‘ভগবানের বর’ চেয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে বহু গাছ

শুধু পড়শি জেলা নয়, কলকাতা শহরেও এমন কাণ্ড হচ্ছে। প্রথমে গাছের গায়ে লাল-হলুদ সুতো বেঁধে রাতারাতি তার গোড়ায় মন্দির তৈরি হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৭
Share:

পুজো: এ ভাবেই বাঁধনের জন্য দেগঙ্গার চাকলায় মারা যাচ্ছে বহু গাছ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

বিশ্বাস, ‘ভগবানকে বেঁধে রাখতে পারলে’ নাকি মনস্কামনা পূর্ণ হয়। সেই প্রত্যাশায় ভগবানকে সরাসরি বাঁধতে না পারলেও বাঁধা পড়ে গাছ। মন্দির চত্বরের সমস্ত গাছে ‘মানত’ করে আষ্টেপৃষ্ঠে দড়ি বেঁধে ইট ঝুলিয়ে দেন পুণ্যার্থীরা। গোটা গাছের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা জুড়ে এমনই চিত্র দেখা যাবে দেগঙ্গার চাকলার লোকনাথ ধামে। এর ফলে কিছু গাছ যাচ্ছে শুকিয়ে, মরেও যাচ্ছে বেশ কিছু গাছ। যা দেখে বৃক্ষপ্রেমী থেকে শুরু করে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষজন বলছেন, এমনই সব সংস্কারের জন্য প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে সবুজ।

Advertisement

শুধু পড়শি জেলা নয়, কলকাতা শহরেও এমন কাণ্ড হচ্ছে। প্রথমে গাছের গায়ে লাল-হলুদ সুতো বেঁধে রাতারাতি তার গোড়ায় মন্দির তৈরি হয়ে যাচ্ছে। মন্দির তৈরির দু’বছরের মধ্যে আলিপুরে মরে গিয়েছে একটি বড় গাছ। সে কথা জানিয়ে পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলেন, ‘‘গাছের শাখা-প্রশাখা বেঁধে, মন্দির বানিয়ে গোড়া বন্ধ করে দিলে সেই গাছ কি কখনও বাঁচে? কিন্তু এ সব সংস্কার এখনও চলে আসছে।’’

গাছের গায়ে পেরেক পুঁতে হরেক কিসিমের বিজ্ঞাপন ঝোলানো, গোড়ায় গরম জল বা চা-পাতা ফেলা নিয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু গাছকে জড়িয়ে, ইট ঝুলিয়ে মনস্কামনার আচার বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেগঙ্গার চাকলার লোকনাথ মন্দিরে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। বিগ্রহে জল ঢালার পাশাপাশি মন্দির চত্বরে থাকা গাছের শাখা-প্রশাখায় মানত করে সুতলি, দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ছোট-বড় ইটের টুকরো। রেহাই পায়নি বড় গাছের পাশাপাশি পাতাবাহার, এমনকি গুল্মও। পাতা-সমেত কোনও গাছের ডালে প্লাস্টিক জড়িয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ইটের টুকরোও।

Advertisement

ওই ধাম সংলগ্ল বেড়াচাঁপা হাইস্কুলের জীববিদ্যার শিক্ষক সুকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ভাবে এত গাছকে মুড়িয়ে, বেঁধে রাখায় সেগুলির কোষ এবং কলার ক্ষতি হয়। জল, সূর্যালোক, বাতাসের অভাবে সালোকসংশ্লেষ বাধা পায়। শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে, দুর্বল হয়ে মারা যায় গাছ।’’

এই আচার বন্ধ করতে কোনও ব্যবস্থার কথা কি ভাবছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ? চাকলা মন্দির কমিটির সম্পাদক মানিক হাজরা বলেন, ‘‘সেই সময়ে দলে দলে আসা ভক্তের বিশ্বাসে আমরা বাধা দিতে পারিনি। তবে উৎসব শেষ হতেই সব গাছের বাঁধন খুলে সেগুলিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

এ ব্যাপারে ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চ’-এর রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘গোটা দেশের মন্দির ও তীর্থস্থানে এই চিত্র দেখা যাবে। আসলে সচেতনতার অভাব ও দুর্বলতা থেকে এমন বিশ্বাস জন্মায়। ফলে গাছের যে কষ্ট হচ্ছে বা গাছটা যে মরেও যেতে পারে, সে কথা মাথায় থাকে না। বিজ্ঞানচেতনার মাধ্যমে এই ধরনের কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন