খোদাই: এ ভাবেই মেডিক্যাল কলেজের দেওয়ালে বিভিন্ন নাম লেখা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো ‘গ্রেড-১’ হেরিটেজ ভবনের দেওয়াল ২৫ হাজার টাকায় ‘বিক্রি’ হয়ে যাচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটিতে! চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা আর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে।
কোনও হেরিটেজ ভবনের গায়ে ফলক, হোর্ডিং, বিজ্ঞাপন বা দেওয়াল লিখন দণ্ডনীয় অপরাধ। তা হলে দেওয়াল বিক্রি হচ্ছে কী ভাবে?
সাধারণত কোনও মন্দির গড়তে যাঁরা টাকা দেন অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের নামধাম মন্দিরের গায়ে ফলক বসিয়ে লিখে রাখা হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের দেওয়ালেও একই ভাবে চাঁদাদানকারী চিকিৎসকদের নাম খোদাই করা হয়েছে! নামের সংখ্যা প্রায় একশোর কাছাকাছি।
ওই চাঁদা অবশ্য মেডিক্যাল কলেজের ভবন তৈরির জন্য দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে সেখানকার প্রাক্তনীদের সংগঠন বা ‘এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর উন্নয়ন প্রকল্পে। মেডিক্যাল থেকে অন্তত ২৫ বছর বা তারও বেশি আগে পাশ করেছেন এমন প্রাক্তনীরা ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দিলেই হয়ে যাচ্ছেন অ্যাসোসিয়েশনের পৃষ্ঠপোষক। এবং সেই পৃষ্ঠপোষকদের নাম কলেজের অধ্যক্ষের অফিসের গায়ে (৮৮, কলেজ স্ট্রিট) গায়ে কালো-সাদা পাথরে বসানো হচ্ছে। তাতে অনেক নামজাদা চিকিৎসকের নামও রয়েছে। সরকারি চাকরি করেন এমন চিকিৎসকেরাও রয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, কোনও সংগঠনে মোটা অঙ্কের চাঁদা-দানকারীদের নাম প্রতি-উপহার হিসাবে কোনও সরকারি ভবনের দেওয়ালে এবং বিশেষ করে হেরিটেজ ভবনের দেওয়ালে ফলক গেঁথে লেখা হয় কী করে? কী ভাবে তাতে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিতে পারে?
গত ১৮ ডিসেম্বর সৌরভ মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন পুরসভার হেরিটেজ কমিটি ও স্বাস্থ্য দফতরে। সৌরভবাবুর কথায়, ‘‘কলকাতা পুরসভা আইন ১৯৮০-র ৪২৫পি ধারা অনুযায়ী, কেউ হেরিটেজ ভবনের গায়ে অনুমতি ছাড়া ছবি লাগালে বা নাম বসালে বা কোনও ভাবে ভবনকে বিকৃত করলে তার ৩ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তা ছাড়া, নিজেদের টাকায় ভবনকে আগের চেহারায় ফেরত আনতে হবে দোষীকে। তা না-হলে সংস্কারের মোট টাকা হিসাবে প্রতি দিন ২৫০টাকা করে তাঁকে দিতে হবে।’’ এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনায় শাস্তি বর্তাবে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উপরে।
বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে স্বাস্থ্যকর্তারাও। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এ রকম একেবারেই হওয়া উচিত নয়। কী ভাবে এমন হল, খোঁজ নিচ্ছি।’’ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তপনকুমার লাহিড়িও বলেন, ‘‘এটা করার আগে ওঁরা আমার অনুমতি নেননি। আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’’
কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির আহ্বায়ক সুব্রতকুমার শীলের কথানুযায়ী, ‘‘গ্রেড-১ হেরিটেজ ভবনের গায়ে অনুমতি ছাড়া কোনও ছবি আঁকা, লেখা, কিছু টাঙানো, খোদাই করা বা রং পরিবর্তন করা যায় না। করলে অবিলম্বে ভবনকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে হবে।’’ মেডিক্যালের প্রাক্তনীরা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা অতশত না-ভেবেই এটা করে ফেলেছেন। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘আসলে যে সব পুরনো ছাত্রছাত্রীরা সংগঠনকে টাকা দিচ্ছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাতে দেওয়ালে ওঁদের নাম খোদাইয়ের পরিকল্পনা হয়েছিল। সংগঠনের অফিসঘরটা অধ্যক্ষের ঘরের ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে। কিন্তু তার দেওয়ালগুলো কাঠের। তাই ভবনের দেওয়ালেই সিমেন্ট দিয়ে ফলকগুলো লাগিয়ে নামগুলো খোদাই হয়েছিল। ভুল হয়ে থাকলে সব উঠিয়ে দেওয়া হবে।’’