মোটরবাইক না দেওয়ায় যুবককে ‘মারধর’

পুজোর আগে নতুন মোটরবাইক কিনেছিলেন কাশীপুরের এক যুবক। এলাকার এক ‘দাদা’ ঘুরবে বলে ওই যুবকের কাছে কিছু সময়ের জন্য চেয়েছিল মোটরবাইকটি। কিন্তু তা দিতে না চাওয়ায় শুরু হয় ওই ‘দাদা’-র সঙ্গে যুবকের বচসা। অভিযোগ, বচসার মধ্যেই ওই দাদা এবং তার সঙ্গীরা ঘিরে ধরে বেধরক মারধর করে ওই যুবককে। শুধু মারধর নয়, ওই যুবককে রাস্তায় ফেলে তাঁর শরীরে দু’জায়গায় কাঁচি দিয়ে খোঁচানো হয় বলেও অভিযোগ।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩১
Share:

পুজোর আগে নতুন মোটরবাইক কিনেছিলেন কাশীপুরের এক যুবক। এলাকার এক ‘দাদা’ ঘুরবে বলে ওই যুবকের কাছে কিছু সময়ের জন্য চেয়েছিল মোটরবাইকটি। কিন্তু তা দিতে না চাওয়ায় শুরু হয় ওই ‘দাদা’-র সঙ্গে যুবকের বচসা। অভিযোগ, বচসার মধ্যেই ওই দাদা এবং তার সঙ্গীরা ঘিরে ধরে বেধরক মারধর করে ওই যুবককে। শুধু মারধর নয়, ওই যুবককে রাস্তায় ফেলে তাঁর শরীরে দু’জায়গায় কাঁচি দিয়ে খোঁচানো হয় বলেও অভিযোগ।

Advertisement

কাশীপুরের খগেন চ্যাটার্জি রোডের ওই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে পুজোর ঠিক আগে। আর এই ঘটনা নিয়ে চিৎপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগে ফের উঠে এসেছে কাশীপুরের শাসকদলের এক দাপুটে নেতার ‘ডান হাত’ এবং এলাকার ‘দাদা’ হাফিজুলের নাম। যার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ তোলাবাজির প্রায় ১১টি মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানার পুলিশের কাছে। গত বছর অস্ত্র আইন এবং তোলবাজির অভিযোগে পুলিশ তাকে ধরলেও বিধানসভা ভোটের আগেই জামিন পেয়ে যায় সে। অভিযোগ, এলাকায় তার প্রভাব এতটাই যে, তাকে সন্তুষ্ট না করে কেউ কিছু করতে পারে না।

পুলিশের দাবি, ব্যবসায়ী ওই যুবকের কাছে আগেই টাকা চেয়েছিল হাফিজুল এবং তার দলবল। কিন্তু তা দেয়নি ওই যুবক। এর পরেই পুজোর ঠিক আগে ওই যুবকের কাছে নতুন মোটরবাইক দেখে তা চেয়ে বসে হাফিজুল। কিন্তু এলাকার যুবক কিছুতেই তা হাত ছাড়া করতে চায়নি। তাই বচসার মাঝেই দাদাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ওই যুবক। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর শুরু করে হাফিজুল এবং তার দলবল। পুলিশের কাছে দায়ের করা ওই অভিযোগে যুবকের দাবি, রাস্তায় ফেলে যথেষ্ট হারে মারধরের পাশাপাশি রাস্তার পাশে থাকা একটি সেলুনের কাঁচি নিয়ে এসে তাঁর পেটে এবং পায়ে আঘাত করে ওই অভিযুক্তেরা। আঘাতের পাশাপাশি ওই কাঁচি দিয়ে তাঁকে খোঁচানো হয় বলেও ওই যুবকের দাবি পুলিশের কাছে। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ এসে জখম যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে চিৎপুর থানায় হাফিজুল এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এ দিন ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে হাফিজুলকে। কাশীপুরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে চিৎপুর থানা নয়, তাকে গ্রেফতার করে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন কাশীপুর থানার তদন্তকারীরা। কেন চিৎপুরের বদলে কাশীপুর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করল? লালবাজারের একাংশ জানিয়েছে, হাফিজুল এলাকায় তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ। গত এক বছর ধরে কাশীপুরে পরপর যে সব বোমাবাজি বা গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে, তাতে মূল অভিযুক্ত ছিল ওই নেতা এবং তার এই শাগরেদ। গত বছর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় পুলিশের খাতায় দাগী দুষ্কৃতী হিসেবে নাম থাকা হাফিজুল। পরে এ বছরেরে গোড়ার দিকে গ্রেফতার হতে হয় তার গুরু শাসকদলের ওই নেতাকেও।

পুলিশ জানিয়েছে, পুজোর আগে এবং পরে দু’টি বোমাবাজির ঘটনা ঘটে কাশীপর থানা এলাকায়। সেই বোমবাজির মামলাতেই কাশীপুর থানার পুলিশের হাতে মঙ্গলবার গ্রেফতার হয়েছে হাফিজুল। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেছেন, পুজোর আগে খগেন চ্যাটার্জি রোডের ওই ঘটনায় হাফিজুলকে সামনের সপ্তাহে নিজেদের হেফজাতে নেবে চিৎপুর থানার পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, কাশীপুরে পরপর ওই বোমাবাজির ঘটনায় আরও তিন দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করা হয়েছে। যার মধ্যে চন্দন সিংহ নামে উত্তর ২৪ পরগনার কাকিনাড়ার এক যুবকও রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সে বোমা বিশেষজ্ঞ। তাকে এলাকার কিছু ব্যক্তি বোমা ছোড়ার কাজে লাগিয়েছিল। কারা ওই দুষ্কৃতীদের কাজে লাগিয়েছিল? তদন্তকারীরা তা বলতে না চাইলেও অভিযোগের তির রয়েছে হাফিজুলের দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন