Death

সম্পত্তির জন্য ঠেলে ফেলার অভিযোগ, বৃদ্ধের মৃত্যুতে রহস্য

বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে না পেরে কয়েক বছর আগে ছেলে রাজা হাইতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ওই বৃদ্ধের। রাজা গড়িয়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৩
Share:

মানিকতলায় বৃদ্ধের রহস্যজনক মৃত্যু। প্রতীকী ছবি।

এক বৃদ্ধের মৃত্যুতে রহস্য দানা বেঁধেছে মানিকতলায়। সম্পত্তির জন্য বছর একাত্তরের ওই বৃদ্ধকে বাড়ির সিঁড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশ ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে চায়নি। বুধবার সকালের ওই ঘটনার রহস্যভেদ হয়নি বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত। তবে, সম্পত্তি নিয়ে ওই বৃদ্ধের পরিবারে যে বিবাদ রয়েছে, তা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম প্রতাপ হাইত। বাড়ি মানিকতলার ক্যানাল ইস্ট রোডে। তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। তাঁর এক ছেলে এবং মেয়ে রয়েছেন। বাড়ির পরিচারিকার সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে না পেরে কয়েক বছর আগে ছেলে রাজা হাইতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ওই বৃদ্ধের। রাজা গড়িয়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বিয়ের পরে স্বামীকে নিয়ে বাবার কাছেই ওঠেন। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে বাবার পুরনো বাড়িটি ভেঙে তেতলা বাড়ি করেন প্রিয়ঙ্কা ও তাঁর স্বামী। সেখানে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে কয়েকটি পরিবারকে ভাড়া দেন। বৃদ্ধ দোতলার একটি ঘরে থাকলেও নিজেরা গিয়ে ওঠেন অন্যত্র। এই সময়েই দাদাকে সম্পত্তি থেকে বাইরে রাখতে তাঁরা একটি উইলও তৈরি করেন বলে খবর।

সূত্রের খবর, প্রতিবেশীরা এবং ওই বাড়ির কয়েক জন ভাড়াটে পুলিশকে জানান, বৃদ্ধের জামাই মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে প্রায়ই তাঁকে হেনস্থা করতেন। সম্পত্তির জন্য তাঁকে মারধর করা হত বলেও অভিযোগ। এ নিয়ে বৃদ্ধের ঘর থেকে চিৎকার শোনা যেত প্রায়ই। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সরু গলির মধ্যে বৃদ্ধের তেতলা বাড়ি। এক জন মাত্র ওঠানামা করতে পারেন, এমন সরু সিঁড়ি বানিয়ে ঘিঞ্জি জায়গার মধ্যে একাধিক ঘর তৈরি হয়েছে। এমনই একটি ঘর দেখিয়ে ওই বাড়ির এক ভাড়াটে বলেন, ‘‘বুধবার সকালে পুরসভার জঞ্জালের গাড়ি এলে শীর্ণ শরীরে ময়লা ফেলতে নেমেছিলেন ওই বৃদ্ধ। এর পরে সরু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়েই ঘটে বিপত্তি। বৃদ্ধকে প্রায়ই মারধর করা হত। জঞ্জাল ফেলা নিয়ে মারধরের সময়েই কোনও কারণে তিনি পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন।’’

Advertisement

ওই বাড়ির একতলায় একটি গেঞ্জির কারখানা রয়েছে। সেখানে কাজ করা এক যুবকের দাবি, ‘‘চিৎকার শুনে সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখি, বৃদ্ধের জামাই তাঁকে পিছন থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন। আমিও হাত লাগাই। বিছানায় শোয়ানোর পরেই দেখি, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধের মাথার পিছনের দিকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। অ্যাম্বুল্যান্স না ডেকে বৃদ্ধের জামাই অ্যাপ-ক্যাব ডাকেন। কিন্তু এমন ঘটনা শুনে ক্যাবচালক পালিয়ে যান। এর পরেই পুলিশে খবর যায়।’’ এ দিন মানিকতলা থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘আমার স্বামী কাজে গিয়েছেন। বাবা আমার জীবন, আমরা এমনটা করব কেন?’’ রাজার পাল্টা দাবি, ‘‘মারধর করা হত বলে পুলিশে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা বার বার আড়াল করতেন। প্রতিবেশী থেকে ভাড়াটে, সকলেই মনে করছেন, বাবাকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হতে পারে। সত্যি কোনটা, পুলিশ খুঁজে বার করুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন