সলিলসমাধি: জলে ডুবে গিয়েছে নৌকা। সোমবার, পাটুলির ভাসমান বাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ।
বছর দেড়েকেই নড়বড়ে হাল পাটুলির ভাসমান বাজারের বহু নৌকার। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েকটির অবস্থা এমনই যে, নৌকায় জল ঢুকে তা ডুবে রয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বলাগড় থেকে মিস্ত্রি আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ। নৌকাগুলির কোথায় কী গলদ রয়েছে, তাঁরা তা চিহ্নিত করে সারানোর সুপারিশ করলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এখন লোকসভা নির্বাচনের জন্য গোটা কাজটি সারতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নৌকাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সে কারণেই এমন হাল। নৌকা তৈরিতে পারদর্শী হুগলি জেলার কারিগর ও বিশারদদের এনে তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে। তার পরে, সরকারি নিয়ম মেনে দরপত্র করে ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে নৌকাগুলি সারানো হবে। কিন্তু এক বছর আগে এই নৌকাগুলি তৈরির সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি ভাবা হয়নি কেন? তা হলে কি এই কাজে কোনও গাফিলতি ছিল? কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। তাঁদের ব্যাখ্যা, ভাসমান বাজারে নৌকা তৈরির সময়েও যে সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেখানেও বলাগড়ের বেশ কয়েক জন নৌকার কারিগর ছিলেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে তাঁরা কোনও নির্দেশিকা দিয়েছিলেন কি না, তা কর্তৃপক্ষের জানা নেই। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, এই রাজ্যে বলাগড়ে নৌকা তৈরি হওয়ার ফলে ওখানেই ভাল কারিগরেরা রয়েছেন। তাই ফের তাঁদেরকেই দেখানো হবে নৌকাগুলি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মতামত নেওয়া হবে তাঁদের থেকেই।
সোমবার পাটুলির ভাসমান বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে একটি নৌকা পুরো ডুবে গিয়েছে। আর একটি আধডোবা। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন আগে ফল ভর্তি একটি নৌকাও জলে ডুবে গিয়েছিল। সেই নৌকাটি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে তুলে নেওয়া গিয়েছে। তবে নৌকা ডুবে হাতহতের কোনও খবর নেই সেখানে। ওই বাজারের এক আনাজ বিক্রেতা শেখ মর্জিনা বলেন, ‘‘এখানকার সাত-আটটি নৌকার অবস্থা খুবই খারাপ। চারটি নৌকা ডুবে গিয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি তোলা গিয়েছে। তবে ঠিক মতো মেরামতি না করলে অন্যান্য নৌকাগুলিও ডুবে যেতে পারে।’’ এই বাজারের বিক্রেতাদের একাংশও নৌকাগুলির মেরামতি এবং স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেক বার জানিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। শুধু যে নৌকা রক্ষণাবেক্ষণেই সমস্যা হচ্ছে এমন নয়, পরিকাঠামোজনিত আরও কিছু সমস্যা মাথা চাড়া দিয়েছে পাটুলির ভাসমান বাজারে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাজারটিতে কোনও ছাউনি না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই অসুবিধা হয়। ভাসমান বাজারের ধারণাটি এই শহরে আদৌ কতটা মানানসই, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলেই বক্তব্য বাসিন্দাদের একাংশের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেএমডিএ সূত্রের খবর, পাটুলির এই জলাশয়ে ভাসমান বাজারের প্রকল্পটি অভিনব হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই সমস্যা হচ্ছে। প্রায় ৪০টি ভাসমান নৌকা নিয়ে প্রকল্পটি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। বছর খানেক আগে বাজারটি উদ্বোধন হয়। সেই সময়ে সিদ্ধান্ত হয়, বাজারের মাথায় কোনও ছাউনি থাকবে না। কারণ, ছাউনি দিলে বাজারের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। বিক্রেতাদের কথা ভেবেই এ বার এই বাজারের জন্য নতুন নকশা তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এগুলি যখন তৈরি করা হয়েছিল, তখন ওখানকার হকারদেরই বলা হয়েছিল নৌকাগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করতে। তা তাঁরা করেননি। তার ফলেই এই অবস্থা।’’