general-election-2019-vote-colour

ওই ভোট, বাপ রে! ‘আনফিট’ প্রমাণে হত্যে সরকারি কর্মীদের

‘নিউটন’ ছবির এই দৃশ্যের কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন এ বারের নির্বাচনে ভোটের ডিউটির জন্য বাছাই হওয়া সরকারি কর্মী-অফিসারদের একটা বড় অংশ।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৭
Share:

দাবি: নিরাপত্তা চেয়ে ভোটকর্মীদের আবেদন। শনিবার, চেতলার একটি স্কুলের সামনে। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলে ঘেরা এক দুর্গম জায়গায় ভোট। এলাকাটি খানিক বিপজ্জনকও বটে। সেই কারণে ভোটের ডিউটি করতে কেউ যেতে চান না সেখানে। নিজেকে অসুস্থ, নিরুপায় প্রমাণ করার মরিয়া প্রতিযোগিতা চলছে সরকারি কর্মী-অফিসারদের মধ্যে। কেউ বলছেন, তাঁর হার্টের ব্যামো রয়েছে। কেউ বা বলছেন অন্য কোনও রোগের নাম। ডাক্তারের সার্টিফিকেটও সকলের হাতে হাতে। এমন অবস্থায় তরুণ, ডাকাবুকো সরকারি অফিসার নিউটন কুমার উঠে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, তিনি ওই ডিউটি করতে প্রস্তুত।

Advertisement

‘নিউটন’ ছবির এই দৃশ্যের কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন এ বারের নির্বাচনে ভোটের ডিউটির জন্য বাছাই হওয়া সরকারি কর্মী-অফিসারদের একটা বড় অংশ। মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে নিজেদের ‘আনফিট’ প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টায় নেমেছেন তাঁরাও।

এই অনিচ্ছার কারণ কী, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কই হোক বা বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে ক্ষোভ, নির্বাচন পরিচালনা করতে এ বার প্রবল রকম বিমুখ সরকারি কর্মীরা। ভোটের এখনও দেরি আছে। সবে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার জন্য নির্দেশ জারি হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই সেই ডিউটিতে যেতে চান না জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন অসংখ্য কর্মী। কমিশন সূত্রের খবর, ৯০ শতাংশ আবেদনেই সার্বিক অসুস্থতার কারণ দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভোট তো তার জন্য আটকে থাকবে না। তাই ‘সন্দেহজনক’ সমস্ত আবেদন যাচাই করতে সেগুলি পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে। সেখানে বসেছে মেডিক্যাল বোর্ড। এমনিতেই রোগীর চাপে হিমশিম অবস্থা সরকারি হাসপাতালগুলির। তার মধ্যে নতুন এই দায়িত্বে নাজেহাল অবস্থা চিকিৎসকদের।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কথাই ধরা যাক। এই জেলায় ভোট পরিচালনা করতে ৬০ হাজার কর্মী প্রয়োজন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে ৪৮ হাজার কর্মীকে ডেকেছে তারা। কিন্তু তার মধ্যেই ভোটে যেতে না চেয়ে আবেদন করেছেন অনেকে। শনিবার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘ওই সমস্ত আবেদন মেডিক্যাল বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই জেলায় আড়াই হাজারের মতো আবেদন শারীরিক অসুস্থতার কারণে মঞ্জুর করা হয়েছে।’’

আড়াই হাজার আবেদন মঞ্জুর হলেও তার কয়েক গুণ বেশি আবেদন যথার্থ কি না, তা যাচাই করতে হচ্ছে হাসপাতালকে। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই আবেদনগুলি পরীক্ষা করে দেখতে মেডিসিন, অস্থি, চোখ, নাক-কান-গলা ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা আবেদনকারীদের শারীরিক সমস্যা খতিয়ে দেখছেন। তার পরে ফিট বা আনফিট সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।’’ এখানে ‘ফিট’ মানে যাঁরা ভোটের ডিউটিতে যেতে সক্ষম। ৪০০ জনের মতো আবেদনকারীর মধ্যে ওই হাসপাতাল ইতিমধ্যেই ১৪০ জনকে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট দিয়েছে।

কিন্তু এ সব করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে পরিষেবা। ওই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে চারশো রোগী ভর্তি হন। সেখানকার এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগী দেখব, না আবেদনের সত্য-মিথ্যা যাচাই করব! এ এক বড় ঝামেলায় পড়েছি।’’ শনিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এসে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট পাওয়ায় গোমড়া মুখে বাড়ি ফিরছিলেন মধ্যমগ্রামের এক স্কুলশিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে ভোটে গণ্ডগোলের ভয়ে বৌ-মেয়ের চাপে এক চিকিৎসক বন্ধুর থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে এসে পাশ করতে পারলাম না।’’

গত বছর পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করতে গিয়ে রায়গঞ্জে মারা গিয়েছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়। সেই মৃত্যুর কিনারা এখনও হয়নি। ওই ভোট পরিচালনা করতে গিয়েই বুথের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন দেগঙ্গার শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। মুখে এবং সারা শরীরে ক্ষত নিয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। নির্বাচনের কাজে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এ রাজ্যে মনিরুলই প্রথম ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। এ বারও লোকসভা ভোটে ডাক পড়েছে ওই শিক্ষকের। এ দিন তিনি ভোট পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। ভোটে যেতে না চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন মনিরুলও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও সুস্থ নই। ক্ষতিপূরণের সামান্য টাকায় কিছুই হয়নি। তাই ভোটে না যাওয়ার আবেদন করেছি। দেখি, মেডিক্যাল বোর্ড কী বলে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement