Bidhannagar Police Contact Numbers

বিধাননগরের ১৪টি থানার সব মোবাইল নম্বরই ‘গলত হ্যায়’! দুর্গাপুরকাণ্ডের আবহে ফোন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম

দুর্গাপুরের মতো ঘটনা ঘটলে তড়িঘড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট নির্যাতিতা? পরীক্ষামূলক ভাবে কলকাতার লাগোয়া উপনগরী বিধাননগরকে বেছে নিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। যেখানে চাকরিসূত্রেও অনেক মহিলা নিত্য যাতায়াত করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:১১
Share:

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে দেওয়া এই নম্বরগুলিতেই ফোন করা হয়েছিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

‘ডায়াল কিয়া গয়া নম্বর গলত হ্যায়, কৃপয়া সহি নম্বর ডায়াল করে’ (যে নম্বরটি ডায়াল করা হয়েছে, সেটি ভুল। দয়া করে সঠিক নম্বর ডায়াল করুন)!

Advertisement

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীন ১৫টি থানার মধ্যে ১৪টিতেই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে গিয়ে এমন হোঁচট খেতে হল! প্রতি ক্ষেত্রে ফোনের ও পার থেকে ভেসে আসছে একই সুর— নম্বর ভুল। সবচেয়ে দুরবস্থা বিধাননগরের মহিলা থানাটির। সেখানে যোগাযোগের জন্য কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে কোনও ল্যান্ড ফোনের নম্বর দেওয়া হয়নি। রয়েছে কেবল একটি মোবাইল নম্বর, তা-ও ‘ভুল’! অর্থাৎ, রাস্তাঘাটে বিপদ-আপদে পুলিশ ডাকতে হলে মহিলা থানায় ফোনে যোগাযোগ সম্ভব নয়। ফোন করে লাভ নেই।

দুর্গাপুরে ডাক্তারি ছাত্রীর ‘গণধর্ষণের’ ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিতর্কের মধ্যেই পুলিশ দাবি করেছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে তারা ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে থাকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার উপকণ্ঠে খাস বিধাননগরেই পুলিশের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। দুর্গাপুরের মতো ঘটনা ঘটলে তড়িঘড়ি কি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট নির্যাতিতা? পরীক্ষামূলক ভাবে বিধাননগর উপনগরীকে বেছে নিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। কলকাতার উপকণ্ঠে এই পরিকল্পিত উপনগরীতে সন্ধ্যার পরে রাস্তাঘাট খানিকটা নিঝুমই থাকে। অনেক সময়েই বিভিন্ন এলাকায় অথবা কিছু কিছু পার্কে নেশাড়ুদের জমায়েতও দেখা যায়। তবে কলকাতা পুলিশের মতোই বিধাননগরেও একটি আলাদা পুলিশ কমিশনারেট আছে। বস্তুত, বিধাননগর এখন আলাদা ‘কর্পোরেশন’ও বটে। এহ বাহ্য, বিধাননগরে বহু বর্তমান এবং প্রাক্তন সরকারি আধিকারিকের বাস। বাস করেন কলকাতা হাই কোর্ট-সহ অন্যান্য আদালতের বর্তমান এবং প্রাক্তন বিচারপতি এবং বিচারকেরাও। আমৃত্যু বিধাননগরে থেকেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এখনও সেখানকার বাসিন্দা রাজ্যের একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দলের প্রথম সারির রাজনীতিকেরা।

Advertisement

এ হেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ‘অফিশিয়াল’ ওয়েবসাইটে মোট ১৫টি থানার নাম, যোগাযোগের নম্বর (অধিকাংশ ক্ষেত্রে ল্যান্ড এবং মোবাইল) এবং ইমেল আইডি দেওয়া আছে। সংশ্লিষ্ট থানার অধীনে কতটা এলাকা রয়েছে, প্রয়োজনে তা-ও দেখে নিতে পারেন যে কেউ। গত শনিবার থেকে আনন্দবাজার ডট কম-এর তরফে এই থানাগুলিতে একাধিক বার ফোন করে করে দেখা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ১৪টি থানাতেই মোবাইল নম্বর ‘নাগালের বাইরে’। একমাত্র ব্যতিক্রম নিউ টাউন জ়োনের নারায়ণপুর।

থানার ল্যান্ড নম্বরগুলি অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালু আছে। তবে এ ক্ষেত্রেও ‘ব্যতিক্রম’ বাগুইআটি থানা। ওই থানার ল্যান্ড নম্বরে ফোন ঢোকেনি! ফোন করলে বলা হচ্ছে, ‘নম্বরটি এখনও রেজিস্টার্ড (নথিভুক্ত) হয়নি’। এ ছাড়া, এনএসসিবিআই এয়ারপোর্ট থানায় কোনও ল্যান্ড নম্বর নেই। অর্থাৎ, মহিলা থানার পাশাপাশি বাগুইআটি এবং এনএসসিবিআই এয়ারপোর্ট থানার সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগের উপায় নেই! বিপন্ন মহিলাদের ‘হেল্পলাইন নম্বর’ হিসাবে রয়েছে একটি ল্যান্ড নম্বর। তাতেও ফোন লাগছে না। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে হয় সশরীরে থানায় যেতে হবে, নয়তো ইমেল করতে হবে।

গত শনিবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিধাননগর কমিশনারেটের ওয়েবসাইট অনুযায়ী থানায় থানায় ফোন করে দেখেছেন আনন্দবাজার ডট কম-এর সাংবাদিক। রবিবার ছাড়া সোমবার সকাল থেকে আবার চেষ্টা করা হয় সেই একই মোবাইল নম্বরগুলিতে। সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে, ১১টা ২০ মিনিটে এবং বেলা ১টা ১৯ মিনিটে তিন বার মহিলা থানায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মহিলাদের জন্য দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন লাগেনি। রাস্তাঘাটে বিপদে পড়লে থানার নম্বর খোঁজার সবচেয়ে সহজ উপায় পুলিশের ওয়েবসাইট। কেন দিনের পর দিন সেখানে ‘ভুল’ নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে, কেন বিকল্প কোনও উপায় বাতলে দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে বিধাননগরে।

দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, ওই তরুণী রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন। তখনই ‘নির্যাতনের’ শিকার হন। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের উচিত পড়ুয়াদের, বিশেষত ছোট মেয়েদের রাতে বাইরে বেরোতে না-দেওয়া। বাইরে থেকে যাঁরা এ রাজ্যে পড়তে আসেন, তাঁদেরও রাতে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কলকাতার উপকণ্ঠে বিধাননগর বহু কলেজ এবং অফিসের ঠিকানা। অনেক অফিসেই রাত পর্যন্ত কাজ চলে। মহিলা কর্মীদের রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। দুর্গাপুরের মতো কোনও ঘটনা ঘটলে তড়িঘড়ি বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট নির্যাতিতা? পুলিশি সহযোগিতা মিলবে? মোবাইল চালু নেই। ল্যান্ড নম্বর ধরার জন্য ফোনের ও পারে পুলিশ থাকবে তো? গত শনিবার এবং সোমবারের অভিজ্ঞতা এমত প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement