Bengali New Year

Bengali New Year 2022: চেনা ভিড় কই, চড়া দামে হাত পুড়ছে হালখাতা-বাজারের

গত দু’বছরের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। আসন্ন পয়লা বৈশাখে দোকান খোলা থাকবে। হবে পুজো, ক্যালেন্ডার বিতরণ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৬
Share:

বৈঠকখানা বাজারে চলছে হালখাতা তৈরির কাজ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

গত দু’বছরের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। আসন্ন পয়লা বৈশাখে দোকান খোলা থাকবে। হবে পুজো, ক্যালেন্ডার বিতরণ। থাকছে হালখাতার উদ্‌যাপনও। কিন্তু বিভিন্ন জিনিসের চড়া মূল্যবৃদ্ধির ছেঁকায় কোথাও যেন সুর কেটে গিয়েছে। বৈঠকখানা রোডের হালখাতার বাজারই হোক অথবা বড়বাজারের সৈয়দ সালি লেনে ক্যালেন্ডার পট্টি— নববর্ষের আগে চেনা ব্যস্ততা অনেকটাই উধাও ওই দুই এলাকায়।

Advertisement

বৈঠকখানা রোডে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হালখাতার ব্যবসা করছেন রফিক মোল্লা। তাঁর দোকানে দেখা গেল, ডাঁই হয়ে পড়ে আছে লাল রঙের মলাট দেওয়া খেরোর খাতা। রফিক জানালেন, এই খাতাগুলিকেই হালখাতা হিসাবে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বার তার চাহিদা কার্যত তলানিতে। তিনি বলেন, ‘‘গত দু’ বছর তো করোনা পরিস্থিতির জন্য নববর্ষে অধিকাংশ দোকানই খোলেনি। পুজোও হয়নি, দরকার পড়েনি হালখাতারও। এ বার অবস্থা অত খারাপ না হলেও জিনিসপত্রের আগুন দামের জন্য ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’ রফিক জানান, হালখাতার কাগজের দাম আগে যেখানে কেজি প্রতি ৬০ টাকা ছিল, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৮০-৯০ টাকা। একটু ভাল মানের কাগজের দাম আরও বেশি। এমনকি হালখাতার উপরে যে কাপড় দিয়ে বাঁধাই করা হয়, দাম বেড়েছে তারও।

বৈঠকখানা রোডের আর এক ব্যবসায়ী তরুণ সাহা বলেন, ‘‘দু’বছর পরে দোকান খুললেও দোকানিদের তো তেমন উপার্জন নেই। তাই অনেকেই চাইছেন একটু কম খরচে হালখাতা পালন করতে।’’ আবার কয়েক জন ব্যবসায়ীর মতে, অনেকে এখন হালখাতার বদলে কম্পিউটারে হিসেব রাখতে শুরু করেছেন। দোকানিরা জানালেন, প্রাক্–করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে নববর্ষর আগে দিনে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার মতো ব্যবসা হত, এ বার সেখানে বিক্রি অর্ধেকেরও কম।

Advertisement

বড়বাজারের সৈয়দ সালি লেন ক্যালেন্ডার পট্টি নামে পরিচিত। দোকানে দোকানে ঝুলছে নানা ধরনের ক্যালেন্ডার। রয়েছে টেবিল ক্যালেন্ডারও। কিন্তু ক্রেতার ভিড় কোথায়? এক ক্যালেন্ডার বিক্রেতা মলয় দাস জানালেন, ১২৮ জিএসএম-এর এক টন কাগজের দাম যেখানে ৭০ টাকার আশপাশে ছিল, সেই দাম পৌঁছেছে ১০৯ টাকায়। ফলে বেড়ে গিয়েছে ক্যালেন্ডার তৈরির খরচ। অনেক দোকানদার আগে যত ক্যালেন্ডারের বরাত দিতেন, এখন দিচ্ছেন তার অর্ধেক। মলয় বলেন, ‘‘শুধু কাগজই নয়, ক্যালেন্ডার তৈরির অন্যান্য উপকরণ যেমন বোর্ড, স্পাইরাল, ক্যালেন্ডার ঝোলানোর উপকরণ— দাম বেড়েছে সব কিছুরই। ক্যালেন্ডার ছাপাত, এমন অনেক ছাপাখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রায় সব জিনিসেরই বর্ধিত মূল্য দেখে ছাপাখানা খোলার সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। ফলে, ক্রেতারা যেমন ক্যালেন্ডার চাইছেন, তেমন পাচ্ছেন না।’’

পছন্দ মতো ক্যালেন্ডার মিলছে না বলেই জানালেন উল্টোডাঙার একটি সোনার দোকানের মালিক অরিন্দম পাল। তিনি বলেন, ‘‘কেমন ক্যালেন্ডার করতে চাই, তার জন্য অ্যালবামের ছবি দেখছিলাম। যে সব ছবি পছন্দ হল, তার মধ্যে একটি ছবি দিয়ে ক্যালেন্ডার হবে না বলে জানালেন দোকানদার।’’

ক্রেতাদের পছন্দ মতো ক্যালন্ডার তাঁরা যে সব সময়ে দিতে পারছেন না, তা মেনে নিয়েছেন কয়েক জন ক্যালেন্ডার বিক্রেতা। তাঁদের মতে, ক্যালেন্ডারের সেই চাহিদাও আগের মতো নেই। তাই বিভিন্ন বৈচিত্রের ক্যালেন্ডার ছাপা হচ্ছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বর্ধিত মূল্য।

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আগে পাইকারি হারে ক্যালেন্ডার কিনতে যেখানে প্রতি ক্যালেন্ডার ১০ টাকা করে পড়ত, এখন সেটা পড়ছে ১৩ টাকা। ফলে, চাহিদা কমেছে। বরং এর মধ্যেই ভরসা জোগাচ্ছে টেবিল ক্যালেন্ডার। তার দাম বাড়লেও চাহিদা তুলনায় ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন