রঙিন: বড়বাজারে মজুত করা হয়েছে বিভিন্ন রঙের আবির। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ছবিটা পাল্টে গেল ভোট পরবর্তী সমীক্ষার পরের দিনেই।
সপ্তম দফা ভোটের দিন সকাল পর্যন্ত বড়বাজারের ওল্ড চায়না বাজার স্ট্রিটের আবিরের দোকানগুলিতে সবুজ আবিরের চাহিদাই বেশি ছিল। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল সামনে আসতেই ঊর্ধ্বমুখী গেরুয়া আবিরের চাহিদাও। বড়বাজারের আবির বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সপ্তম দফার ভোটের পরে ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় বিজেপির এই রাজ্যে ভাল ফল করার সম্ভাবনার কথা শুরু হয়েছে। তার পর থেকেই সবুজকে টক্কর দিচ্ছে গেরুয়া। কোনও কোনও দোকানে আবার গেরুয়া পিছনে ফেলেও দিয়েছে সবুজ আবিরকে।
বড়বাজারের চায়না বাজারে ছাতার দোকান দীপঙ্কর পালের। তবে আবিরের মরসুমে আবির, বাজির মরসুমে বাজিও বিক্রি করেন তিনি। দীপঙ্করবাবু জানান, এ বার ভোটকে ঘিরে যে একটা অকাল হোলি হবে তা তিনি টের পেয়েছিলেন। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘এত দিন ধরে একটু একটু করে মজুত করছিলাম আবির। সেখানে সবুজ আবির একটু বেশিই রাখছিলাম। কিন্তু হঠাৎ সোমবার থেকে দেখছি গেরুয়া আবিরের চাহিদা বেশ ভাল বেড়েছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দীপঙ্করবাবু জানান, গেরুয়া আবিরের চাহিদা বেশি রয়েছে জেলার দিকে। বিশেষ করে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হুগলি ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে গেরুয়া আবিরের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কলকাতার মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার থেকে বেশি গেরুয়া আবিরের চাহিদা উত্তর কলকাতায়। এই চাহিদাটা বেড়েছে ভোট পরবর্তী সমীক্ষারপর থেকে।
বড়বাজারে এ রকমই মরসুমি আবির বিক্রি করেন ইউনিস খান। তাঁর কাছ থেকে উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকা থেকে দশ কেজি ওজনের পাঁচ বস্তা গেরুয়া আবির কিনে নিয়ে গেলেন কয়েক জন যুবক। তাঁরা জানান, ফল ঘোষণার দিনেও তাঁরা আরও কয়েক বস্তা গেরুয়া আবিরের বরাত আবিরবিক্রেতা ইউনিসকে দিয়ে যাচ্ছেন। ইউনিস জানান, সোমবার সকাল থেকে অতিরিক্ত আরও বেশ কয়েকটি ১০ কেজি গেরুয়া আবিরের বস্তা আনতে হয়েছে। তাঁর মতে, ‘‘বছর দশেক আগে সবুজের সঙ্গে সঙ্গে
লড়াই হতো বামফ্রন্টের লাল আবিরের। সেই লড়াই তো কবেই শেষ। তার পরে বিগত কয়েক বছর ধরে একচেটিয়া ছিল সবুজ আবির। এ বার যেন ফের সেই পুরনো দিনের টক্কর ফিরে এসেছে। তবে লাল রঙের আবির পাল্টে হয়েছে গেরুয়া।’’ ইউনিসের মতে, ‘কাঁটে কি টক্কর’ হওয়ায় আখেরে লাভ হয়েছে তাঁদেরই।
বড়বাজারের ব্যবসায়ী সন্দীপ পাল অবশ্য সবুজ ও গেরুয়া আবির সমানে সমানে রেখেছেন। তিনি জানান, পাঁচ কেজি আবিরের বস্তার দাম ৩০০
থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে। ওই দোকানে আবির কিনতে এসেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী সর্বেশ্বর মণ্ডল। তিনি জানান, ভোট পরবর্তী সমীক্ষাকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। সর্বেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘ওই সব ভোট পরবর্তী সমীক্ষা বিশ্বাস করি না। এর কোনও ভিত্তি নেই। আমরাই জিতছি। তাই বেশ কয়েক বস্তা সবুজ আবির কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’’