বাড়ির ভিতরের হাল কী, দেখেন না পুরকর্মীরা

আবাসনে ঢুকতে না পারুন, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে ঢুকতে বাধা কোথায়? এলাকার বাসিন্দারা বরং অন্য কথাই বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, লেক টাউন ও বাঙুরের বহু জায়গায় এমন পরিবেশ হয়ে রয়েছে যে, মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে তা আদর্শ।

Advertisement

কাজল গুপ্ত ও সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২২
Share:

অবহেলা: লেক টাউনের একটি পুকুরের চারপাশ ভরে রয়েছে আবর্জনায় ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘোরেন?

Advertisement

‘‘হ্যাঁ। বাড়িতে কেউ জ্বরে ভুগছে কি না, জিজ্ঞাসা করেন। জল যাতে না জমে, তা নিয়েও সতর্ক করেন।’’

বাড়ির ভিতরে ঢুকে কিছু দেখেন না তাঁরা?

Advertisement

‘‘কই, না তো! বাড়ির ভিতরে ওঁরা কেউ কখনও ঢুকতে চাননি।’’

লেক টাউন ও বাঙুরের বাসিন্দাদের প্রশ্ন করে এমন উত্তরই মিলল মঙ্গলবার। লেক টাউনে ডেঙ্গিতে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনার পরে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। দায় এড়াতে চলছে চাপান-উতোরের খেলা। দক্ষিণ দমদম পুরসভার বক্তব্য ছিল, বড় আবাসনগুলিতে পুরকর্মীরা ঢুকতে পারেন না।

আবাসনে ঢুকতে না পারুন, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে ঢুকতে বাধা কোথায়? এলাকার বাসিন্দারা বরং অন্য কথাই বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, লেক টাউন ও বাঙুরের বহু জায়গায় এমন পরিবেশ হয়ে রয়েছে যে, মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে তা আদর্শ।

রবিবার রাতে কলকাতার একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে লেক টাউনের এ ব্লকের বাসিন্দা, তিন বছরের অহর্ষি ধরের। তার বাড়ির কাছেই রয়েছে একটি বড় আবাসন। ওই আবাসনের পরিচালন কমিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে পুরকর্মীরা আমাদের আবাসনে আসেন। কিন্তু কখনও বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা কেউ বলেননি। পুরকর্তারা যদি আগে থেকে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।’’

বাঙুরের একটি বাড়ির গ্যারাজে জমে আছে জল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ওই ব্লকেই লেক টাউন বাজারের মধ্যে শরৎ চট্টোপাধ্যায় রোডে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়া হয়েছে। সেখানে তৈরি হয়েছে আগাছার জঙ্গল। কিছু সরকারি জমিও ভরে আছে আগাছায়। সেখানে থার্মোকলের কাপ-বাটি পড়ে রয়েছে। তাতে জল জমছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুরকর্মীরা এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চালালে এই সমস্ত জায়গা তাঁদের নজর এড়াচ্ছে কী ভাবে?

এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাস্তাঘাট এখন আগের তুলনায় অনেকটাই পরিষ্কার। নিয়মিত ঝাঁটও দেওয়া হচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে মশা মারার ধোঁয়া। কিন্তু বাড়ির ভিতরে ঢুকে কোথাও জল জমছে কি না বা জঙ্গল তৈরি হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয় না।

তবে নাগরিকদেরও যে সচেতনতার অভাব রয়েছে, তা-ও অস্বীকার করার উপায় নেই। লেক টাউন এ ব্লকের এক বাসিন্দা শুভঙ্কর সরকার বললেন, ‘‘আমাদের মানসিকতাটা হল, নিজের বাড়িটুকু পরিষ্কার রাখব। কিন্তু প্লাস্টিকে ভরা জঞ্জাল লুকিয়ে ফেলে আসব বাড়ির পিছনেই। এলাকা নোংরা হলেও তা নিয়ে কারও কোনও চিন্তা নেই। সেই কারণেই ডেঙ্গির এই বাড়বাড়ন্ত।’’

বাঙুরের বাসিন্দা নবীন নাহাটা নামে এক ব্যক্তি অবশ্য বললেন, ‘‘পুরকর্মীরা সক্রিয়। কিন্তু তাঁরা সাধারণত দুপুরে আসেন। সে সময়ে অনেক বাড়িতেই মহিলারা একা থাকেন। তাই পুরকর্মীরা ভিতরে ঢুকতে পারেন না।’’

দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মশা মারার তেল পর্যাপ্ত রয়েছে। নিয়মিত তা ছড়ানোও হয়। তবে অনেকে ঝোপঝাড় দেখলেই তেল ছড়াতে বলছেন। সেটা সম্ভব নয়। কারণ, সেখানে মশার ডিম পাড়ার কথা নয়। তবে কোথাও জঞ্জাল রয়েছে জানতে পারলে আমরা সাফ করে দেব।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বড় আবাসনগুলি সত্যিই সহযোগিতা করে না। আমরা ওদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।’’ লেক টাউনের কাউন্সিলর মানস রায় বলেন, ‘‘সচেতনতার প্রচারে আমি নিজে রাস্তায় নেমেছি। ফের নামব।’’

শরৎ চট্টোপাধ্যায় রোডের একটি বহুতলের বাসিন্দা স্বপনকুমার দত্ত বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই আবাসন চত্বর সাফ করিয়েছি। তবে রাস্তায় পুরসভাকে ধোঁয়া দিতে দেখেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন