মাঝেরহাট ফিরিয়ে আনল পুরনো আতঙ্ক

২০১৩ সালের ৩ মার্চ ভোরে উল্টোডাঙা উড়ালপুল দুর্ঘটনায় এই চার বন্ধুই বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছিলেন। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে অন্য অনেকের প্রাণও বাঁচিয়েছিলেন পালান, অমিত, সজল এবং অসিত। তাঁদের সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সাহসিকতার সেই সব মেডেল, সার্টিফিকেট এখনও বাড়ির এক কোণে সযত্নে রাখা আছে। সেই সঙ্গে বেঁচে আছে আতঙ্কের প্রতিটি মুহূর্তও।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩২
Share:

পালান ঘড়ুই ও অসিত দাস। নিজস্ব চিত্র

চায়ের দোকানে খবরটা পেয়ে মোবাইলে চোখ চলে যায় পালান ঘড়ুইয়ের। অফিসে সহকর্মীদের আলোচনা শুনে দ্রুত কম্পিউটারে চোখ রাখেন অমিত সরকার। নিজের দোকানে বসে মোবাইলে চোখ সজল চট্টোপাধ্যায়েরও। পাঁচ বছর আগে ঘটনার দিন যাঁর হাত স্টিয়ারিংয়ে ছিল, সেই অসিত দাস খবরটা পান হোয়াটসঅ্যাপে। মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাট উড়ালপুল দুর্ঘটনা এক ঝটকায় চার বন্ধুকে আবার আতঙ্কের মাঝদরিয়ায় নিয়ে ফেলেছে।

Advertisement

২০১৩ সালের ৩ মার্চ ভোরে উল্টোডাঙা উড়ালপুল দুর্ঘটনায় এই চার বন্ধুই বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছিলেন। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে অন্য অনেকের প্রাণও বাঁচিয়েছিলেন পালান, অমিত, সজল এবং অসিত। তাঁদের সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। সাহসিকতার সেই সব মেডেল, সার্টিফিকেট এখনও বাড়ির এক কোণে সযত্নে রাখা আছে। সেই সঙ্গে বেঁচে আছে আতঙ্কের প্রতিটি মুহূর্তও।

পাঁচ বছর আগে বিরাটিতে এক বন্ধুকে নামিয়ে তারাপীঠ থেকে উল্টোডাঙা উড়ালপুল ধরে চার বন্ধু নিজেদের বাড়ি ফিরছিলেন। অসিত গাড়ি চালাচ্ছিলেন। অমিত তাঁর পাশে বসেছিলেন। পিছনের সিটে পালান এবং সজল।উড়ালপুল ভেঙে মার্বেল বোঝাই যে লরি খালে পড়ে গিয়েছিল, তার থেকে খানিক তফাতে ছিল পালানের গাড়ি। অমিত জানান, গোলাঘাটা থেকে উড়ালপুল ধরে বাঁকের কাছে এলে গাড়ির আলো রেলিংয়ে পড়ার কথা। তা না হয়ে আলো দূরের বহুতলে পড়ছিল। সন্দেহ হওয়ায় গাড়ি দাঁড় করাতে বললে অসিত তৎক্ষণাৎ ব্রেক কষেন।

Advertisement

আরও খবর: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার

এর পরে চার বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে দেখেন, উড়ালপুলের ভাঙা অংশ থেকে একটি লরি নীচের দিকে ঝুলছে। উড়ালপুলে ওঠার মুখে নিজেদের গাড়ি আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে অন্য গাড়ির চালকদের সতর্ক করেন অসিতেরা। পুলিশ না আসা পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যান তাঁরা।

ভেঙে পড়া উল্টোডাঙা উড়ালপুলের একাংশ। ফাইল চিত্র

বুধবার দত্তাবাদের বাসিন্দা পালান বলেন, ‘‘দেড় বছর উল্টোডাঙা উড়ালপুলে ওঠার সাহস হয়নি।’’ জানালেন, লেক টাউন যেতে হলে হাডকো হয়ে ঘুরে যেতেন। এখনও উড়ালপুলের ওই বাঁক পেরোনোর সময়ে বুকের ভিতরটা কেমন করে। অমিত বলেন, ‘‘আমি তো নমস্কার করে উড়ালপুলে উঠি।’’ সজলের কথায়, ‘‘উল্টোডাঙা, পোস্তার পরে অনেক কষ্টে আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছিলাম। আবার একই জায়গায় ফিরলাম!’’ আর পেশায় গাড়িচালক অসিত বলেন,‘‘উড়ালপুলে যানজটের সময়ে গাড়ি নিয়ে দাঁড়ালে বা উড়ালপুলের নীচ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ভয় করে। মা উড়ালপুলের নীচ দিয়ে অনেকটা পথ যাওয়ার সময়ে খালি মনে হয় কতক্ষণে রাস্তা শেষ হবে!’’

আরও খবর: রেলকে খোঁচা মমতার, পাল্টা যুক্তি রেলেরও

পোস্তার উড়ালপুল যখন ভেঙেছিল, তখন ঘটনাস্থলে ছুটে যান অসিত। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ছবিতে দেখছিলাম মিনিবাস, গাড়ি, বাইক ওই সময়ে সেতুর উপরে ছিল। ওই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মনের অবস্থা কেউ বুঝতে পারবেন না। পাঁচ বছর আগে আমাদের গাড়ি যদি ৮০-৮৫ কিলোমিটার বেগে থাকত, তা হলে আমরাও বাঁচতাম না।’’

এরই মধ্যে পালানের জিজ্ঞাস্য, ‘‘শুনলাম, ছ’মাস আগেই নাকি মাঝেরহাট উড়ালপুল ফিট সার্টিফিকেট পেয়েছিল!’’ শিক্ষক দিবসে সাহসিকতার মেডেল, সার্টিফিকেট হাতে অসিত বলেন, ‘‘প্রায়ই তো এক ঘটনা ঘটছে। এগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন