সরপুরিয়া–সরভাজা খেতে কৃষ্ণনগর যেতে হবে না। সীতাভোগ, মিহিদানার জন্য বর্ধমান ছোটার দরকার নেই। এ বার কলকাতায় বসেই মিলবে রাজ্যের নানা প্রান্তের বিখ্যাত সব মিষ্টি। আন্তর্জাতিক মানের একটি মিষ্টি হাব গড়ে তোলার জোর পরিকল্পনা চলছে। উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
শুধু বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত মিষ্টি নয়, নিউ টাউনে সেই মিষ্টি হাব-এ পাওয়া যাবে কলকাতার নমা করা সব দোকানের বিশেষ বিশেষ সৃষ্টিও। কে সি দাশের রসগোল্লা, বলরামের জলভরা তালশাঁস থেকে ভীম নাগ, গাঙ্গুরাম, বাঞ্ছারামের সন্দেশ, সবই রয়েছে সেই তালিকায়। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায়, বাংলার এই সব বিখ্যাত মিষ্টি অনেকেই বিদেশে বা অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু ঠিকঠাক জোগানের অভাবে তা হয়ে ওঠে না। এ সব ভেবেই বিমানবন্দরের খুব কাছে, ইকো পার্কে মিষ্টি হাব গড়ে তুলছে হিডকো। আগামী বছরেই ওই হাব চালু হয়ে যাবে বলে জানান হিডকোর চেয়ারম্যান তথা নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন।
বাংলার দই, মিষ্টির সুনাম দেশ-বিদেশে। সরকারের অতিথি হয়ে আসা বিদেশি পর্যটকেরাও তা চেখে অভিভূত। হিডকো সূত্রের খবর, নানা অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের কাছ থেকে তেমনই ধারণা পেয়েছেন আয়োজকেরা। এ ছাড়া গত কয়েক দশক ধরে কলকাতা সফরে আসা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, আমলা এমনকী, একাধিক রাষ্ট্রপতি দফতর থেকেও বাংলার মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বাম আমলে বর্ধমানকে স্বাক্ষর জেলা হিসেবে ঘোষণার পরে নয়াদিল্লি ফেরার পথে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা সীতাভোগ-মিহিদানা কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। এমন উদাহরণ আরও অনেক আছে বলে জানান নবান্নের এক কর্তা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাইরে গেলে বাংলার মিষ্টি উপহার দিয়ে থাকেন। তাঁর ইচ্ছেতেই এ বার বিমানবন্দরের কাছে ইকো পার্কে এই হাব তৈরির পরিকল্পনা করে হিডকো। দেবাশিসবাবু জানান, ইতিমধ্যেই শহরের নামী মিষ্টি প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ে একটি সভা হয়েছে। অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগে বেজায় খুশি। হাব তৈরির বিষয়ে দরপত্র ডাকার কাজ হয়ে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে ইকো পার্কের তিন নম্বর গেটের কাছে বিমানবন্দরগামী রাস্তার উপরেই ওই হাব তৈরি হবে। মিষ্টি কেনার সময়ে যাতে ক্রেতাদের কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য পার্কিং ব্যবস্থাও থাকছে।
কতক্ষণ খোলা থাকবে এই হাব?
দেবাশিসবাবু জানান, বিদেশের বেশির ভাগ বিমানই রাতে ছাড়ে। সে কথা মাথায় রেখে মিষ্টি হাবও ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। যে কোনও সময়ে মিষ্টি কিনতে পারবেন ক্রেতারা। মিষ্টি ভাল ভাবে রাখার জন্য প্রত্যেক দোকানে বিশেষ বন্দোবস্ত থাকবে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে হাব-এ থাকবে কিছু মিষ্টির ইতিহাসও। হিডকোর ওই কর্তা জানান, বিক্রেতারা যে দোকান থেকেই মিষ্টি কিনুন না কেন, ব্র্যান্ড প্যাকেজের পাশাপাশি বাংলার মিষ্টি হাব নামাঙ্কিত ব্যাগে তা সরবরাহ করা হবে। বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি মিষ্টি এ ভাবেই আন্তর্জাতিক মানের আদর পাবে আপন রাজ্যে।