Health

স্বরতন্ত্রীর সমস্যা সমাধানে বসল পাত

চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যাকে ফাইব্রোসিস বলা হয়। এটি রেডিয়েশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর জেরেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে নীলকণ্ঠের।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ১০:৩০
Share:

সুন্নাপুর নীলকণ্ঠ রাও

স্বরতন্ত্রীর (ভোকাল কর্ড) ক্যানসার ধরা পড়েছিল আগেই। অস্ত্রোপচার ও রেডিয়েশনের পরে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আপাতত তিনি সুস্থ। কিন্তু বছর কয়েক পর থেকে অন্য সমস্যা দেখা দিল গার্ডেনরিচের বাসিন্দা, কাপড়ের ব্যবসায়ী বছর একান্নর সুন্নাপুর নীলকণ্ঠ রাওয়ের। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সমস্যা।

Advertisement

ওই সমস্যার জেরে কথা বলা, সামান্য পরিশ্রম করাও নীলকণ্ঠের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর হাঁটাচলা। এমনকি, কথা বলার ধরনও কিছুটা বদলে গিয়েছিল। মুখ থেকে বেরোনো শব্দের সঙ্গে হাওয়া মিশে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তাঁর কথা। নীলকণ্ঠের পরিবার চিন্তিত হয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর স্বরযন্ত্রের (ল্যারিংস) স্বরতন্ত্রী দু’টি সেঁটে গিয়ে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যাকে ফাইব্রোসিস বলা হয়। এটি রেডিয়েশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর জেরেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে নীলকণ্ঠের।

গত বছর তাঁর স্বরতন্ত্রীর সেঁটে যাওয়া অংশ স্বাভাবিক করতে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেন হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার শল্য চিকিৎসক সুকৃত বসু। কয়েক মাস পরে ফের সমস্যা দেখা দেয় নীলকণ্ঠের। ওই সমস্যা বারবার ফিরে আসা ঠেকাতে সম্প্রতি ফের একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। সিলাস্টিক (সিলিকন এবং প্লাস্টিকের মিশ্রণে তৈরি পদার্থ) পাতের ব্যবহার করেন চিকিৎসক। সেঁটে যাওয়া স্বরতন্ত্রী আলাদা করার পরে দু’টি তন্ত্রীর মধ্যে ওই পাত সেলাই করে বসানো হয়েছে। সেটির সুতো টেনে চামড়ার বাইরে গলার কাছে রাখা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। সুকৃত বসুর কথায়, “অস্ত্রোপচারের পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে ফাইব্রোসিস হতে পারে। তাই ছ’সপ্তাহ পরে পাত খোলা হবে। রোগী আস্তে আস্তে উন্নতি করছেন।”

Advertisement

ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সমস্যা রোগীর জীবনযাত্রার মান নষ্ট করে দেয়। তবে এখনও ক্যানসার ফিরে আসেনি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেটি এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক। তা সত্ত্বেও ফাইব্রোসিস গঠন সাধারণ ঘটনা নয়। বারবার এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। কার্বন ডাই অক্সাইড লেজ়ার করে ফাইব্রোসিস বাদ দেওয়া বা সিলাস্টিক কিট ব্যবহার ছাড়া উপায় নেই। তবে তিন মাস অন্তর ফাইবার অপটিক ল্যারিঙ্গোস্কোপি (এন্ডোস্কোপির মতোই) করে ছবি তুলে স্বরযন্ত্রের অবস্থা দেখা জরুরি।”

নীলকণ্ঠের পরিবার অবশ্য পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না। তাঁর ভাই কেশব রাও বলছেন, “গত কয়েক বছর ধরে বারবার অস্ত্রোপচার হওয়ায় মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন দাদা। ডাক্তারবাবুরা চেষ্টা করছেন। আমরাও আশা করছি, এ বার অন্তত সমস্যাটা যেন ঠেকানো যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন