খাটালের রমরমা, পুরসভা তবু ‘মানবিক’

তিলজলারই মসজিদবাড়ি লেনে গত বছর মে মাসে ঘটে গিয়েছিল বড়সড় দুর্ঘটনা। উবু হয়ে বসে আনাজ কিনছিলেন মধ্য চল্লিশের এক ব্যক্তি। পাশের চারতলা থেকে তার উপরে লাফ দিয়ে পড়ে একটি বাছুর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাছুরের। পা এবং পাঁজর ভেঙে দীর্ঘদিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মধ্যবয়স্ক সেই ব্যক্তি। ওই ঘটনার পরে সামনে এসেছিল শহরে খাটালের রমরমা কারবার। তবুও বদলায়নি পরিস্থিতি।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৭
Share:

অস্বাস্থ্যকর: লোকালয়েই চলছে এই খাটাল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দেড় দশকেরও বেশি এ শহর থেকে খাটাল নিষিদ্ধ হয়েছে। যদিও তা আটকে রয়েছে খাতায় কলমে। কার্যক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের বালাই নেই প্রশাসনের। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ, কলকাতা পুরসভার ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৫৩, তিলজলা রোড।

Advertisement

এখানেই বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে খাটাল। ওই ঠিকানায় পৌঁছে দেখা গেল, প্রায় শ’খানেক মোষ রাখা রয়েছে সেখানে। এলাকায় পা রাখতেই দূর থেকে নাকে আসে তীব্র দুর্গন্ধ। যার জেরে নাকে কাপড় চাপা দিয়ে যাতায়াত করেন বাসিন্দারা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বহু বছর ধরেই চলছে এই খাটাল। প্রশাসনের না দেখার তো কথা নয়!’’

এই তিলজলারই মসজিদবাড়ি লেনে গত বছর মে মাসে ঘটে গিয়েছিল বড়সড় দুর্ঘটনা। উবু হয়ে বসে আনাজ কিনছিলেন মধ্য চল্লিশের এক ব্যক্তি। পাশের চারতলা থেকে তার উপরে লাফ দিয়ে পড়ে একটি বাছুর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাছুরের। পা এবং পাঁজর ভেঙে দীর্ঘদিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মধ্যবয়স্ক সেই ব্যক্তি। ওই ঘটনার পরে সামনে এসেছিল শহরে খাটালের রমরমা কারবার। তবুও বদলায়নি পরিস্থিতি।

Advertisement

খাটাল লাগোয়া জনবসতির বাসিন্দাদের অভিযোগ, “বৃষ্টি হলেই দুর্গন্ধে টেকা যায় না। তা ছাড়া মশা, মাছি, পোকামাকড়ের উপদ্রব তো লেগেই আছে।’’ এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘খাটাল নিয়ে তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করাও হয়েছিল। সে জন্য খাটালের মালিকের হাতে মারও খেতে হয়েছে। পুরসভা, পুলিশ কিছুই করে না।’’

কেন পুরসভা নিষ্ক্রিয়? স্থানীয় কাউন্সিলর নিবেদিতা শর্মার সাফাই, ‘‘বহু বছর ধরে আছে ওই খাটাল। উচ্ছেদ করার জন্য মাস আটেক আগে বরো চেয়ারম্যানকে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’’ বরো চেয়ারম্যান জীবন সাহার যুক্তি, ‘‘বাম আমল থেকে ওই খাটাল রয়েছে। আমরা তো খাটাল বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ করতে পারি না। মানবিক বিষয়টিও দেখতে হয়।’’ কিন্তু শহরে খাটাল তো বেআইনি, তবে কি তা নামেই? কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বরো চেয়ারম্যানের জবাব, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

যদিও এ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘ওই এলাকায় খাটাল থাকার কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।’’ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

নিয়ম অনুযায়ী, খাটাল সরাতে প্রথমে পুলিশের তরফে মালিককে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তার পরে উচ্ছেদ হয়। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ডিসি (রিজ়ার্ভ ফোর্স) সৌম্য রায় বলেন, ‘‘তিলজলায় যে খাটাল রয়েছে তা-ই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

প্রায় একশো মোষের ওই খাটালের এক মালিক জীবৎ রায়ের আবেদন, ‘‘এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমরা গরিব। খাটাল উচ্ছেদ হলে খাব কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন