লেকটাউনের তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গুলশন কুমার গ্রেফতার হল। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরেই গুলশন তাঁর আদি বাড়ি গুয়াহাটি চলে যায়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে গুলশনকে কলকাতায় ডেকে পাঠায়।
বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “গুলশন বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি তিন অভিযুক্তেরও খোঁজ চলছে।” এ দিনই বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা হয় অভিযোগকারিণী তরুণীর। এডিসিপি দেবাশিসবাবু জানান, মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পেশায় ব্যবসায়ী গুলশন বছরখানেক আগে গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় এসে ব্যবসার সূত্রে লেকটাউনের গ্রিনপার্কে থাকতে শুরু করে। অভিযোগকারিণীর বাড়ির পাশেই একটি মেসে থাকত সে ও বাকি তিন অভিযুক্ত। গত ৯ মার্চ বছর চব্বিশের ওই তরুণী মায়ের পেনশন তুলতে ব্যাঙ্কে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে গুলশন তাঁকে ফোন করে জানায়, তাঁর অজান্তেই তাঁর বেশ কিছু ছবি তোলা হয়েছে। তিনি যদি মেসে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা না করেন, তা হলে ছবিগুলি ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফিক সাইটে দিয়ে দেওয়া হবে। ওই তরুণী পুলিশকে জানান, ভয় পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি গুলশনদের মেসে যান। অভিযোগ, গুলশন ও তার তিন বন্ধু তাঁকে জোর করে একটি পানীয় খাওয়ালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পরেই তাঁকে ধর্ষণ করে গুলশনরা।
পরদিনই ওই তরুণী লেকটাউন থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু অভিযোগ, লেকটাউন থানার অফিসার অভিযোগ নিতে চাননি। উল্টে তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে হেনস্থা করা হয়। এ দিন মেডিক্যাল টেস্টের পরে ওই তরুণী বলেন, “আমি বারবার লেকটাউন থানায় অভিযোগ নথিভুক্ত করার চেষ্টা করি। কোনও অফিসার কর্ণপাত করেনি। আমাকে বারবার পুলিশ কেন এ ভাবে হেনস্থা করল?”
দেবাশিসবাবু জানান, প্রাথমিক তদন্তে ওই তরুণীর মানসিক ভারসাম্যহীনতার কিছু প্রমাণ পুলিশ পেয়েছিল। ওই তরুণীর দাদাও থানায় চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তাঁর বোন মানসিক সমস্যা নিয়ে পাভলভে এক বছর ভর্তি ছিলেন। কিন্তু সেই কারণে থানা যদি গণধর্ষণের অভিযোগ না নিয়ে থাকে, তা হলে সেটা খুবই ভুল হয়েছে। কোন অফিসারের কাছে ওই তরুণী প্রথমে গিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান দেবাশিসবাবু।
এ দিন মূল অভিযুক্ত গুলশন ধরা পড়ার পরে নিজের বাড়িতে বসে ওই তরুণী বলেন, “কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছি। তবে বাকি তিন জনকেও ধরতে হবে। ওদের চরম শাস্তি চাই।” তিনি আরও বলেন, “ওরা বলেছিল, ধর্ষণের কথা পুলিশকে জানালে ওরা আমার ছবি ইন্টারনেটের পর্নো সাইটে তো দেবেই, সেই সঙ্গে মা আর দাদাকে খুন করে খালে ভাসিয়ে দেবে। তবু আমি সাহস করে লেকটাউন থানায় গিয়েছিলাম। ওরা অভিযোগ নিচ্ছিল না। ভীষণ অসহায় লাগছিল।” ওই তরুণীর দাবি, পুলিশ অভিযোগ না নেওয়ায় তিনি মরিয়া হয়ে সংবাদমাধ্যমে ফোন করে ধর্ষণের ঘটনাটি জানান। এর পরেই টনক নড়ে বিধাননগর কমিশনারেটের। এর পরে তাঁকে এডিসিপি-র অফিসে ডেকে পাঠিয়ে লিখিত অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।