বাড়ি থেকে ‘উৎখাত’ এইচআইভি পজিটিভ

বছর দু’য়েক আগে সন্তান জন্মানোর আনন্দের সঙ্গেই তাঁদের চোখমুখে নেমে এসেছিল বিষণ্ণতার ছায়া। কারণ রক্ত পরীক্ষা হতেই জানা গিয়েছিল, তাঁরা দু’জনেই এইচআইভি পজিটিভ।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ ও সজল চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

এইচআইভি পজিটিভ দম্পতিকে বাড়িছাড়া করার অভিযোগ উঠল আগরপাড়ায়।

Advertisement

বছর দু’য়েক আগে সন্তান জন্মানোর আনন্দের সঙ্গেই তাঁদের চোখমুখে নেমে এসেছিল বিষণ্ণতার ছায়া। কারণ রক্ত পরীক্ষা হতেই জানা গিয়েছিল, তাঁরা দু’জনেই এইচআইভি পজিটিভ। তবু শিশুকন্যাকে কোলে আঁকড়েই নিজেদের সমস্যার কথা ভুলতে চেয়েছিলেন ওই তরুণ দম্পতি। কিন্তু তা হয়নি। কয়েক মাস আগে পাড়ায় জানাজানি হয়ে যায় তাঁদের সমস্যার কথা। অভিযোগ, এর জেরে বাড়িছাড়া করা হয়েছে তাঁদের।

ওই দম্পতির অভিযোগ, তাঁরা এইচআইভি পজিটিভ, সে কথা জানতে পেরেই তাঁদের উৎখাত করেছেন বাড়িওয়ালা। এ নিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এখন যে বাড়িতে ভাড়া আছেন, সেখানেই বা কত দিন থাকতে পারবেন, তা নিয়েও এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে দম্পতির।

Advertisement

গত দু’মাস ধরে তাঁরা সোদপুরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন। সোমবার ওই যুবক বলেন, ‘‘আমরা কী ভাবে এই সংক্রমণের শিকার হলাম, বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমাদের মেয়েটার কোনও সমস্যা নেই। তাই আমরা বাঁচতে চাই।’’

ঘটনার সূত্রপাত মাস কয়েক আগে। এক দিন সকালে এক প্রতিবেশী প্রথম জানান যে, বাড়িওয়ালা সকলকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বারণ করেছেন। কেন? কারণ, ওই দম্পতি এইচআইভি পজিটিভ। দম্পতির বক্তব্য, বিষয়টি জানতে পেরে পরদিন ওই তরুণী বাড়িওয়ালা সুবীর সেনের কাছে গিয়ে জানতে চান তিনি কেন এমন বলেছেন। তরুণী বলেন, ‘‘সুবীরদা কোনও কথা শুনতে চাননি। তিনি আগে রক্তের রিপোর্ট দেখতে চান। আর তা না দেওয়ায় রাতে মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে বার করে দেন আমাদের।’’ মেয়ে ও স্ত্রীকে বার করে দেওয়া হয়েছে শুনে তাড়াতাড়ি কাজ থেকে ফিরে আসেন ওই যুবক। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি গিয়ে পুলিশকে জানালে, অফিসার এসে ঘরে ঢুকিয়ে দেন।’’ দম্পতির অভিযোগ, পুলিশ ঘরে ঢুকিয়ে দিলেও পরদিন থেকে নানা ভাবে অত্যাচার শুরু করেন সুবীরবাবু। বহিরাগতদের নিয়ে এসে তাঁদের ঘর ছাড়ার হুমকি দিত থাকেন। এর পরেই খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি।

সংক্রমণের কারণে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সুবীরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা নেশা করে ঝামেলা করতেন। সে কারণেই উঠে যেতে বলেছিলাম।’’ এরই সঙ্গে অভিযুক্ত বাড়িওয়ালার দাবি, ওঁরা নিজে থেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের বিষয়ে তাঁর মাথা ঘামানো উচিত নয়। তবে তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা এইচআইভি পজিটিভ শুনে বাড়িওয়ালা তাড়িয়ে দিতে চাইছেন এবং অত্যাচার করছেন শুনে পুলিশের কাছে যেতে বলেছিলাম।’’ তবে তাতে শেষ রক্ষা যে হয়নি, সে বিষয়ে কিছু বলতে চান না তিনি। সেই বাড়ি ছেড়ে গত মাস দুয়েক ধরে সোদপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন ওই দম্পতি।

এক ঠিকাদারের হয়ে একটি হোটেলে বেয়ারার কাজ করেন অভিযোগকারী ওই যুবক। ২০১৪ সালে চন্দননগরের বাসিন্দা ওই তরুণীকে নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু বাড়িতে বিয়ে মেনে না নেওয়ায় আগরপাড়ার মহাজাতিনগরে একটি বাড়ি ভাড়া নেন ওই দম্পতি। এ দিন ওই তরুণী বলেন, ‘‘২০১৬ সালের শেষের দিকে মেয়ে হওয়ার সময়ে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। তখনই রক্ত পরীক্ষা করলে জানা যায়, আমি এইচআইভি পজিটিভ।’’ এর পরে ওই তরুণীর স্বামীর রক্তও পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তিনিও ওই সংক্রমণে আক্রান্ত। ওই যুবক বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কে এই সংক্রমণের প্রথম ধারক, তা জানতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলে দেন, তা বলা সম্ভব নয়।’’

দম্পতির আকুতি, তাঁদের সন্তান একেবারেই সুস্থ। ওকে একটু ভাল ভাবে বড় করতে চারপাশের সহযোগিতা খুব জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন