Lok Sabha Election 2019

চার পাশে সব কিছুই কেমন যেন বেসুরো ঠেকছে

গণতন্ত্রে নানা স্বর থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের স্বর না থাকলে তা আর যা-ই হোক, গণতন্ত্র হয় না।

Advertisement

শ্রীকান্ত আচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

চারপাশের যা পরিস্থিতি, তাতে এই দেশে সুর-তাল-ছন্দ কিছুই এখন আছে বলে মনে হয় না!

Advertisement

গণতন্ত্রে নানা স্বর থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের স্বর না থাকলে তা আর যা-ই হোক, গণতন্ত্র হয় না। কিন্তু বহুস্বরে সেই জোর কত জনে দেন? কোনও রাজনৈতিক দলই দেয় কি আদৌ? মনে তো হয় না। এরই ফলে যেন দিন দিন সুর হারাচ্ছে রাজনীতি থেকে। কারণ, সাত স্বর ছাড়া সরগম হয় না।

সব মিলিয়ে রাজনীতির মানটাই যেন পড়ছে দিন দিন। রাজনীতি তো একটা বৌদ্ধিক অনুশীলন বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজ’। তার জন্য যথেষ্ট পড়াশোনা করা প্রয়োজন। সেই পড়াশোনা নিয়ম করে চালিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি দরকার শিক্ষার পরিবেশ। শিক্ষা না থাকলেও অনেক ধরনের স্বর এক জায়গায় জন্ম নিতে পারে অবশ্যই। কিন্তু সে সব স্বর এক জায়গায় এনে, তা দিয়ে সুর তৈরি করা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। হচ্ছেও না।

Advertisement

অনেক ধরনের শব্দ বা আওয়াজ থেকে সঙ্গীত তৈরি করতেও তো সাহায্য করে শিক্ষাই। যার যে রকম শিক্ষা আছে, সে তো সে রকমই সঙ্গীত বানায়। ভিতরে গুণ অনেকের থাকে। তবে সেই গুণ কাজে লাগিয়ে দারুণ কোনও সঙ্গীতের স্রষ্টা হতে কাজে আসে শিক্ষা। যা আমি বলতে চাইছি, তা হল শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়ার মতো সুযোগ আমাদের নেই। কিন্তু তেমনটাই হচ্ছে।

কেন?

শিক্ষা থাকলে সত্যি আর মিথ্যার মধ্যে ফারাকটা কিছুটা হলেও বুঝে ফেলা যায়। অন্তত বুঝে ফেলা সহজ হয়। এ দিকে, চার দিকে তো মিথ্যার বন্যা বয়ে চলেছে। তার মধ্যে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিলে অনেকেরই বুঝি অসুবিধা হয়। তার ফল কী হচ্ছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন সকলে। সঙ্গীত তৈরি হচ্ছে না। চারপাশে সব কিছুই কেমন যেন বেসুরো ঠেকছে।

গজল-সম্রাট গুলাম আলি সাহাব এক বার বলেছিলেন, ‘‘যো ঝুট হ্যায়, উয়ো বেসুরা হ্যায়!’’ যা মিথ্যা, তা-ই বেসুরা। ঠিকই তো। এই মিথ্যার স্রোতের মাঝে সুর আসবে কোথা থেকে? সুর তৈরির সহমন, সমমত দেখাই যায় না। তা থাকলে একসঙ্গে অনেকগুলো স্বর মিলে একটা সুন্দর ‘সিম্ফনি’ তৈরি হত। সুন্দর গণতন্ত্র তৈরি হত। এক-একটা স্বর, একে অপরকে আরও জোরালো এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলত। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। হতে দেওয়াই হচ্ছে না। সব যেন দল-রঙের ঘেরাটোপে আটকে যায়।

স্বর উঠে আসে অনেক। তা তো থাকবেই। চেপে রাখা তো যায় না। কিন্তু সকলেই সকলকে চাপতে চায়। এক স্বর অন্য স্বরকে জায়গা দেবেই না। সক্কলে শুধু বলবে। চিৎকার করে শুধুই নিজেদের কথা বলবে। সত্যি বলার রসদ ফুরোলে মিথ্যা বলবে। সেইটাই বেশি বলবে। অন্যেরটা শুনবে না। অন্যের মতকে কোনও ভাবেই জায়গা দেওয়া হবে না। নানা স্বরের সেই চিল-চিৎকার ‘সিম্ফনি’র জায়গায় তৈরি করছে ‘ক্যাকোফনি’। চার দিকে শুধু মিথ্যা আর অব্যবস্থার কোলাহল। কাক-চিল বসার উপায় নেই কোথাও। এক জন একটা মিথ্যা বলছে তো তার উত্তরে আর এক জন আরও পাঁচটা মিথ্যা বলছে।

একে কি গণতন্ত্র বলা যায়? না কি এই পরিস্থিতিকে গণতান্ত্রিক ভাবার সাহস দেখানো উচিত?

গান-বাজনার জন্য যেমন শিক্ষা নিতে হয়, পেশাদার রাজনীতির জগতে যাওয়ার আগেও তেমন তালিম নেওয়া প্রয়োজন। যেখানে সমাজ-দুনিয়া-সভ্যতা-ভব্যতা সম্পর্কে কিছু পড়াশোনা করবে সকলে। এক জন গুরু শেখাবেন গণতন্ত্র কী ভাবে চালাতে হয়, গণতান্ত্রিক অধিকার কাকে বলে। সে রকম একটা ব্যবস্থা তৈরি হলেই দেখা যাবে, আগে রপ্ত করে ফেলা অনেক কিছু বর্জন করতে হচ্ছে। নতুন কিছু শিখতে গেলে যেমনটা হয় আর কী!

শিক্ষার পথে গিয়ে সেই পুরনো অভ্যাসগুলো যত তাড়াতাড়ি ছাড়তে পারব, ততই সমাজের মঙ্গল। এখন চারপাশের চেঁচামেচি আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বন্যা দেখে বড্ড চিন্তা হয়। এ ভাবে চলতে থাকলে ধ্বংস আর খুব দূরে থাকবে না। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই গোটা সমাজব্যবস্থা ধসে পড়বে। এ ভাবে চলা যায় না।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে এবং বোঝাতে শিক্ষার প্রয়োজন। সেটা জানা দরকার। এখন সবটাই কেমন অদ্ভুত। পেটে বিদ্যা নেই, কিন্তু হাতে মোবাইল ফোন আছে। টেকনোলজি ক্ষমতা বটে। তবে টেকনোলজি কী ভাবে ব্যবহার করলে ক্ষমতা ঠিক প্রয়োগ হয় আর কী ভাবে করলে তাকে অপব্যবহার বলা হয়, তা বোঝাবে কে? শিক্ষাই তো? রাজনীতির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই হয়েছে। ক্ষমতাকে ঠিক ভাবে ব্যবহার করার শিক্ষাটাই হচ্ছে না। ফলে দ্বন্দ্ব সর্বক্ষণ। তাই দেখা দেয় না সুর, সঙ্গ দেয় না তাল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন