গান ছেড়ে ফের অপরাধে প্রৌঢ়

দস্যু রত্নাকর ছ’হাজার বছর সাধনা করে কবিত্ব শক্তি পেয়ে বাল্মীকি হন। কখনও পুরনো জীবনে ফেরেননি। সম্পত বৈদ্য ৩৪ বছরে ছিনতাই ছেড়ে ভক্তিগীতির দল গড়েছিলেন। তবে ৫৬ বছর বয়সে ফিরে আসেন অপরাধের পথে। সঙ্গে গানও অবশ্য চলছিল।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪৮
Share:

ধৃত: সম্পত বৈদ্য। নিজস্ব চিত্র

দস্যু রত্নাকর ছ’হাজার বছর সাধনা করে কবিত্ব শক্তি পেয়ে বাল্মীকি হন। কখনও পুরনো জীবনে ফেরেননি।

Advertisement

সম্পত বৈদ্য ৩৪ বছরে ছিনতাই ছেড়ে ভক্তিগীতির দল গড়েছিলেন। তবে ৫৬ বছর বয়সে ফিরে আসেন অপরাধের পথে। সঙ্গে গানও অবশ্য চলছিল।

হাওড়ার পিলখানার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে মহাত্মা গাঁধী রোড ও কলাকার স্ট্রিটের মোড় থেকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে বড়বাজার থানার পুলিশ। পাঁচ-সাত-আট, বড়জোর ১০ বছর পর অপরাধ জগতে প্রত্যাবর্তনের নজির আছে। তা বলে প্রায় দু’যুগ চুপচাপ থাকার পর ফের অপরাধ করা? অনেক ভেবেও আর কাউকে মনে করতে পারছেন না লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দারা। তা ছাড়া, পঞ্চাশ পেরনো মানে এই ধরনের অপরাধ জগতে অবসরের সময়। এখানেও ব্যতিক্রম সম্পত। ন’বছরের এক কন্যা সন্তানের বাবা সম্পতের বয়স এখন ৫৮ বছর।

Advertisement

বড়বাজার থানার পুলিশ জেনেছে, সম্পত ১৯৯৩ পর্যন্ত বছর চার-পাঁচেক এই ‘কাজ’ করেন। তার পর ধরা পড়ে কিছু দিন জেলও খাটেন। ছাড়া পেয়ে আর ওই পথ মাড়াননি। পরবর্তী ২২ বছর শুধু বিভিন্ন বেসরকারি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে টাকা রোজগার। তাল কাটল ২০১৫-র শেষ থেকে।

অফিসের ব্যস্ত সময়ে ব্রেবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বা ধীরে চলা গাড়িতে বসা কোনও মহিলার গলা থেকে হার ছিনিয়ে নেওয়ার নিখুঁত ‘অপারেশন’ ফের শুরু হল। পলকে হার ছিনিয়ে সেই গাড়ির অভিমুখের উল্টো দিকে জোরে হেঁটে আচমকা কোনও গলিতে ঢুকে পড়া। কিন্তু বড়বাজার থানার পুলিশ গলিতে সিসি ক্যামেরা লাগাবে, সেটা তিনি বুঝতে পারেননি। ওই ক্যামেরায় ধরা ছবি থেকেই সম্পতকে চিনে মঙ্গলবার তাঁকে ধরে পুলিশ।

সম্পত পুলিশকে জানিয়েছেন, শুধু গান গেয়ে আড়াই হাজার টাকা ঘরভাড়া, মেয়ের পড়া, সংসারের অন্য খরচ জোগানো এমনিতেই মুশকিল। কিন্তু দু’বছর আগে শেয়ার বাজারে লক্ষাধিক টাকা লোকসান হলে সংসার চালানো এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন তাঁর ফের ‘পুরনো কাজ’ শুরুর কথা মনে হয়। গত দেড় বছরে তাঁর এমন কাজের সংখ্যা, পুলিশের হিসেব মতো পাঁচটি।

তা হলে কি অপরাধ জগতের কারও কারও সংশোধন সত্যিই সম্ভব নয়? এক অভিজ্ঞ পুলিশকর্তার মতে, ‘‘সংশোধনাগারে রেখে দীর্ঘ সময় পর অপরাধী পুরোদস্তুর বদলে যাবে, এই ধারণাই কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাল সম্পত বৈদ্যের ঘটনা।’’ তবে একমত নন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অনিন্দিতা চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘বাস্তব জীবনের কোন বাধ্যবাধকতা ও চাপ থেকে, কোন ঘাটতি পূরণের তাগিদ থেকে ওই ব্যক্তি অপরাধের পথে ফিরে গেলেন, সেটা দেখা দরকার।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পরিবারকে উন্নত মানের জীবনযাত্রা দেওয়ার কী চাপ ছিল?’’

এক তদন্তকারী অফিসার বলছেন, ‘‘সম্পত বৈদ্য আসলে অভাবে ফের স্বভাব নষ্ট হওয়ার উদাহরণ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement