'অক্ষম হয়ে কাউকে যেন বাঁচতে না হয়'

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল আড়াই বছর আগের সেই দিনটার কথা।

Advertisement

আব্দুল হুদা শেখ (পোস্তা উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় আহত) 

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২০
Share:

আব্দুল হুদা শেখ

অকেজো পা নিয়ে বেশি হাঁটাচলা করতে পারি না। বাড়ির কাছে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বিকেলে মাঝেমধ্যে একটু বসি। চা খাই। মঙ্গলবার বিকেলেও ওই দোকানে চা খেতে গিয়েছিলাম। তখনই দোকানের টিভি-তে দেখি দেখাচ্ছে, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল আড়াই বছর আগের সেই দিনটার কথা।

Advertisement

সে দিন পোস্তার উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় আরও অনেকের সঙ্গে আমার জীবনেও নেমে এসেছিল ভয়ানক অন্ধকার। যে অন্ধকার নিয়েই কাটাচ্ছি জীবনের দিন-রাত। উড়ালপুল ভেঙে পড়ে মারা গিয়েছিলেন ২৬ জন। জখম একশোর বেশি। তাঁদেরই এক জন আমি। অকেজো পা নিয়ে বেঁচে আছি। এ বাঁচা যে কী কষ্টের!

মুর্শিবাদের রেজিনগর থেকে কলকাতায় এসে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। গ্রামের আরও কয়েক জনের সঙ্গে থাকতাম বিডন স্ট্রিট এলাকায়। সকলেই আমরা রাজমিস্ত্রি ছিলাম। ব্রিজ ভেঙে পড়ার দিন কয়েক জন সঙ্গী রাজমিস্ত্রির কাজ করছিল ক্যানিং স্ট্রিটে। দুপুরে ওদের জন্য খাবার পৌঁছে দিয়ে ট্রামে করে ফিরছিলাম। চিৎপুরে যানজট দেখে ট্রাম থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করি। ভেবেছিলাম, বাকি রাস্তাটুকু হেঁটেই চলে যাব। কিন্তু তলা দিয়ে যাওয়ার সময়েই ভেঙে পড়ে উড়ালপুল। চাপা পড়ে যাই। তিন ঘণ্টা চাপা পড়ে থাকার পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। প্রাণে বেঁচে গেলেও একেবারে অকেজো হয়ে এখন বেঁচে রয়েছি।

Advertisement

পোস্তায় ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল। ফাইল চিত্র

বাঁ পা একেবারে অকেজো হয়ে গিয়েছে। বুকের ডান দিকের পাঁজরের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। সঙ্গে কোমরও ভেঙে গিয়েছিল। ডান হাতের হাড় থেকে মাংস বেরিয়ে গিয়েছিল। উরু থেকে মাংস নিয়ে ডান হাতে জুড়েছিলেন ডাক্তারবাবুরা। এখন খালি পায়ে হাঁটতে পারি না। দুর্ঘটনার জন্য সরকার ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দিয়েছিল। সঙ্গে বাঁ পায়ের হাঁটু থেকে নীচ পর্যন্ত পরার জন্য একটা গার্ড। সেটা পরলে কোনওমতে একটু হাঁটতে পারি।

আরও পড়ুন: খোঁজ মিলছে না মেট্রোর ৩ ঠিকা শ্রমিকের

আরও পড়ুন: প্রকাণ্ড সেতুটা ঝুলে রয়েছে ‘ভি’-এর আকারে

আজও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে বসেছিলাম। তখনই টিভিতে দেখি এমন ঘটনা! কার বাড়ির যে কে চলে গেল কে জানে! এর জন্য আমার মতো আরও কত জনকে এমন অক্ষম জীবন কাটাতে হবে তা-ও জানি না। এ সব চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরছে। আমার মতো অবস্থায় যেন কাউকে আর বেঁচে না থাকতে হয় এই কামনা করছি।

(অনুলিখন: মধুমিতা দত্ত)

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন