নীচে জল, উপরে বৃষ্টি, বিপদ বাড়াচ্ছে ‘তরল মাটি’ 

কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টি হলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর পরিবর্তিত হয়। এমনিতেই অ্যাকুইফার বা জলস্তরে আঘাত লাগায় তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে উপরিভাগের মাটির স্তর, বালি ধুয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ির মূল কাঠামোকে ধরে রাখতে ভিতে যে মাটি-বালির স্তর রয়েছে, তা জলের তোড়ে ক্রমে ধুয়ে যেতে শুরু করেছে। তাতে ভিতের নীচ ক্রমশ ফাঁকা হতে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৭
Share:

সমস্যা: বিপদ যাতে না বাড়ে, তাই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এলাকার জলের পাইপলাইন। মঙ্গলবার, বৌবাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বৃষ্টির মরসুম বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে বৌবাজারের। শুধু ভূগর্ভস্থ জলস্তরই নয়, বৃষ্টির জলও দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেন, অর্থাৎ যেখানে সুড়ঙ্গ বিপর্যয় হয়েছে, সেই এলাকার অধিকাংশ বাড়িকে ‘বিপজ্জনক’ করে তুলেছে বলে জানাচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলের একাংশ।

Advertisement

কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টি হলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর পরিবর্তিত হয়। এমনিতেই অ্যাকুইফার বা জলস্তরে আঘাত লাগায় তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে উপরিভাগের মাটির স্তর, বালি ধুয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ির মূল কাঠামোকে ধরে রাখতে ভিতে যে মাটি-বালির স্তর রয়েছে, তা জলের তোড়ে ক্রমে ধুয়ে যেতে শুরু করেছে। তাতে ভিতের নীচ ক্রমশ ফাঁকা হতে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সিমেন্ট ও লোহার রড দিয়ে বাড়ির ভিত সাময়িক ভাবে পোক্ত না করলে অথবা বাড়িগুলি ভেঙে না দিলে পুরো এলাকাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যেরা। তখন শুধু বাড়িতে ফাটল বা বাড়ির এক দিক ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া নয়, একাধারে সমস্ত বাড়িই ভেঙে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা তাঁদের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভিজ়িটিং প্রফেসর বিশ্বজিৎ সোমের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার যে বাড়িটি ভেঙেছে, সেটি ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণই হল বৃষ্টি। এমনিতেই বৃষ্টিতে পুরনো কাঠামো বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে এই বাড়িগুলির নীচের মাটিও জলের তোড়ে সরতে শুরু করেছে। ফলে একটি কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যে ভারসাম্য দরকার, সেটাই এখন নেই।’’

বিশেষজ্ঞদের একাংশ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। অতীতে বৌবাজারে একটি প্রকল্প শুরুর আগে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছিল, ওই এলাকায় ‘লিকুইফ্যাকশন পোটেনশিয়াল’, অর্থাৎ জলস্তর বিঘ্নিত হলে মাটির স্থিতি নড়ে যাওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। এ রকম ক্ষেত্রে মাটি তরলের মতো হয়ে যায়। ফলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। যদিও বৌবাজার এলাকার ওই লিকুইফ্যাকশন প্রবণতা কতটা সঠিক, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু এই বিপর্যয়ের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ওই সমীক্ষার বিষয়টি কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি? না হলে কী ভাবে এটা নজর এড়িয়ে গেল যে ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে কাদামাটি ও বালিমাটির সংযোগস্থলের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, ‘‘টানেল বোরিং মেশিন চলার সময়ে ভূগর্ভস্থ জল এবং মাটির স্তরের ভারসাম্য কতটা বিঘ্নিত হবে, তা নির্ভর করে মাটির চরিত্রের উপরে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সমীক্ষাতেই গোলমাল থাকায় মাটির নীচের পরিস্থিতি যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনই মাটির উপরের যাবতীয় কাঠামোর ভারসাম্যও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’’

Advertisement

যার ফলে মাটির নীচে হুহু করে বেরোনো জল যত ক্ষণ না আটকানো যাবে, তত ক্ষণ উপরের মাটির স্থিতি বিঘ্নিত হতেই থাকবে। ফলে বাড়ি বসে যাওয়া বা বাড়ি ভেঙে পড়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা চলতেই থাকবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন