কম্প্যাক্টরের পরেও কেন

জঞ্জাল বহনের খরচ বাড়ায় প্রশ্নে পুরসভা

শহরে খোলা ভ্যাট কমাতে ৭০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে কম্প্যাক্টর মেশিন কেনা হয়েছে। তা বসানোর সময়ে পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শহরে আর খোলা ভ্যাট থাকবে না। জঞ্জাল বহন করতে যে লক্ষ লক্ষ টাকা লরি ভাড়া দিতে হতো, তার পরিমাণ কমবে।

Advertisement
অনুপ চট্টোপাধ্যায় শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২১
Share:

শহরে খোলা ভ্যাট কমাতে ৭০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে কম্প্যাক্টর মেশিন কেনা হয়েছে। তা বসানোর সময়ে পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শহরে আর খোলা ভ্যাট থাকবে না। জঞ্জাল বহন করতে যে লক্ষ লক্ষ টাকা লরি ভাড়া দিতে হতো, তার পরিমাণ কমবে। সঙ্গে হবে সৌন্দর্যায়নও। কিন্তু পুর হিসেব অনুসারে লরির ট্রিপ কমা তো দূর অস্ত্‌, বরং তা বেড়েছে। পুরসভারই নথি অনুযায়ী, কম্প্যাক্টর বসানোর আগে শহরের জঞ্জাল বহনের জন্য বছরে ব্যয় হতো ৩৪ কোটি টাকা। ওই সব মেশিন বসানোর পরে এক বছরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরে ৪ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু কম্প্যাক্টর মেশিন বসলে ভ্যাটের সংখ্যা কমার কথা। ফলে জঞ্জাল বহনের খরচও কমা উচিত। কিন্তু কম্প্যাক্টর মেশিন বসানোর পরেও লরির ট্রিপ খরচ বাড়ছে কেন, প্রশ্ন উঠছে পুরসভার অন্দরেই। পুর অফিসারদের একাংশের অভিযোগ, ফের বুঝি লরির ট্রিপ চুরি হচ্ছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, জঞ্জাল অপসারণে লরির ট্রিপ চুরির অভিযোগ দীর্ঘকাল থেকে চলছে। শহরের নানা এলাকায় জমে থাকা জঞ্জাল লরি করে ধাপার মাঠে ফেলা হয়। ২০১০ সালে তৃণমূল বোর্ড পুরসভার ক্ষমতায় আসার বছর তিনেক পরে পুর অডিট দফতর প্রমাণপত্র-সহ ট্রিপ চুরির বিষয়টি নজরে আনে। তখনও জঞ্জালের পরিমাণ ছিল দিনে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন। অডিটের সেই রিপোর্টে প্রকাশিত হয়, বহু ট্রিপ হয়েছে ২০-৩০ মিনিটের ব্যবধানে। অর্থাৎ, একটি লরি জঞ্জাল ভর্তি করে ধাপায় পৌঁছে মাল খালাস করেছে, তার আধ ঘণ্টার মধ্যে বেহালা বা খিদিরপুর থেকে সেই লরিই ফের মাল নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে ধাপায়। এক পুর অফিসারের কথায়, ‘‘উড়ে গেলেও তা সম্ভব নয়।’’ তবুও তা যে হয়েছে, তার ভূরি ভূরি প্রমাণ মিলেছে পুরসভার ওই অডিটে। এ নিয়ে পুর প্রশাসন তদন্ত কমিটি গড়ে শাস্তি দেওয়ার ফরমানও দিয়েছে। তা সত্ত্বেও সেই কাজ এখনও চলছে বলে মনে করছেন
পুরসভার অনেকেই।

এক সময়ে যত্রতত্র জঞ্জাল পড়ে থাকায় পরিবেশ দূষিত তো হতোই, তার সঙ্গে কলকাতার মতো শহরের শ্রী নিয়ে সমালোচনাও হতো নানা স্তরে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতাকে লন্ডন বানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তখনই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতা শহর থেকে ভ্যাট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুরু হয় শহর জুড়ে কম্প্যাক্টর মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৬৯টি কম্প্যাক্টর স্টেশন গড়া হয়েছে। এক-একটি স্টেশনে একাধিক মেশিন বসানো হয়েছে। প্রায় ১২৫টি মেশিন রয়েছে সব ক’টি স্টেশন মিলিয়ে।
এর সঙ্গে রয়েছে ৬০টিরও বেশি মুভেবল কম্প্যাক্টর।

Advertisement

সুস্থ পরিবেশ, তার সঙ্গে আর্থিক সাশ্রয়— এই ‘দ্বিমুখী’ লাভের কথা বলা হলেও পুরসভার নিজস্ব আয়-ব্যয়ের খাতা কিন্তু অন্য হিসেব দেখাচ্ছে। নতুন ওই মেশিন বসানোর পরে জঞ্জালের পরিমাণ কতটা হ্রাস হয়েছে বা তা বহনের খরচ কতটা কমেছে, তা জানতে গত জুন মাসে পুর প্রশাসনের কাছে চিটি দেয় কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)-এর রেসিডেন্ট অডিট শাখা। পুরসভার অডিট দফতর সূত্রের খবর, গত মাসে ক্যাগের কাছে তার জবাব দিয়েছে পুর প্রশাসন। সেই জবাবেও পুরসভা স্বীকার করেছে, জঞ্জাল বেশি থাকলেও মেশিন ব্যবহারের ফলে তা বহনে লরির ট্রিপ কম হচ্ছে। তা হলে মেশিন বসানোর পরেও কেন লরির ট্রিপ খরচ বেশি?

এ বিষয়ে জঞ্জাল দফতরের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, এখন শহরে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। গাছের ডালপালাও পড়ে থাকছে। ওই সব সরাতে হচ্ছে জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে। লরির ট্রিপ খরচ বাড়ার সেটা একটা কারণ বলে তাঁর দাবি। যদিও ক্যাগের কাছে পাঠানো জবাবে লেখা হয়েছে, কলকাতার আয়তন কিছুটা বেড়েছে বলেই জঞ্জালের পরিমাণও বেড়েছে। যদিও সদ্য অনুষ্ঠিত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট উপলক্ষে পুরসভার ছাপানো পুস্তিকায় লেখা হয়েছে, শহরে দৈনিক জমা জঞ্জালের পরিমাণ ৪ হাজার মেট্রিক টন। বছর ছয়েক আগেও যা ৪ হাজার মেট্রিক টন ছিল। তা হলে জঞ্জাল বাড়ার প্রসঙ্গ আসে কী করে? তবে কি আসলে ট্রিপ চুরি আটকাতে পারছে না পুর প্রশাসন? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেয়র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন