রাস্তার এই হাল কেন, জানতে চান ক্ষুব্ধ মমতা

কলকাতার রাস্তার অবস্থা নিয়ে বিরোধীদের তোলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার পুর অধিবেশনে মেয়র দাবি করেছিলেন, এই বর্ষাতেও কলকাতার রাস্তা দেশের সব শহরের চেয়ে ভাল। এ শহরের রাস্তাকে মেয়র ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেও বৃহস্পতিবার নবান্নে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী-আমলাদের নিয়ে ডাকা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহাল রাস্তা নিয়ে কার্যত তুলোধোনা করলেন কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪১
Share:

এবড়োখেবড়ো: ডায়মন্ড হারবার রোডের বেহাল অবস্থা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি নস্যাৎ করে দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

কলকাতার রাস্তার অবস্থা নিয়ে বিরোধীদের তোলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার পুর অধিবেশনে মেয়র দাবি করেছিলেন, এই বর্ষাতেও কলকাতার রাস্তা দেশের সব শহরের চেয়ে ভাল। এ শহরের রাস্তাকে মেয়র ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেও বৃহস্পতিবার নবান্নে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী-আমলাদের নিয়ে ডাকা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহাল রাস্তা নিয়ে কার্যত তুলোধোনা করলেন কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষকে।

বৈঠকে মেয়র উপস্থিত থাকলেও তাঁকে এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন ছুড়ে দেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদের দিকে। নবান্ন সূত্রের খবর, বৈঠকের মাঝেই এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী খলিল আহমেদকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি শহরের রাস্তায় ঘোরেন?’’

Advertisement

থতমত খেয়ে পুর কমিশনার জবাব দেন, ‘‘ঘুরি ম্যাডাম।’’

মুখ্যমন্ত্রীর পরের প্রশ্ন, ‘‘কোন কোন রাস্তা খারাপ, বাইপাসে যে গর্ত রয়েছে, তা জানেন?’’

পুর কমিশনার জবাব দেন, ‘‘তারাতলা রোড এবং ডায়মন্ড হারবার রোডের হাল ভাল নয়।’’

মুখ্যমন্ত্রীর পরের প্রশ্ন, ‘‘কেন নয়?’’

ডায়মন্ড হারবার রোডের বেহাল অবস্থার দায় মেট্রো রেলের উপরে চাপিয়ে দিয়ে পুর কমিশনার বলেন, ‘‘মেট্রো রেলকে বারবার বলা সত্ত্বেও কোনও কাজ হচ্ছে না। এমনকি, মেট্রোর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ফোনও ধরেন না।’’

বছরের পর বছর রাস্তার জন্য বহু টাকা খরচ হওয়া সত্ত্বেও কেন সেগুলির এ রকম বেহাল দশা, এমন প্রশ্নও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী করেছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

নবান্নের বৈঠকে কলকাতার রাস্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের কথা এসে পৌঁছতেই গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। কীসের ভিত্তিতে সোমবার পুর অধিবেশনে মেয়র কলকাতার রাস্তাকে এমন ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন, সে প্রশ্নও তোলেন বিরোধী কাউন্সিলরদের কেউ কেউ। ওই পুর অধিবেশনে শহরের রাস্তার হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। তাঁর মূল অভিযোগ ছিল ই এম বাইপাস এবং ডায়মন্ড হারবার রোডের হাল নিয়ে। যার জবাব দিতে গিয়ে মেয়র বলেছিলেন, কলকাতার রাস্তার হাল অন্য যে কোনও শহরের চেয়ে ভাল।

রাস্তার পাশাপাশি ই এম বাইপাসের ধারে একাধিক ওয়ার্ডে পুকুর ভরাট করে নির্মাণের প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরসভার ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণ নিয়ে আগেই অভিযোগ জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তারই প্রেক্ষিতে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মমতা। কিছু দিন আগে অরূপবাবু পুর কমিশনার, পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ে নয়াবাদ এলাকায় পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে গিয়েছিলেন। প্রশাসনের ওই দলের নজরেও আসে জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণকাজের বিষয়টি। ওই পরিদর্শনের পরেই পুর প্রশাসন সেখানে জলাশয়ের উপরে গজিয়ে ওঠা একটি বাড়ি ভেঙে দেয়। এলাকার জলাশয়গুলির পাশে হোর্ডিং দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুকুর ভরাট করে নির্মাণ বেআইনি। কেউ তা করলে জরিমানা এবং জেল, দুই-ই হতে পারে। পাশাপাশি, শ’খানেক বাড়িতে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে, জমির কাগজপত্র নিয়ে পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরে যোগাযোগ করুন। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন