সংবেদনশীল হোক সংগ্রহশালা, প্রচারে স্থপতি

‘‘আগে আমার আঙুল শুধু ব্রেল ছুঁয়েছে। আজ পেন্টিং-ও ছুঁতে পারল।’’ বলেছিলেন জীবনে প্রথম বার আর্ট গ্যালারিতে আসা এক যুবক। আর এই কথাগুলোকেই নিজের কাজের পুরস্কার বলে মনে করেন সিদ্ধান্ত শাহ। 

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৯
Share:

অনুভব: দিল্লির একটি সংগ্রহশালায় একটি পুরাকীর্তির প্রতিরূপ ছুঁয়ে দেখছেন এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি। পাশে রয়েছেন সিদ্ধান্ত শাহ। নিজস্ব চিত্র

‘‘আগে আমার আঙুল শুধু ব্রেল ছুঁয়েছে। আজ পেন্টিং-ও ছুঁতে পারল।’’ বলেছিলেন জীবনে প্রথম বার আর্ট গ্যালারিতে আসা এক যুবক। আর এই কথাগুলোকেই নিজের কাজের পুরস্কার বলে মনে করেন সিদ্ধান্ত শাহ।

Advertisement

বছর দশেক আগে থেকে দৃষ্টিশক্তি হারাতে শুরু করেছিলেন সিদ্ধান্তের মা। দৈনন্দিন জীবনযাপনে মায়ের নানা অসুবিধা ভাবিয়েছিল স্থাপত্যবিদ্যার এই ছাত্রকে। পরে হেরিটেজ আর্কিটেকচার নিয়ে গ্রিসে পড়তে গিয়ে তিনি দেখেন, সংগ্রহশালা বা আর্ট গ্যালারিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য রয়েছে নানা রকম ব্যবস্থা। নিজের দেশের সংগ্রহশালাগুলিতেও তেমন ব্যবস্থা কিছু করা যায় কি না, সেই ভাবনার শুরু তখন থেকেই।

কোনও সংগ্রহশালাকে কী ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের ঘুরে দেখার উপযুক্ত করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন ভারতে অন্যতম পরিচিত মুখ বছর সাতাশের সিদ্ধান্ত। আজ, সোমবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে এই বিষয়ে একটি কর্মশালা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই শহরের বিভিন্ন সংগ্রহশালা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের হাতে-কলমে শেখাবেন সিদ্ধান্ত। ওই সংগ্রহশালাগুলিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য কী কী করা প্রয়োজন বা কী ব্যবস্থা রয়েছে, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।

Advertisement

সিদ্ধান্ত জানান, হুইলচেয়ার বা র‌্যাম্পের ব্যবস্থা এমন উদ্যোগের একটি ছোট অংশ মাত্র। শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধীই নন, বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টিহীন এবং ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরাও যাতে সংগ্রহশালা ঘুরে দেখতে পারেন, তার জন্য ব্যবস্থা থাকা উচিত। ছুঁতে পারা যায় এমন পেন্টিং-ভাস্কর্য, সহজ ভাষায় ও বড় বড় অক্ষরে বা ব্রেলে লেখা বিবরণ, যাতায়াতের জন্য ট্যাকটাইল পেভার ব্লক, ইনফোগ্রাফিকের ব্যবহারে এই কাজ করা যায়। অডিও-ভিস্যুয়াল মাধ্যম ও গাইডের ব্যবহারও এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

জয়পুর, জোধপুর, পাকিস্তান ও দিল্লির একাধিক সংগ্রহশালা এবং গ্যালারির সঙ্গে কাজ করেছেন সিদ্ধান্ত। জানাচ্ছেন, এই কাজ শুরু করার সময়ে বহু সংগ্রহশালা থেকে জানানো হত, সেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ খুবই কম আসেন। তাই তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই সেখানে। সিদ্ধান্তের মতে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই বলেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরা কোনও সংগ্রহশালায় যেতে দ্বিধাবোধ করেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের জন্য শেখার, ভাবনা আদান-প্রদানের প্রাণবন্ত জায়গা হয়ে উঠতে পারে এই সংগ্রহশালাগুলিই। তাঁদের জীবনযাত্রায় আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে এ বিষয়ে আগে থেকে সচেতনতা এখন অনেকটাই বেড়েছে বলে মত সিদ্ধান্তের।

এই সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই আলোচনার পাশাপাশি, কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত। এই মুহূর্তে ভিক্টোরিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন তিনি। তবে গ্যালারির বেশির ভাগ অংশে সংস্কারের কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হলে গ্যালারির ৯০ শতাংশ অংশেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরা যেতে পারবেন। সংগ্রহশালায় ঢোকার র‌্যাম্পটি ঠিক ভাবে তৈরি করা হবে। দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার জন্য থাকবে লিফটের ব্যবস্থাও। গাইডের সাহায্যে ঘুরে দেখার ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে সেখানে। ব্রেল নির্দেশিকা এবং ‘সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ’ জানা গাইড রাখার ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানাচ্ছেন জয়ন্তবাবু। এই কাজে সিদ্ধান্তের পরামর্শ নেওয়ার পরিকল্পনাও আছে। জয়ন্তবাবু জানাচ্ছেন, সব রকম দর্শকের জন্য ভিক্টোরিয়ার সংগ্রহশালাটি যতটা সম্ভব সুবিধাজনক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডিসেম্বরের বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে জলরঙে আঁকা বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের একটি পেন্টিংও আজ, সোমবার সর্বসমক্ষে আনা হবে। ‘লেডি উইথ ফ্লাওয়ার ভাস’ নামে এই ছবিটি শিল্পী এঁকেছিলেন ১৯৫২ সালে, যখন তাঁর দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই ক্ষীণ। প্রতিবন্ধকতার বাধা পেরোনো যায়, এই বার্তা দিতেই বেছে নেওয়া হয়েছে ছবিটি, জানালেন জয়ন্তবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন