সুষ্ঠু পরিষেবা দিয়ে পাশ করল মেট্রো

মেট্রো কর্তাদের অনুমান, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে শহরতলি থেকে যাঁরা এসেছিলেন কলকাতায়, তাঁদের সিংহভাগই এ দিন এসেছেন সড়কপথে। একটা অংশ মেট্রো চড়েছেন ঠিকই। কিন্তু সেটা আনন্দ-যাত্রা হিসেবে। সমাবেশ শুরুর আগের এক ঘণ্টা এবং শেষের এক-দেড় ঘণ্টা ট্রেনগুলিতে কিছুটা ভিড় হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০২:২০
Share:

ঘোরা: মেট্রো দেখতে পাতাল-প্রবেশ। শুক্রবার পার্ক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

ঝুড়ি করে টোকেন মজুত রাখা থেকে শুরু করে গোলমাল ঠেকাতে প্রতি স্টেশনে অতিরিক্ত আরপিএফ কর্মী— শুক্রবার ভোর থেকে সব কিছুই ছিল মেট্রোর স্টেশনগুলিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কিছুই কাজে লাগাতে হয়নি।

Advertisement

মেট্রো কর্তাদের অনুমান, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে শহরতলি থেকে যাঁরা এসেছিলেন কলকাতায়, তাঁদের সিংহভাগই এ দিন এসেছেন সড়কপথে। একটা অংশ মেট্রো চড়েছেন ঠিকই। কিন্তু সেটা আনন্দ-যাত্রা হিসেবে। সমাবেশ শুরুর আগের এক ঘণ্টা এবং শেষের এক-দেড় ঘণ্টা ট্রেনগুলিতে কিছুটা ভিড় হয়েছে। এমন দিনেও মেট্রোতে শান্তিতে ওঠা-নামা করতে পেরে রীতিমতো বিস্মিত নিত্যযাত্রীদের একাংশ। দমদম থেকে সেন্ট্রাল পর্যন্ত এসে এক মহিলাকে তো বলতে শোনা গেল, ‘‘আজ এত ভাল ভাবে মেট্রো থেকে নামতে পারলাম যে বলার নয়। রোজ যদি এমনটা হতো!’’

বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের অনুষ্ঠানে ভিড়ের কথা মাথায় রেখে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এ দিন আগে থেকেই প্রচুর ব্যবস্থা রেখেছিলেন। ভোর থেকে যে সব স্টেশনগুলিতে ভিড় হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল, সে সব স্টেশনে মজুত ছিল স্বাভাবিক দিনের চেয়ে প্রায় চার গুণ অতিরিক্ত টোকেন। যাতে টোকেনের অভাবে কাউকে অসুবিধায় পড়তে না হয়। টোকেন
চুরি ঠেকাতে অতিরিক্ত কর্মী রাখা হয়েছিল স্মার্ট গেটে। তাঁরা যাত্রীদের থেকে হাতে হাতে টোকেন ফেরত নিয়েছেন। ফলে অতিরিক্ত টোকেন মজুত রাখার ব্যবস্থা শুধু ব্যবস্থা হিসেবেই থেকে গিয়েছে।

Advertisement

স্মার্ট গেটে কর্মীদের রেখে উপকারও হয়েছে। ফি বছর ধর্মতলার সভায় আসেন মুর্শিদাবাদের হরিদেবপুর গ্রামের দিলীপ রায় ও তাঁর স্ত্রী। কিন্তু মেট্রোয় চড়া হয় না। এ বার তাই ঠিক করেছিলেন, পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মেট্রো চেপে ধর্মতলা যাবেন। সেই মতো দমদমে টিকিট কাউন্টার থেকে টোকেন কাটেন তাঁরা। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পরেই ঘটল বিপত্তি। সঙ্গীরা বলেছিলেন, গিরিশ পার্কে নামতে হবে। সেখান থেকে একটা ব়়ড় মিছিলের সঙ্গে যোগ দিয়ে যাওয়া হবে ধর্মতলায়। কথা মতো রায় দম্পতি নামলেন গিরিশ পার্কে। কিন্তু স্মার্ট গেটের সামনে তাঁদের টোকেনটি হারিয়ে যায়। ঘাব়ড়ে গিয়ে গেটের এক পাশে বসে পড়েন দিলীপবাবুরা। প্রৌঢ় ওই দম্পতিকে স্টেশনে ও ভাবে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন মেট্রোর কর্মীরা। তাঁদের আশ্বস্ত করলেন, ‘টোকেন পাওয়া না গেলেও বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ শেষ পর্যন্ত অবশ্য পাওয়া গেল টোকেন।

একই ভাবে স্টেশনগুলিতে আঁটোসাঁটো প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে কোনও গোলমাল না হয়। কিন্তু সারা দিনে কোথাও এমন কিছু ঘটেনি, যাতে পুলিশকর্মীদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। অফিসের ব্যস্ত সময়ে পুলিশকর্মীরাই ট্রেনে ওঠা-নামার ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন। বিশেষত লক্ষ্য রাখা হয়েছিল যাতে দরজা বন্ধ করতে সমস্যা না হয়। এ ছাড়া প্রতি স্টেশনে মেট্রোর দু’জন অফিসারকেও রাখা হয়েছিল নজরদারির জন্য। ভোর থেকে সচল ছিল কন্ট্রোল রুমও। পাশাপাশি, এ দিন অধিকাংশ স্কুল-কলেজ ছুটি থাকায় এমনিতেই ট্রেনে ভিড় ছিল কম।

মেট্রো সূত্রের খবর, এখন দিনে অন্তত সাড়ে ছ’লক্ষ যাত্রী মেট্রোতে যাতায়াত করেন। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মেট্রো চড়েছেন সাড়ে চার লক্ষের মতো যাত্রী। ফলে মেট্রো কর্তাদের আশঙ্কা, রাত পর্যন্ত মেট্রোর যাত্রী সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে।

তবে ভিড় হোক বা না-ই হোক, এ দিন কথা রেখেছে মেট্রো। অফিস যাত্রী থেকে স্কুল ফেরত পড়ুয়া—সকলের যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে তারা। যথেষ্ট সংখ্যক ট্রেন, সঙ্গে সুষ্ঠু পরিষেবা। দুইয়ে মিলে যাত্রীরা এ দিন কম-বেশি খুশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন