Salt Lake Stadium Vandalized

ময়নাতদন্ত ৩: লাল্টুর হাতে ছিল যুবভারতীর বল্টু, পুলিশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে শতদ্রুর সেতু তিনিই! বদল ইভেন্ট সংস্থারও

মেসির সফর নিয়ে বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে শতদ্রুর সংস্থার একাধিক বৈঠকে হাজির ছিলেন লাল্টু। বিভিন্ন দফতরে শতদ্রুর ‘পোস্টমাস্টার’ হয়ে পৌঁছে দিতেন চিঠিচাপাটিও। কিন্তু খাতায়কলমে তিনি কোথাও নেই। অন্য অনেকের মতোই তিনিও শতদ্রুর ‘স্যাঙাত’।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৬
Share:

যুবভারতীতে লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা। — ফাইল চিত্র।

যুবভারতীতে লিয়োনেল মেসির সফরের জন্য শতদ্রুর দত্তের সংস্থার তরফে ‘লিয়াঁজ়ো অফিসার’ হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল জনৈক লাল্টু দাসকে। পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে তিনিই যোগাযোগ এবং সমন্বয় রক্ষা করেছেন। যদিও আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে তিনি দাবি করেছেন, তিনি শতদ্রুর সংস্থায় চাকরি করেন না। ‘বন্ধু’ হিসাবে নানা কাজকর্ম করে থাকেন।

Advertisement

গত শনিবার মেসির সফরে যুবভারতীর যাবতীয় নাট-বল্টু এই লাল্টুর হাতেই ছিল। কিন্তু অপেশাদারিত্বের চোটে যে তা এমন ঢিলে হয়ে যাবে, তা কেউই বুঝতে পারেননি। লাল্টুকে কলকাতা ময়দান চেনে। মেসি সফরের সূত্রের তাঁকে চেনেন রাজ্যের মন্ত্রীরাও। বস্তুত, রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে মেসির সফর নিয়ে একাধিক বৈঠকেও তিনি হাজির ছিলেন। মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার লাল্টু নব্বইয়ের দশকে সবুজ-মেরুন জার্সিতে স্টপারে খেলতেন। এখন ডালহৌসি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ, শনিবার মাঠে বাড়তি লোক ঢোকার জন্য তিনিই ‘দায়ী’।

সোমবার আনন্দবাজার ডট কম-এর প্রশ্নের জবাবে লাল্টু মেনে নিয়েছেন যে, বিভিন্ন বৈঠকের ক্ষেত্রে অপেশাদারিত্বের ছাপ ছিল। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরে রঙের ব্যবসাই লাল্টুর পেশা। নেশা শতদ্রুর সঙ্গে জুড়ে থাকা। তবে তিনি খাতায়-কলমে ‘শতদ্রুর লোক’ নন। যদিও তিনিই দত্তের দূত। যদিও সংস্থার নথিপত্রে তাঁর সই নেই। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার কোনও বৈঠকে তিনিও সই করেছেন। মেসির অনুষ্ঠান নিয়ে বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে শতদ্রুর সংস্থার একাধিক বৈঠকে লাল্টু উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন দফতরে শতদ্রুর ‘পোস্টমাস্টার’ হয়ে পৌঁছে দিয়েছেন চিঠিচাপাটিও। কিন্তু খাতায়কলমে তিনি কোথাও নেই। অথচ তিনি আছেন। নিজেকে ‘শতদ্রুর বন্ধু’ বলে পরিচয় দিয়েছেন লাল্টু। তাঁর কথায়, ‘‘আমি (শতদ্রুর) সংস্থার কর্মচারী নই। সংস্থার কোনও কাগজপত্রে সই করিনি। আমি ওঁর বন্ধু। সেই হিসাবে উনি যেখানে যেতে বলতেন যেতাম।’’ তবে পাশাপাশিই লাল্টু বলেছেন, ‘‘অপেশাদারিত্বের ছাপ ছিল।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার লাল্টু। কলকাতা ময়দানের সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন, সেখানে খানিক বিলাসব্যসনেই সময় কেটেছিল তাঁর। নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গেও তাঁর ‘ভাল’ যোগাযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, লাল্টুকেও ডেকে পাঠাতে পারে বিধাননগর কমিশনারেট। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, মেসিকে ঘিরে থাকা জটলায় লোক ঢোকানোর অন্যতম ‘হোতা’ তিনিই।

স্যাঙাত-তন্ত্র!

শতদ্রু দত্তকে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন, তিনি আদতে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। কিন্তু একইসঙ্গে স্যাঙাত-তন্ত্রে বিশ্বাসী। সেই স্যাঙাতেরা তাঁকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ বা অভয় দিয়ে থাকেন। সেই স্যাঙাতের তালিকায় যেমন লাল্টু আছেন, তেমনই আছেন আরও কয়েকজন। যুবভারতীর কেলেঙ্কারিতেও সেই স্যাঙাতদের ‘ছায়া’ রয়েছে। সূত্রের খবর, যুবভারতীতে মেসির অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার জন্য প্রাথমিক ভাবে মুম্বইয়ের একটি বড় সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছিলেন শতদ্রু। ওই সংস্থার আন্তর্জাতিক ইভেন্ট পরিচালনার দক্ষতা সুবিদিত। ঠিক সেই কারণেই তাদের পারিশ্রমিকও আকাশছোঁয়া। শতদ্রু যখন অর্থের পরিমাণ নিয়ে দোনামনা করছেন, তখন ওই স্যাঙাতদের কয়েকজন তাঁকে পরামর্শ দেন, রাজ্য সরকার তো যা করার করেই দেবে। বাকিটা ‘স্থানীয় প্রতিভা’ দিয়ে সামলে দেওয়া যাবে। তাতে খরচ কম হবে। লভ্যাংশ থাকবে অনেক বেশি। সেই অনুযায়ীই স্থানীয় দু’জন সঞ্চালক ঠিক করা হয় (যাঁরা জনপ্লাবনে শেষমেশ হারিয়েই গিয়েছিলেন)। মাঠের ভিতরে কোনও উঁচু মঞ্চ করা হয়নি। না-ছিল মেসিকে মাঠে ঘোরানোর জন্য কোনও হুডখোলা গাড়ি। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত এবং অভিজ্ঞদের বক্তব্য, মেসিকে যদি গোটা মাঠে হুডখোলা গাড়িতে ঘোরানো যেত এবং কয়েকটা ফুটবল দিয়ে তাঁকে সেগুলো দূরপাল্লার শটে গ্যালারিতে ফেলতে বলা হত, তাতেই কাজ হয়ে যেত। কিন্তু স্যাঙাত-তন্ত্র ‘কম খরচে বেশি কাজ’ নীতিতে সেই খরচটুকু করতেও শতদ্রুকে নিরুৎসাহ করে। এখন অবশ্য তাঁরা কেউ আর আশেপাশে নেই। বরং শতদ্রুর নাম শুনলে এমন ভাব করছেন যে, তাঁকে কোনও কালে চিনতেনও না। এবং নিজেদের ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, তাঁরা কোনওকিছুর সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না।

কলকাতা ছাড়া বাকি তিন শহরেই পেশাদার সংস্থার হাতে অনুষ্ঠানের ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন শতদ্রু। কোনও কার্পণ্য করেননি। ফলে সেখানকার অনুষ্ঠান হয়েছে নিখুঁত পেশাদারি ভঙ্গিতে। মুম্বইয়ে মেসির সঙ্গে নিজস্বী তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের স্ত্রী। তাঁর মধ্যে সেই ‘আকুলতা’ ছিল। কিন্তু কলকাতার মতো ‘হ্যাংলামি’ ছিল না। কোনও কোনও মহল থেকে শতদ্রুকে আড়াল করার চেষ্টায় বাকি তিন শহরের উদাহরণ দেওয়া শুরু হয়েছে। যাতে দোষ আয়োজকের বদলে শহরের উপর পড়ে। তবে পাল্টা এই প্রশ্নও উটছে যে, কলকাতার অনুষ্ঠান কেন কোনও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে করানো হল না? তেমন সংস্থার অভাব শহরে না থাকলেও?

ইডেন বাতিল!

মেসির ‘গোট ইন্ডিয়া ট্যুর’ প্রাথমিক ভাবে ইডেন গার্ডেন্সে হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা বদলে যুবভারতীতে হয়। এর পর গত শনিবার অনুষ্ঠানের দিন যুবভারতীর ঘটনা দেখে হাত কামড়াচ্ছেন প্রাক্তন সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। ইডেনে অনুষ্ঠান করতে চেয়ে আয়োজকদের তরফে যখন প্রথম চিঠি দেওয়া হয়, তখন স্নেহাশিসই সিএবি সভাপতি। বর্তমান সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাদা স্নেহাশিসের বক্তব্য, ‘‘যুবভারতীতে গোলমালের শুরু হয়েছিল মাঠে জলের বোতল পড়া থেকে। আমরা জলের বোতল রাখতামই না। বহু বছর ধরে ইডেনে জলের বোতল নিয়ে ঢোকা বা ভিতরে জলের বোতল বিক্রি করা নিষিদ্ধ। আমরা মহিলাদের লিপস্টিক নিয়েও ঢুকতে দিই না।’’ শনিবার যুবভারতীতে মেসি মাঠে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শ’দুয়েক লোক তাঁকে ঘিরে ধরেন। যা দেখে স্নেহাশিসের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের কোনও অনুষ্ঠানেই কাউকে মাঠে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় না। সিএবি সভাপতি এবং অন্য কর্তাদেরও আলাদা অনুমতি লাগে। এর জন্য সিএবি-র আলাদা কমিটি আছে। তাদের কাছে অ্যাক্রিডিটেশনের জন্য আলাদা তালিকা পাঠাতে হয়। তারা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, কাদের মাঠে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। সিএবি এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। আর আমাদের মাঠ নিলে আমাদের শর্তই মানতে হবে।’’

ইডেনে মেসির সফর হয়নি আর্থিক কারণে। আয়োজকদের কাছে ‘হোস্টিং ফি’ হিসাবে ২ কোটি টাকা চেয়েছিল সিএবি। পাশাপাশিই ফোর্ট উইলিয়াম কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। কারণ, ইডেন আদতে সেনার সম্পত্তি এবং মেসির সফর একটি ‘বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান’। তাই ফোর্ট উইলিয়ামকে টাকা দিতে হত। কিন্তু ইডেনের জন্য ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে রাজি হননি শতদ্রু। বস্তুত, তিনি নাকি ইডেনের জন্য কোনও টাকাই দিতে চাননি! পক্ষান্তরে, আইএসএল অনির্দিষ্টকাল পিছিয়ে যায়। ফলে শতদ্রু সহজেই যুবভারতী পেয়ে যান।

বেলা-শেষে খেলা শুরু

ভারত সফরে মেসি যে চারটি শহরে গেলেও তাঁর প্রাথমিক সূচিতে ছিল তিনটি শহর। কলকাতা, মুম্বই এবং নয়াদিল্লি। শেষমুহূর্তে ঢুকে পড়ে হায়দরাবাদ। সূত্রের খবর, মেসির ভারত সফরের কথা জানতে পেরে তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির দফতর থেকে যোগাযোগ করা হয় শতদ্রুর সঙ্গে। নির্দিষ্ট পরিমাণ মোটা অর্থের বিনিময়ে শনিবারের সন্ধ্যাটি শতদ্রু বিক্রি করে দেন হায়দরাবাদের জন্য। যে কারণে ভারত সফরে একটিমাত্র দিনেই মেসিকে দু’টি শহরে যেতে হয়েছে। সূচিতে শেষবেলায় হায়দরাবাদ ঢুকে পড়ায় সময়ও কমে যায় কলকাতার। মেসিকেও খানিকটা তাড়াহুড়ো করে শহর ছাড়তে হয়। তার পরের দু’দিনে প্রাথমিক সুচি অনুযায়ী একটি করে শহরেই গিয়েছেন মেসি। মুম্বই এবং দিল্লিতে তাঁর সফর নির্বিঘ্নে হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রবেশ-প্রস্থান মিলিয়ে ৭০ মিনিট করে থাকার জন্য চুক্তি হয়েছিল মেসির এজেন্টের সঙ্গে। কলকাতা ছাড়া বাকি তিন শহরেই মেসি চুক্তি অনুযায়ী সময় কাটিয়েছেন। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি শিশুদের সঙ্গেও ফুটবল খেলেছেন। মুম্বইয়ে বিশ্বক্রিকেটের কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তাঁর নির্বিঘ্নে দেখা হয়েছে। মঞ্চে এসেছেন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন এবং টাইগার শ্রফ। কোথাও কোনওকিছুর বেচাল হয়নি।

প্রশ্নে পুলিশ

যুবভারতী কেলেঙ্কারিতে আয়োজকদের পরিকল্পনাহীনতা, অপেশাদারিত্ব এবং নেতা-মন্ত্রীদের হ্যাংলামি স্পষ্ট। কিন্তু পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। কী ভাবে হাজার হাজার মানুষ ফেন্সিং ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়লেন, এক ঘণ্টারও বেশি সময় গোটা মাঠ জুড়ে তাণ্ডব এবং অরাজকতা চলল, মাঠ থেকে ঘাড়ে করে কার্পেট তুলে নিয়ে গেল জনতা, সেই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুটিয়ে গেল কেন, সেই প্রশ্ন তো উঠছেই। তবে পুলিশের একাংশের বক্তব্য, অন্য খেলার ক্ষেত্রে যে ধরনের দর্শক আসেন, শনিবারের দর্শকের সঙ্গে তার গুণগত ফারাক ছিল। শনিবার প্রচুর মহিলা এসেছিলেন। সঙ্গে ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে। ফলে পুলিশকে অনেক বেশি ‘সংবেদনশীল’ ভূমিকা নিতে হয়েছিল। যদিও অনেকের বক্তব্য, কী ধরনের ভিড় হবে, সেই তথ্য গোয়েন্দাবিভাগ মারফত পুলিশের কাছে আগাম থাকা উচিত ছিল। সেই অনুযায়ীই সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য বাহিনীর আগাম প্রস্তুতি থাকারও দরকার ছিল। বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বলেছেন, বিভিন্ন থানা থেকে আড়াই হাজার পুলিশ আনা হয়েছিল। কিন্তু চাইলেও পুলিশ সব করতে পারেনি। পুলিশের একাংশের আক্ষেপ, আয়োজকদের ব্যর্থতার দায় এখন পুলিশের ঘাড়ে এসে পড়ছে। তবে এটা ঠিক যে, নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে পুলিশ স্টেডিয়ামের বাইরের রাস্তা বন্ধ করে যান নিয়ন্ত্রণ করলেও ভিতরটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, মেসি ‘জ়েড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেয়েছিলেন। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই বৃত্তে পুলিশ ছিল না। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে পুলিশের সমন্বয় ছিল না। পুলিশকর্তাদের অনেকে ভিডিয়ো দেখিয়ে বলছেন, ওই ভিড়ের কাছে পুলিশ কমিশনার পৌঁছোলে তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে! পুলিশ তাই ‘অনধিকার চর্চা’ করতে যায়নি। তাতে পরিস্থিতি আরও গোলমেলে হতে পারত।

অবাক জলপান

কাতার বিশ্বকাপের সময় থেকেই নিয়ম হয়ে গিয়েছে, ফুটবল মাঠে দর্শকেরা জলের বোতল কিনতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের হাতে বোতলটি দেওয়া হবে ছিপি খোলার পর। অর্থাৎ, ছিপি-খোলা বোতল নিয়ে দর্শকেরা গ্যালারিতে যেতে পারবেন। পিছনের কারণটি যুক্তিযুক্ত। কোনও দর্শক যদি জলের বোতল ছোড়েনও, বোতলের মুখ খোলা থাকায় আকাশের সেখান থেকে জল ঝরে পড়ে যাবে। বোতল হালকা হয়ে গিয়ে আর মাঠ পর্যন্ত পৌঁছোবে না। যুবভারতীতে দেদার বোতলবৃষ্টি হয়েছে। যদিও মেসির সফরের আগের দিনই বিধাননগর পুলিশের তরফে প্রচার করা হয়েছিল, জলের বোতল নিয়ে ঢোকা যাবে না। তবে মাঠে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা (ওয়াটার পাউচ) থাকবে। শনিবার যাঁরা জলের বোতল নিয়ে এসেছিলেন, মাঠে ঢোকার আগে সেগুলি তাঁদের থেকে নিয়ে নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু স্টেডিয়ামে দেদার জল ও ঠান্ডা পানীয়ের বোতল বিক্রি হয়েছে। নিয়ের তোয়াক্কা না করে ২০ টাকার জলের বোতল বিক্রি করা হয়েছে ২০০ টাকায়। যুবভারতীর ভিতরে ওই পানীয় জল এবং ঠান্ডা পানীয় এসেছিল দিল্লি থেকে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ বাইরে জলের বোতল আটকে দেবে জেনেই কি সেগুলি ভিতরে চড়াদামে বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল? ভিতরে বোতলে জয় বা ঠান্ডা পানীয় বিক্রি পুলিশই বা আটকাল না কেন?

কেবলই ছবি!

মেসির সঙ্গে ছবি তোলার জন্য চড়া মূল্য ধার্য করা হয়েছিল আয়োজকদের তরফে। শনিবার সকালে হায়াত রিজেন্সিতে বসেছিল সেই ছবি তোলার আসর। চুক্তি ছিল, মোট ২০০ জনের সঙ্গে ছবি তুলবেন মেসি। কিন্তু হোটেলে হাজির হয়েছিলেন ২৯৬ জন। যাঁদের অধিকাংশই ছবি তুলতে পারেননি। যদিও মন্ত্রী সুজিত বসুর পরিবার, নাতি-সহ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ছবি তুলেছেন। ছবি তুলিয়েছেন টলিউডের নায়ক-নায়িকা, সপরিবার পরিচালক। সংবাদসংস্থা, স্পনসরদের প্রতিনিধিদের জন্যও ছবি তোলার ব্যবস্থা ছিল। ৫০ জন অর্থের বিনিময়ে ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলেন। মোবাইল নিয়ে যাওয়া নিষেধ ছিল। ছবি তুলেছেন মেসির টিমের চিত্রগ্রাহক। পাশে দাঁড়িয়ে টিমের সদস্যেরা গুনেছেন ক’জনের ছবি তোলা হল। তাঁরাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কিউআরকোড স্ক্যানের মাধ্যমে সেই ছবি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যে ৯৬ জন বাদ গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ ছবি তোলার বাবদে টাকা দিয়েছিলেন কিনা, সে হিসাব এখনও চলছে।

জামাই কা ফেয়ারওয়েল

কলকাতা থেকে হায়দরাবাদগামী মেসির বিমানে শতদ্রুর থাকার কথা ছিল। তাঁর থাকার কথা ছিল পুরো সফরেই। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছোতেই শতদ্রুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফলে তাঁর পক্ষে আর বাকি সফরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু যেহেতু শতদ্রুই এই সফরের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাই তাঁর তরফে দায়িত্বশীল কারও যাওয়াও দরকার ছিল। শেষমেশ শতদ্রুর বদলে মেসির সঙ্গে যান তাঁর জামাইবাবু অশেষ দত্ত। যিনি একদা শতদ্রুকে এই জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। পরে অবশ্য শতদ্রু আপন এলেমে তাঁকে পিছনে ফেলে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, মেসিকে কলকাতা থেকে ‘ফেয়ারওয়েল’ উড়ানে শতদ্রুর পরিবর্তে সঙ্গ দিলেন সেই জামাইবাবু!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement