এপিজে হাউসে আগুনের পর নীচে নেমে এসেছেন কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র
ফের মহানগরে অগ্নিকাণ্ড। পার্ক স্ট্রিটের এপিজে হাউসে ভয়াবহ আগুন। দমকলের ১১টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করছে।
পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। এরপরই দ্রুত নীচে নেমে আসেন ওই ভবনে থাকা একাধিক অফিসের কর্মীরা। দায়িত্বে থাকা কর্মীরা নিজেরাই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার মাধ্যমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পাঠানো হয় দমকলেও।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ঘটনার জেরে পার্ক স্ট্রিট ও লাগোয়া রাস্তাগুলিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। খবর পেয়ে দমকলের কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যান দমকলকর্মীরা। ১১টি ইঞ্জিনের সাহায্যে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন তাঁরা।
এপিজে হাউসে রয়েছে একাধিক বেসরকারি সংস্থার অফিস। অফিস টাইমে আগুন লাগায় কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ওই ভবনে থাকা একাধিক অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ব্যবধানে ‘ফায়ার ড্রিল’ হয়। ফায়ার অ্যালার্ম বাজিয়ে কর্মীদের নীচে নামিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি আগুন লাগলে কী করা উচিত, কী উচিত নয় এসব যাবতীয় বিষয় তাঁদের শেখানো হয়। ফলে এদিন কিছুটা আতঙ্ক ছড়ালেও হুড়োহুড়ি বা দৌড়াদৌড়ি হয়নি। সিঁড়ি দিয়ে কার্যত নিরাপদেই নীচে নেমে আসেন অধিকাংশ অফিসের কর্মীরা।
আরও পড়ুন: আমাদের থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের দান নিয়ে মূর্তি বানাচ্ছ? ফুঁসছে ব্রিটেন
দমকলের কর্মীরা জানিয়েছেন, এপিজে হাউসের নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থার মাধ্যমে আগুন আশপাশে খুব বেশি ছড়াতে পারেনি। তবে আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্মীরা।
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের জেরে ব্যাপক যানজট হয় পার্কস্ট্রিট, থিয়েটার রোড-সহ সংলগ্ন প্রায় সব রাস্তায়। পুলিশ ওই চত্বরের প্রায় সব রাস্তাতেই যান নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তারপরও যানবাহনের গতি অত্যন্ত ধীর বলে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আরও পড়ুন: ‘ছুটিই ছুটি!’ নবান্নে এখন কাজের পাহাড়
কোটাকের অফিস থেকে আগুন ছড়িয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান দমকল কর্মীদের। ওই অফিসের কর্মী পবন তিওয়ারি বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এইচআর ম্যানেজারকে জানাই। নিজেও এমার্জেন্সি গেট দিয়ে নীচে নেমে আসি। কিছুক্ষণ পরই ফায়ার ব্রিগেড চলে আসে।’’
এপিজে হাউসের পক্ষে সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটি সার্ভার রুম থেকে আগুন লেগেছে। দমকলের ১০টা ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে। হাইড্রোলিক ল্যাডার আসে। আমাদের নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জল দেওয়া হয়। এছাড়াও লাগোয়া পার্ক হোটেল এবং ট্রিঙ্কাস থেকেও ওরা হোস পাইপ দিয়ে জল দেয়।’’
এপিজে হাউসের দু’টি ভবনের মাঝে একটি পোর্টিকো রয়েছে। ফলে ল্যাডার ঢুকতে সমস্যা হয়েছে। দমকলের ডিজি জগমোহন এপিজে কর্তৃপক্ষকে বলেন, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ওই পোর্টিকো ভেঙে ফেলা উচিত।
২০১০ সালে এই পার্ক স্ট্রিটেরই স্টিফেন কোর্ট ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী শহর কলকাতা। ওই ঘটনায় পুড়ে ও দমবন্ধ হয়ে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২০ জন। এপিজে হাউসে আগুন লাগার পর শহরবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কথাবার্তায় উঠে এসেছে সেই স্মৃতিও।