এক ভোটকেন্দ্রেই ১৪টি বুথ, সুরক্ষায় বিশেষ নজর

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং মহাত্মা গাঁধী রোডের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের ওই সরকারি স্কুলটিতে এ বার ১৪টি বুথ থাকছে, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ ও ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০০:২৬
Share:

মতিলাল শীলের ফ্রি কলেজ। ছবি সংগৃহীত।

তাঁর ব্যবসার বিস্তার নেহাত কম ছিল না। দেশ-বিদেশে ছড়ানো ব্যবসার মতোই বিস্তৃত ছিল জনহিতকর কাজকর্মের পরিধি। আঠেরো শতকের সেই বাঙালি ব্যবসায়ী মতিলাল শীলের প্রতিষ্ঠিত ফ্রি কলেজ (স্কুল) ঘটনাচক্রে রাজ্যের সব চেয়ে বড় ভোটগ্রহণ কেন্দ্র।

Advertisement

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং মহাত্মা গাঁধী রোডের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের ওই সরকারি স্কুলটিতে এ বার ১৪টি বুথ থাকছে, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক। নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৮৬৬৫ জন ভোটার রয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৭৩৪ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ২৯৩১ জন। ১৪টি বুথের মধ্যে সর্বাধিক ৯১৭ জন ভোটার রয়েছেন ২৭৩ নম্বর বুথে।

শনিবার দুপুর থেকেই ওই স্কুলে পৌঁছতে শুরু করেন ভোটকর্মীরা। ১৪টি বুথে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৬০ জনের মতো ভোটকর্মী থাকছেন বলে কমিশন সূত্রের খবর। বুথ-পিছু চার জন ভোটকর্মী ছাড়াও সব ক’টি বুথের জন্য দু’জন মাইক্রো অবজার্ভার থাকবেন। এ ছাড়া, ভোটারদের যে কোনও প্রয়োজনে সাহায্য করতে ‘ভোটার অ্যাসিস্ট্যান্স বুথ’ থাকবে। কলকাতা উত্তর জেলা নির্বাচনী অফিসার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

ওই স্কুলের ১৪টি বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২৮ জন জওয়ান। এতগুলি বুথ এক জায়গায় থাকায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফেও। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা বুথের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগে পুলিশের তরফেও ওই নির্বাচন কেন্দ্রে বাড়তি নজরদারি চালানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল ডিভিশনের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বুথ রয়েছে ওই স্কুলে। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তি নজরদারি রাখতে হয়েছে।’’ পুলিশের বিশেষ বাহিনী সারা দিন একাধিক বার এসে ওই জায়গার চারপাশে টহল দিয়ে যাচ্ছে। ভোটের দিনেও সংলগ্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশকে বিশেষ তৎপর হতে বলেছে কমিশন। ওই ভোটকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে থাকা যাবতীয় দোকানপাট শনিবার দুপুরের পর থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে।

উত্তর কলকাতার ওই স্কুলে সর্বোচ্চ ১৪টি বুথের পাশাপাশি আরও চারটি এমন ভোটকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে ১০টি করে বুথ রয়েছে। তবে একটি ভোটকেন্দ্রে থাকা বুথের সংখ্যার নিরিখে এ বারের নির্বাচনে চোদ্দোই সর্বোচ্চ।

১৮৪২ সালের মার্চ মাসে সে কালের বিখ্যাত ব্যবসায়ী মতিলাল শীলের কলুটোলার বাড়িতে ওই স্কুলের উদ্বোধন হয়। হিন্দু কলেজের সঙ্গে মিল রেখে স্কুলের নামে ‘কলেজ’ শব্দটি যোগ করা হয়। ওই সময়ে স্কুলটিতে জুনিয়র এবং সিনিয়র, দু’টি বিভাগ ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে সেখানকার ছাত্রদের একাংশের পঠনপাঠন এখানে চলত। যদিও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তাতে মতিলাল শীল ফ্রি স্কুলের কলেজ স্বীকৃতি ঘোচেনি। মূলত ভারতীয়দের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতেই ওই স্কুল চালু করেন তিনি। প্রায় ১৭৭ বছরের পুরনো স্কুলটিতে বহু বছর ধরে নির্বাচন হচ্ছে। তবে ঠিক কবে এখানে প্রথম ভোট নেওয়া হয়, তা অবশ্য কেউ নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন