধাও। নিজস্ব চিত্র

রাত ১০টা ২৭ মিনিট। সোনারপুর লোকালের মহিলা কামরা। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা থেকে ট্রেন যখন ছাড়ল, তখন গোটা কামরায় সওয়ার মাত্র তিন জন। এক জন তরুণী যাত্রী, এই প্রতিবেদক এবং অন্য জন মহিলা হকার।

Advertisement

ট্রেনের কামরার ভিতরেই রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড। মহিলা-কণ্ঠে গন্তব্যস্থল এবং পরবর্তী স্টেশনের নাম ঘোষণাও চলছে ট্রেনে। যা ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র নতুন সংস্করণ। কিন্তু যেটা নেই, তা হল মহিলা কামরায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা। শিয়ালদহ ছেড়ে পার্ক সার্কাসের দিকে যাওয়ার মাঝপথেই অন্ধকারে থমকে গেল ট্রেন। কয়েক মিনিট সেখানে দাঁড়ানোর পরে ফের ট্রেন চলতে শুরু করল। পার্ক সার্কাস স্টেশন থেকে কোনও যাত্রীই উঠলেন না। এ বার পরবর্তী গন্তব্য বালিগঞ্জ। ফের স্টেশন আসার আগেই থেমে গেল ট্রেন। কামরায় তখনও তিন জন! ফিরতি পথে বাঘা যতীন থেকে শিয়ালদহের মধ্যে ধরা পড়ল একই রকম ছবি।

মঙ্গলবার রাতের সোনারপুরগামী ওই ট্রেন এবং ফিরতি পথের মহিলা কামরায় ছিলেন না নিরাপত্তারক্ষী। যদি কোনও বিপদ ঘটে? নিশ্চয়ই চেন টানলে ট্রেন থেমে যাবে। কিন্তু কোথায় চেন? বহু লোকাল ট্রেনের কামরায় চেনের দেখা মেলে না। কোথাও আবার চেন থাকলেও তা কাজ করে না। ট্রেনের আওয়াজে মোবাইলে কথা ঠিক মতো শোনা যায় না। এমনকি, কোনও কোনও জায়গায় চলন্ত ট্রেনে মোবাইলের টাওয়ারও থাকে না। ফলে বিপদগ্রস্ত মহিলা যাত্রীকে পরবর্তী স্টেশনের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া কার্যত কিছু করার থাকবে না।

Advertisement

রাতের মহিলা কামরার এই ছবি বুঝিয়ে দিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও কত ঠুনকো। সোমবার, দোলের দিনই শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবারগামী লোকালে মহিলা কামরা লক্ষ্য করে পলিথিন ব্যাগে মূত্র ছোড়া হয়েছিল। অভিযোগ, পার্ক সার্কাস স্টেশনে ট্রেন ঢুকলে ওই প্যাকেট এক তরুণীর গায়ে এসে পড়ে। এই প্রথম নয়। সম্প্রতি পার্ক সার্কাস-বালিগঞ্জ স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় মহিলা কামরা লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছিল। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এক বালিকার চোখ। অভিযোগ উঠছে, রাতের ফাঁকা মহিলা কামরায় অবাধে ছেলেরাও উঠে পড়েন। শুধু শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণ শাখার ক্ষেত্রেই নয়, মেন লাইনেও রাতের ট্রেনে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না বলেই অভিযোগ। দোলের আগের দিন রবিবার রাতে হাওড়া-টিকিয়াপাড়া লাইনের আরও একটি ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে। সেই রাতে টিকিয়াপাড়া-দাশনগরের মাঝে মহিলা কামরায় ওঠা দুষ্কৃতী এক তরুণীর জিনিস লুট করে তাঁকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

যাত্রাপথের আতঙ্ক যে মিথ্যে নয়, মঙ্গলবার রাতের ট্রেন সফরেই তা বোঝা গিয়েছিল। পার্ক সার্কাস এবং বালিগঞ্জ স্টেশনে ঢোকার আগে যে ভাবে ট্রেন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পড়ল, বিপদের আশঙ্কার সূত্রপাত হতে পারে সেখান থেকেই। ওই ফাঁকেই এক বা একাধিক দুষ্কৃতী মহিলা কামরায় উঠে পড়তেই পারে। এমন কিছু হতে পারে ভাবতেই ক্রমে আতঙ্ক বাড়ছিল।

পাশের সাধারণ কামরায় তখন সওয়ার সহকর্মী চিত্রগ্রাহক। কিন্তু তাঁকে ডাকতে গেলেও তো ফোন করতে হবে। বিপদগ্রস্ত যাত্রীর থেকে প্রথমেই তো ফোন নিয়েই ফেলে দেবে দুষ্কৃতী। সে ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য হাতে থাকবে না কিছুই। নিরাপত্তাহীন কামরায় এ ভাবেই রাতের নিত্য সফর ঘুম কাড়ে মহিলা যাত্রীদের।

রাতে মহিলা কামরায় কেন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না? শিয়ালদহ রেলপুলিশ সুপার বদনা বরুণ চন্দ্রশেখর জানান, সাম্প্রতিক ঘটনার পরে বলে নয়। এমনতিই তাঁরা চেষ্টা করেন রাতের দিকে কামরায় না পারলেও প্ল্যাটফর্মে রেলপুলিশ রাখতে। যাতে অন্তত স্টেশন থেকে কোনও পুরুষ বা দুষ্কৃতী মহিলা কামরায় উঠতে না পারেন। অর্থাৎ তিনি মেনে নিচ্ছেন যে, মহিলা কামরায় রক্ষী থাকেন না। প্রশ্ন, দু’টি স্টেশনের মাঝেও প্রায়ই ট্রেন থামে বা গতি কমে যায়। যে কেউ চেষ্টা করলে সেখান থেকেই উঠে পড়তে পারে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত লোকাল ট্রেনের জন্য পর্যাপ্ত রেলপুলিশ নেই। ফলে সীমিত পরিকাঠামোয় যতটুকু করা সম্ভব তাই করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন