SIR

ভিন্ রাজ্যের অবাঙালি নামই কি বাদ বেশি খসড়া তালিকায়?

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র ভবানীপুর, উত্তর বা মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকো এবং কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে কোন নামগুলি খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করেছেন সংখ্যালঘু অধিকার ও সামাজিক বিন্যাস সংক্রান্ত একটি গবেষণা সংস্থা সবর ইনস্টিটিউটের দু’জন গবেষক।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:০৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যের মুসলিম-প্রধান এলাকায় বেআইনি অনুপ্রবেশকারী গিজগিজ করার অভিযোগটা ধাক্কা খাচ্ছে। বরং শহর কলকাতায় স্পষ্ট, পুরনো ঠিকানা ছেড়ে ভিন্ রাজ্য বা অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার ঝোঁক। নির্বাচন কমিশনের তরফে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে কয়েকটি কেন্দ্রের বাদ পড়াদের তালিকা বিশ্লেষণ করে এমনই ধারণা পোক্ত হচ্ছে।

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র ভবানীপুর, উত্তর বা মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকো এবং কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে কোন নামগুলি খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করেছেন সংখ্যালঘু অধিকার ও সামাজিক বিন্যাস সংক্রান্ত একটি গবেষণা সংস্থা সবর ইনস্টিটিউটের দু’জন গবেষক। সৌপ্তিক হালদার এবং অশীন চক্রবর্তীরা নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত নথি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, তিনটি কেন্দ্রেই বাদ পড়া মুসলিম ভোটারের সংখ্যা অ-মুসলিমদের তুলনায় নগণ্য। সামগ্রিক ভাবে ভবানীপুর থেকে ৪৪,৭৮৭ জন, কলকাতা বন্দর থেকে ৬৩,৭৩০ জন এবং জোড়াসাঁকো থেকে ৭২,৯০০ জনের নাম বাদ পড়েছে বলে কমিশনের নথিতে প্রকাশ।এর মধ্যে কলকাতা বন্দর কেন্দ্রে মুসলিম ভোটার অর্ধেকের বেশি (আনুমানিক ৫৩ শতাংশ)। দেখা যাচ্ছে, সেখানেও বাদ পড়া মুসলিম নাম ৩৮ শতাংশের বেশি নয়। ওই মুসলিম প্রধান কেন্দ্রেও অ-মুসলিম নামই বেশি বাদ পড়েছে। তথ্য অধিকার-রক্ষা কর্মী সাবিরআহমেদের কথায়, ‘‘খসড়া তালিকায় যা দেখা যাচ্ছে, তা অপ্রত্যাশিত নয়। ভোটার তালিকা সংশোধন করে কেউ বিশেষ সুবিধা কতটা পাবে, তা তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু পুরোপ্রক্রিয়াটাই মুসলিম-ভীতি বা বিদ্বেষ তৈরি করতে হাতিয়ার হয়েছে।’’ অনেকেই মনে করছেন, খসড়া তালিকা দেখে বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী কিংবা রোহিঙ্গাদের জন-বিস্ফোরণ নিয়ে ধারণা কার্যত চুপসে যাবে।

বিহারে ঠিকানা বদলের চক্করে মেয়েদের নাম বেশি বাদ পড়েছিল। কলকাতার তিনটি কেন্দ্রেই কিন্তু মেয়েদের নামে তত কোপ পড়েনি। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহলের ব্যাখ্যা, এটা সম্ভবত পরিবারকে দেশে রেখে কলকাতায় একলাপুরুষের স্থানান্তরিত হওয়ার প্রবণতার জন্য ঘটছে। ভবানীপুর, জোড়াসাঁকোয় বাদ পড়ার প্রধান কারণ অনুপস্থিতি এবং স্থানান্তরিত হওয়া। কলকাতা বন্দরে বাদ পড়ার পিছনে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণটিই আবার প্রধান। এর পরে রয়েছে, অনুপস্থিত বা খুঁজে না-পাওয়া ভোটারের সংখ্যা। বিশ্লেষকেরা দেখছেন, পশ্চিমবঙ্গেরই গ্রামাঞ্চলে কিন্তু নাম বাদ পড়ার প্রধান কারণ, মৃত্যু।

ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপের মাইগ্রেশন বিষয়ক গবেষক সমতা বিশ্বাস দেখছেন, খসড়া তালিকা ঘেঁটে নানা তথ্য কলকাতাকে ঘিরে ঠিকানা বদলের সত্যটাই আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নিজেজোড়াসাঁকো কেন্দ্রের ভোটার সমতা। বলছেন, ‘‘আমাদের বুথেই পুরনো ভোটার দু’-তিন জন টিকে।’’ সেই সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রের তালিকায়অনেক নাম অনুপস্থিত থাকার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সমতার মত, ‘‘ভিন্ রাজ্য, বিশেষত, পড়শি রাজ্যের অনেকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। কারও কারও নাম ভিন্ রাজ্যেও ভোটার তালিকায় থাকা অসম্ভব নয়।তেমন কিছু নাম শেষ পর্যন্ত তালিকা থেকে বাদ পড়তেই পারে।’’ বাদ পড়া নামগুলি খতিয়ে দেখে বোঝাযাচ্ছে, দাস, কুমার, দেবী, সিংহ, সাউ পদবিই বেশি। কিছু খাতুন, বেগমও রয়েছেন। আলাদা করে এক-একটি নাম বাদের ইতিবৃত্ত বিশ্লেষণনা-করেও প্রধানত অ-বাংলাভাষী নাম বাদ পড়ার দিকটাই উঠে আসছে। কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্তার দাবি, ‘‘কোনও ন্যায্য ভোটারের নাম বাদ না পড়া নিয়ে আমরা সতর্ক।’’

খসড়া তালিকায় যা দেখা গেল

কারা বাদ

ভবানীপুর মুসলিম: ২২.৬৬% অ-মুসলিম: ৭৭.৩৩% নারী: ৩৬.৫৫% পুরুষ: ৬৩.০৪%

জোড়াসাঁকো মুসলিম: ২২.৩৯% অ-মুসলিম: ৭৭.৬০% নারী: ৩৩.৬৭% পুরুষ: ৬৬.৩২% কলকাতা বন্দর মুসলিম: ৩৮.৩৪% অ-মুসলিম: ৬১.৬৫% নারী: ৩৭.৯৭% পুরুষ: ৬২.০২%

কেন বাদ

ভবানীপুর অনুপস্থিত: ৪৪.৯৮% অন্যত্র নাম: ২.৪৫% মৃত: ২৪.২৬% স্থানান্তরিত: ২৭.৯২%

জোড়াসাঁকো অনুপস্থিত: ৫৫.০৫% অন্যত্র নাম: ১.২৯% মৃত: ২১.২০% স্থানান্তরিত: ২২.৪৪%

কলকাতা বন্দর অনুপস্থিত: ৩১.৮৬% অন্যত্র নাম: ১.০১% মৃত: ২১.০৬% স্থানান্তরিত: ৪৬.০৬%

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন