বাগুইআটি

রডের আঘাতে ‘খুন’ কাকা, কাকিমা ও বোন, ধৃত ভাইপো

একই পরিবারের তিন সদস্য খুন হলেন বাগুইআটিতে। রবিবার গভীর রাতে অর্জুনপুরের পশ্চিমপাড়ায় একটি একতলা বাড়ি থেকে বাবা, মা ও মেয়ের পচন ধরা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতেরা হলেন জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র (৬২), বিমলা মিত্র (৫৫) ও সোমা মিত্র (৩২)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

চলছে পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি। সোমবার, বাগুইআটিতে। — নিজস্ব চিত্র

একই পরিবারের তিন সদস্য খুন হলেন বাগুইআটিতে। রবিবার গভীর রাতে অর্জুনপুরের পশ্চিমপাড়ায় একটি একতলা বাড়ি থেকে বাবা, মা ও মেয়ের পচন ধরা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতেরা হলেন জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র (৬২), বিমলা মিত্র (৫৫) ও সোমা মিত্র (৩২)। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার পুলিশ জ্ঞানেন্দ্রবাবুর ভাইপো গোপাল মিত্রকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, জেরায় গোপাল তিন জনকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে জেরা করেই পুলিশ গোপালের বাড়ির কাছে নর্দমা থেকে একটি রক্তমাখা লোহার রডও উদ্ধার করেছে।

Advertisement

বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান সন্তোষ পাণ্ডে জানান, পুরনো পারিবারিক বিবাদের জেরেই গোপাল তাঁর কাকা ও কাকার পরিবারকে খুন করেছে। তদন্তকারীরা জানান, গণেন্দ্রনাথবাবু আর তাঁর ভাই রতন মিত্র একই চত্বরে থাকতেন। রতনবাবু প্রয়াত। কিন্তু সেই চত্বরের একটি সরু রাস্তাকে ঘিরেই দীর্ঘ দিনের বিবাদ। তার জেরে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিক মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘গোপাল জানিয়েছেন কাকা ও তাঁর মেয়ে তাঁদের একাধিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিলেন। নিজের স্বল্প আয়ে তিনি মামলা লড়তে অপারগ ছিলেন। তাঁর দাবি, রতনবাবু বেঁচে থাকতে তাঁকে সোমা মারধর করতেন। ফলে অনেক দিন ধরেই গোপাল প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন।’’

কী ঘটেছিল? তদন্তকারীরা জানান, শনিবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে গোপাল লোহার রড নিয়ে কাকার ঘরে ঢোকেন। একে একে তিন জনকেই মাথায় রড দিয়ে মেরে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেন। কেউ কোনও বাধা দেওয়ার সুযোগ পাননি। এর পরে গোপাল ঘরে ফিরে আসেন। রাতেই নিজের ছেলেকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পুলিশের দাবি, গোপালের স্ত্রী সব কথাই জানতেন। ফলে অপরাধের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

Advertisement

রবিবার গভীর রাতে তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে খুনের পিছনে মিত্র পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউই রয়েছেন তা নিয়ে তখনই সন্দেহ হয় বাগুইআটি থানার পুলিশের। পুলিশ জানায়, যে বাড়িটিতে জ্ঞানেন্দ্রনাথবাবুরা থাকতেন সেটি একেবারেই ছোট ও জরাজীর্ণ প্রকৃতির। ওই বাড়ির চত্বরেই গোপালদের দোতলা বাড়ি। বাড়ির চত্বর লাগোয়া একটি নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়িও রয়েছে। তা ছাড়াও বাড়িটির গা ঘেঁষে রয়েছে একাধিক বাড়ি। ফলে এত ঘিঞ্জি জায়গায় এক সঙ্গে তিন জনকে খুন করা হল অথচ কেউ তা টের পেলেন না কেন, তা প্রথম থেকেই আশ্চর্য ঠেকেছিল পুলিশের কাছে। ফলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ গোপাল-সহ আশপাশের বাড়ির সাত জনকে আটক করে।

তদন্তকারীরা জানান, মৃতদেহগুলিতে পচন ধরায় এটা বোঝা গিয়েছিল যে খুন অনেক আগে করা হয়েছে। দু’টি পরিবারের বাড়ি এতটাই গা ঘেঁষে যে পচা গন্ধ তাঁদের নাকে লাগবেই। তা সত্ত্বেও গোপালদের পরিবারের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া দু’টি পরিবারের মধ্যেই মামলা-মোকদ্দমা চলছিল। ফলে তাঁদের মধ্যে গোলমাল যে রয়েছে তা নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত ছিল। পাশাপাশি এ দিন যখন পুলিশ কুকুর ঘটনাস্থলে আসে, সে ওই দু’টি বাড়ি ও আশপাশেই ঘুরপাক খেতে থাকে। কুকুরের গতিবিধি দেখে পুলিশ আরও নিশ্চিত হয় যে খুনির ঠিকানা মিত্র পরিবারের বাড়ির আশপাশেই। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘রাতেই গোপালের কথায় অসঙ্গতি প্রকাশ পেয়েছিল। তাঁকে জেরা করতেই তিনি সব স্বীকার করতে বাধ্য হন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন