Coronavirus

বারণ নেই, বহু আবাসনে তবু ঢুকতে বাধা গৃহকর্মীদের

বহু বিপন্ন পরিচারিকা শহরতলির ভাড়াবাড়ি ছেড়ে জেলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। 

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৬:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি

কন্টেনমেন্ট জ়োন ছাড়া বাকি এলাকায় পরিচারিকাদের কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু অভিযোগ, বাসিন্দারা চাইলেও আবাসিক পরিচালন সমিতির বাধায় পরিচারিকারা শহরের একাধিক আবাসনে ঢুকতে পারছেন না। বহু বিপন্ন পরিচারিকা শহরতলির ভাড়াবাড়ি ছেড়ে জেলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ গৃহপরিচারিকা সমিতির সম্পাদক মিঠু সাহার অভিযোগ, ‘‘কলকাতায় প্রায় দু’লক্ষ পরিচারিকা রয়েছেন। দীর্ঘ আড়াই মাসের লকডাউন পর্বে তাঁদের অনেকেই বেতন পাচ্ছেন না। অনেকে আবাসনে কাজ করতে চাইলেও তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শহরে কাজ করা প্রায় ৪০০ পরিচারিকা শহরতলির ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দুই ২৪ পরগনার গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।’’ সল্টলেকের এজে ব্লকের একটি আবাসনে পরিচারিকাদের ঢুকতে না দেওয়ায় সেখানকার এক বাসিন্দা বিধাননগর (পূর্ব) থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগকারিণী পারমিতা সাহা চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘আমরা পরিচারিকাদের উপরে নির্ভরশীল। আমি নিজে অসুস্থ। সরকার ছাড় দিলেও আবাসন কমিটির সিদ্ধান্তের জেরে পরিচারিকা কাজে আসতে পারছেন না।’’

ওই আবাসনেই একা থাকেন আশি বছরের বৃদ্ধা লক্ষ্মী মিত্র। তাঁর কথায়, ‘‘এই বয়সে টানা দু’মাসের বেশি বাড়ির কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার পরিচারিকাকে অবিলম্বে ঢুকতে দিলে ভাল হয়।’’ ওই আবাসনের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান সমরেন্দ্রনাথ পালিত বলেন, ‘‘করোনা থেকে বাঁচতে আবাসিকদের মতামত নিয়েই এখন কোনও পরিচারিকাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’’

Advertisement

গড়িয়াহাটের একটি আবাসনেও পরিচারিকাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সেখানে সম্প্রতি আবাসিকদের একটি বৈঠক হয়। ওই আবাসন কমিটির সম্পাদক অমিত বসু বলেন, ‘‘এখানে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বেশির ভাগ আবাসিক পরিচারিকাদের ঢুকতে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারও নিয়ম শিথিল করেছে। ফলে আমরা এ বার শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেব। তবে তার যাবতীয় দায় আবাসিকদের নিতে হবে। লিখিত ফর্মে সকলকে সইসাবুদ করতে হবে।’’ সাউথ সিটি আবাসনের সাধারণ সম্পাদক এম ভি বিজু বলেন, ‘‘করোনার জন্য পরিচারিকাদের পাশাপাশি আবাসিকেরাও দুর্ভোগের শিকার। এখানে অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একা থাকেন। তাঁদের কথা ভেবে আমরা দিন দুয়েক আগে থেকে পরিচারিকাদের ঢুকতে দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, আলাদা লিফট রাখা হয়েছে পরিচারিকাদের জন্য। এ ছাড়া মাস্ক পরা ও আবাসনের বাইরের বেসিনে হাত ধুয়ে আসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ম্যাডক্স স্কোয়ারের একটি আবাসনের বাসিন্দা জিনিয়া দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের মতোই পরিচারিকাদের অবস্থা। অথচ ওঁদের উপরে ভর করেই আমরা বেঁচে আছি। কত দিন এই ভাবে ওঁদের আটকে রাখব? এই বিভাজন একেবারেই অনুচিত। তাই আমাদের আবাসনে পরিচারিকাদের সম্প্রতি ঢুকতে দিচ্ছি।’’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘লকডাউন মানুষের চরিত্রের মুখোশ খুলে দিচ্ছে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির একাংশ নিজেদের সমাজবিচ্ছিন্ন ভাবেন। নিজেদের সর্বদাই নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেন তাঁরা। আবার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উচ্চবিত্তদের মধ্যে বেশির ভাগই এই সময়ে তাঁদের পরিচারিকাদের বেতন দেননি। এর জন্য চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পরিচারিকারা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন