সকালে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে সুস্থই ছিলেন বছর তেইশের তরুণী। কিন্তু তার পর থেকেই আর খোঁজ মিলছিল না তাঁর। সন্তান অবশ্য ছিল হাসপাতালেই। বুধবারই সন্ধ্যায় বালিগঞ্জ স্টেশন চত্বরে ওই তরুণীকে খুঁজে পায় রেলপুলিশ। ন্যাশনাল মেডিক্যালে ভর্তি করানোর পরে রাতে সন্তান-সহ পরিবারের সঙ্গে বাড়ি ফেরেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোনারপুরের বাসিন্দা রঞ্জিতা নস্কর নামে ওই মহিলা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এনআরএসে ভর্তি হন। বুধবার সকালে সুস্থ এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। দুপুরের খাবারও খান হাসপাতালেই। কিন্তু এর পরেই বিকেলে বাড়ির লোকজন দেখেন, শিশুটি থাকলেও রঞ্জিতা ঘরে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তাঁদের তরফে খবর দেওয়া হয় এন্টালি থানায়।
এ দিকে, ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী জানান, বুধবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ রঞ্জিতাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে রেলপুলিশ। চিকিৎসকেরা দেখেন, তরুণীর শরীরে একাধিক হাড়গোড় ভেঙেছে, রয়েছে আঘাতের চিহ্নও। তাঁরা দেখেন, সদ্য সন্তানপ্রসবের অস্ত্রোপচার হয়েছে ওই তরুণীর। রঞ্জিতার খবর পেয়ে এনআরএস থেকে শিশুটিকে নিয়ে তাঁর পরিজনেরা ন্যাশনাল মেডিক্যালে চলে আসেন। চিকিৎসার পরে, রাত সওয়া দু’টো নাগাদ তাঁরা বাড়ি নিয়ে যান রঞ্জিতাকে।
রোগিণীর আঘাত দেখে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সম্ভবত এনআরএসের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এক জন সদ্যপ্রসূতি এ ভাবে কী করে হাসপাতাল থেকে পালাতে পারেন? হাসপাতালের ন্যূনতম নজরদারিই বা থাকবে না কেন— এই প্রশ্ন তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন রোগিণীর পরিজনেরা।
এনআরএস সূত্রে খবর, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকতেও কোন রোগী কখন, কী ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছেন, সব সময়ে তা বোঝা সম্ভব হয় না। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের তরফে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এ দিন এনআরএসের সুপার হাসি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। জবাব দেননি এসএমএস-এরও।
সদ্যোজাত সন্তানকে ফেলে কেন এ ভাবে পালালেন তরুণী? স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি তরুণী নিজেও। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, স্বেচ্ছায় চলে যেতে চেয়েছিলেন বলেই পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন রঞ্জিতা। তবে কেন তিনি এমনটা করলেন, তা তাঁদের কাছেও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে তরুণীর পরিবার। তবে তাঁরা জানান, কিছু দিন ধরেই রঞ্জিতার কিছু মানসিক সমস্যা চলছিল বলে মনে হচ্ছিল। তা যে এমন গুরুতর হয়ে উঠবে, বোঝেননি কেউই।