ছন্দে ফিরতে হোঁচট খাচ্ছে নাগেরবাজার

এলাকার আরও কয়েক জন বাসিন্দা জানালেন, এখনও ছন্দে ফিরতে পারেনি পাড়া। তবে রাস্তা দিয়ে মানুষজনের যাতায়াত স্বাভাবিক হয়েছে অনেকটা। গলি দিয়ে গাড়ি চলাচলও বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৪
Share:

বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। —ফাইল ছবি

বিস্ফোরণের তিন দিন পরে পাড়ার চেনা ছন্দ কোথাও যেন কেটে গিয়েছে। বিস্ফোরণস্থলের আশপাশে কয়েকটি দোকান ছাড়া প্রায় সব দোকান খুলেছে। কিন্তু দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, এখনও বেচাকেনা স্বাভাবিক হয়নি। স্থানীয়দের একাংশ জানাচ্ছেন, এখনও আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। রাস্তায় বেরোলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অনেকে। মনে হচ্ছে, ফের বিস্ফোরণ হবে না তো?

Advertisement

নাগেরবাজারে যে বহুতলের সামনে মঙ্গলবার বিস্ফোরণ হয়, সেই বাড়ির পাঁচতলায় সপরিবার থাকেন রণজয় বিশ্বাস। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে ছ’বছরের ছেলে রণময়ও কেমন গুটিয়ে আছে। ও নীচে গেলে দোকানদারেরা ওকে টফি দিতেন। ওর মা এখন আতঙ্কে ওকে নীচে যেতে দিচ্ছে না। আজ সকাল থেকে ছেলে জিজ্ঞাসা করছে, আজ কেন টফির দোকান বন্ধ? আজও কি বোমা ফেটেছে?’’ রণজয়বাবুর স্ত্রী তানিয়া বলেন, ‘‘বোমা ফাটার ওই বিকট আওয়াজ এখনও যেন কানে বাজছে। আমার বড় ছেলে রত্মদীপ ঘটনার পরে আজ ফের স্কুলে গেল। ও ফেরা না পর্যন্ত অস্বস্তি লাগছিল।’’

এলাকার আরও কয়েক জন বাসিন্দা জানালেন, এখনও ছন্দে ফিরতে পারেনি পাড়া। তবে রাস্তা দিয়ে মানুষজনের যাতায়াত স্বাভাবিক হয়েছে অনেকটা। গলি দিয়ে গাড়ি চলাচলও বেড়েছে। এলাকার এক বাসিন্দা সকালে অফিস যাওয়ার সময়ে বলেন, ‘‘অফিস থেকে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ফেরার সময় দেখতাম, পাড়ার গলির মুখটায় অনেকে জটলা করে গল্প করছে। অনেক রাত পর্যন্ত এ ভাবে গল্প করত পাড়ার ছেলেরা। দোকানগুলোতেও ভিড় থাকত। গত দু’দিন ধরে পাড়াটা একদম ফাঁকা।’’ এলাকার এক গৃহবধূ ললিতা সাহা বলেন, ‘‘এ রকম একটা শান্ত পাড়ায় এত সাংঘাতিক বিস্ফোরণ যে হয়ে গেল, বিশ্বাস হচ্ছে না। আসলে পাড়াটা যে শান্ত পাড়া, সেই বিশ্বাসটাই যেন বিস্ফোরণের পরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ঘণ্টাখানেকের রুদ্ধশ্বাস নাটক, কাঁথি আদালত চত্বর থেকে পালাল আসামি, গুলি করে ফের পাকড়াও

বিস্ফোরণস্থলের ঠিক পাশেই একটি হার্ডওয়্যারের দোকান। ওই দোকানের মালিক এস জায়সবাল বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে কেনাবেচাও কমে গিয়েছে অনেকটা। সকালের দিকে তা-ও কিছু কেনাকাটা হয়। বেলার দিকে কিছুই হয় না। আসলে পাড়াটা স্বাভাবিক হয়নি বলেই এই অবস্থা। ভাবছি আজ দুপুর ২টোর পরে দোকান বন্ধ করে দেব।’’

এর মধ্যে আহতদের অবস্থা নিয়েও খোঁজ নিচ্ছেন বাসিন্দারা। এলাকার এক যুবক অঙ্কুশ সাহা জানান, বন্ধুরা মিলে মাঝেমধ্যেই ছুটছেন আর জি কর হাসপাতালে। বিস্ফোরণে আহত ফলবিক্রেতা অজিত হালদার ও নিহত শিশু বিভাসের মা, সীতা ঘোষের অবস্থা নিয়ে জানতে চাইছেন। অঙ্কুশ বলেন, ‘‘পাড়ায় কতদিন ধরে দেখছি ওঁদের। ওঁরা সুস্থ হয়ে না হয়ে ওঠা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।’’

এর মধ্যেই পুজোর জন্য বহুতলগুলি থেকে ঝোলানো এলইডি আলো জ্বালানো হয়েছিল বুধবার রাতে। আলো জ্বলতেই কয়েক জন আপত্তি জানান। এক গৃহবধূ টিঙ্কু সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘একটি বাচ্চা মারা গিয়েছে। কয়েক জন গুরুতর আহত। মন ভাল নেই। এখন এলইডি জ্বালিয়ে পাড়া আলো করার কী দরকার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন