ভোগান্তি: দুর্ঘটনার পরে দমদম স্টেশনে বিভ্রান্ত যাত্রীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
গত সপ্তাহে সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেনে আগুন।
নতুন বছরের প্রথম দিনে থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভ্রাট।
সব শেষে লাইনে ঝাঁপ এবং ওই দিনেই দরজায় গোলযোগ।
ছন্নছাড়া দশা যেন আর কাটছে না কলকাতা মেট্রোর। এক বিপত্তি সামলে উঠতে না উঠতেই আর এক বিপত্তির জেরে কার্যত লেজেগোবরে অবস্থা হচ্ছে কর্তাদের। একের পর এক ঘটনায় যাত্রী-হয়রানি বেড়ে চললেও সমস্যা সমাধানে কোনও পদক্ষেপ করাতেই যেন গা নেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের। এমনই অভিযোগ তুলছেন অধিকাংশ যাত্রী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সদনে থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় প্রায় ২৫ মিনিট বন্ধ ছিল মেট্রো। বুধবার ফের অফিসের ব্যস্ত সময়ে একাধিক কারণে বিপর্যস্ত হল পরিষেবা। উত্তর এবং দক্ষিণে জোড়া বিভ্রাটে সব মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা মেট্রো চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
এ দিন প্রথম ঘটনাটি ঘটে সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ দমদম স্টেশনে। নোয়াপাড়া থেকে আসা একটি নন এসি রেকের সামনে ঝাঁপ দেন বছর সাতচল্লিশের এক ব্যক্তি। সেই ভোগান্তি পুরো না মিটতেই সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কবি নজরুল স্টেশনে দমদমগামী একটি এসি রেকের সব দরজা আটকে যায়। আধ ঘণ্টাতেও সমস্যা না মেটায় মোটরম্যানের কামরা দিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে আনা হয়। এর জেরে আপ লাইনে দীর্ঘক্ষণ ব্যাহত হয় পরিষেবা। অভিযোগ, দমদমের ঘটনার জেরে বাকি মেট্রো-পথে সময় মতো ট্রেন চলাচল শুরু করা যায়নি। ফলে স্কুল-কলেজ-অফিসযাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
কী ঘটেছিল দমদমে? মেট্রো সূত্রের খবর, ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্মে আচমকা ওই যাত্রীকে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে দেখে অন্যেরা হকচকিয়ে যান। ট্রেনের নীচে কোথায় তাঁর দেহ পড়ে আছে, বহু চেষ্টা করেও মেট্রোকর্মীরা প্রথমে বুঝতে পারেননি। শেষে থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে লাইনে নেমে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। পরে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে পিছিয়ে আনতে হয় ট্রেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই ব্যক্তি প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে ছিলেন। নোয়াপাড়া থেকে আসা ট্রেন ঢুকতেই ঝাঁপ দেন তিনি। চালক সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষলেও প্রায় তিনটি কামরা ওই ব্যক্তির দেহের উপর দিয়ে চলে যায়। ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর মাথা ও শরীরের অন্য অংশে। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই ব্যক্তিকে আর জি করে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় ব্যবসায়ী তারক আচার্য নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি নাগেরবাজারে। দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে তিনি সম্ভবত অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর পকেট থেকে একটি ইলেকট্রিক বিল এবং ফোন নম্বর লেখা কাগজ উদ্ধার হয়েছে।
এই বিপত্তির জেরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রথমে গিরিশ পার্ক এবং পরে সেন্ট্রাল থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ট্রেন চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দু’জায়গাতেই পয়েন্ট ঠিক মতো সেট করতে না পারায় ট্রেন চালানো যায়নি। পরে ময়দান থেকে একটি ট্রেন চালানো হয় বলে খবর। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ ফের মেট্রো চলাচল শুরু হয়।
কিন্তু আধ ঘণ্টা পরেই কবি নজরুল স্টেশনে দেখা দেয় আর এক সমস্যা। দরজা নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার ‘ডোর কন্ট্রোল রিলে’ কাজ না করায় একটি এসি রেকের কোনও দরজা খোলা যায়নি। ফলে বেশ কিছু ক্ষণ উঠতে বা নামতে পারেননি কোনও যাত্রী। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে সামনে এবং পিছনের দিকে মোটরম্যানের কামরা এবং পাশাপাশি তিনটি কামরার দরজা খুলে যাত্রীদের নেমে আসতে বলা হয়। প্রথমে যাত্রীরা নামতে চাননি বলে জানান মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে মেট্রোর আধিকারিকেরা অনুরোধ করে তাঁদের নামিয়ে আনেন। খালি রেকটি টালিগঞ্জে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়।
এই জোড়া বিভ্রাটে নাভিশ্বাস ওঠে যাত্রীদের। মেট্রো না পেয়ে অনেকেই বাস বা ক্যাব ধরতে ছোটেন। বেহালার বাসিন্দা অনুপম রক্ষিত বলেন, ‘‘সকালে জরুরি কাজে পার্ক স্ট্রিটে একটি কর্পোরেট সংস্থার অফিসে যাওয়ার ছিল। কিন্তু প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করেও মেট্রো পাইনি।’’