বোমা-গুলির ‘লড়াই’, রণক্ষেত্র নারায়ণপুর

মঙ্গলবারই টোটো-অটো-ম্যাজিক গাড়ির চালকদের একাংশের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সেই গোলমাল বাধল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:১০
Share:

গোলমাল: পরপর মোটরবাইক ফেলে আটকানো হয়েছে রাস্তা। মঙ্গলবার, নারায়ণপুরের শরৎপল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

বিধাননগরের পুর রাজনীতির সমীকরণ সদ্য বদলেছে। মেয়র পদ ছেড়েছেন সব্যসাচী দত্ত। পুরসভার ক্ষমতার অলিন্দে শক্তপোক্ত অবস্থানে চলে এসেছেন সব্যসাচীবাবুর বরাবরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। ফলে রাজারহাট-নারায়ণপুর এলাকায় গোলমালের আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই টোটো-অটো-ম্যাজিক গাড়ির চালকদের একাংশের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সেই গোলমাল বাধল। দু’পক্ষের সংঘর্ষে উত্তাল হল নারায়ণপুরের শরৎপল্লি এলাকা। বোমা পড়ল তাপসবাবুর বাড়ির উঠোনে। গ্রেফতার হলেন সব্যসাচীবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত আট জন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে চিনার পার্কে টোটো-অটো-মালবাহী গাড়ির চালকদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। তাপসবাবুদের অভিযোগ, প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচীবাবুর অনুগামী রাজু পাল-সহ কয়েক জন এখন বিজেপির আশ্রিত। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চিনার পার্ক থেকে রাজারহাট-ইকো স্পেস কিংবা পাঁচ নম্বর সেক্টর রুটের টোটো, অটো এবং মালবাহী গাড়ি টাকার বিনিময়ে স্ট্যান্ডে ঢোকাচ্ছেন। প্রতিদিন চালকদের থেকে রাজু ও তাঁর লোকজন টাকা নেন বলেও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ।

ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছিল। স্থানীয়েরা জানান, সেই সময়ে তাপসবাবুর লোকজন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তখনকার মতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অভিযোগ, রাজু পালের নেতৃত্বে কিছু লোক ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন।

Advertisement

তাপসবাবুর অনুগামী মহম্মদ সাবির আলি মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘শরৎপল্লির একটি ক্লাবে বহিরাগতেরা ভিড় করেছিল। আমরা ডেপুটি মেয়রের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই রাজুরা হামলা চালায়।’’ তাপসবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, ডেপুটি মেয়রের বাড়িতে বোমা পড়েছে। এর ফলে তাঁর বাড়ির কাচ ভেঙে যায়। পরপর বোমা পড়ে এলাকায়। গুলিও চলে।

তাপসবাবু জানান, প্রথমে পাড়ার মহিলারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘আমি অটো ইউনিয়নের কেউ নই। কিন্তু চালকদের কিছু ক্ষোভ রয়েছে রাজুদের বিরুদ্ধে। দলগত ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছিল। সব্যসাচীবাবুর অনুগামী রাজুর নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। আমরা প্রতিরোধ করেছি।’’

বোমা ও গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, রাজু পাল-সহ আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রচুর গুলির খোল ও বোমা উদ্ধার হয়েছে স্থানীয় এলাকা থেকে। রাজুর অনুগামীদের পাল্টা দাবি, হামলা চালিয়েছেন তাপসবাবুর লোকজন। কয়েকশো লোক স্থানীয় বাবলাতলায় জড়ো হয়ে রাজুর পাড়ায় গিয়ে তাঁকে মারধর করে। রাজুর পাড়ায় বোমা মারা হয়। এমনকি গুলিও চলে।

অন্য দিকে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কোনও গোষ্ঠী কোন্দল নয়। দুষ্কৃতীরা হামলা করেছে। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করেছে। রাজ্য সরকার অসভ্যতা সহ্য করবে না।’’

এই ঘটনায় বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের নাম জড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও ফিরহাদ তা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘‘এ সব বানানো কথা। এ সবের সঙ্গে সব্যসাচীর দূর-দূরান্ত পর্যন্ত সম্পর্ক নেই।’’

প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচীবাবু এখন দেশের বাইরে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে তাপসবাবু রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার সিপিএমের চেয়ারম্যান থাকাকালীন তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের গোলমাল হয়েছিল লালকুঠি এলাকায়। নারায়ণপুর-লালকুঠি এলাকা বরাবরই তাপসবাবুর ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে নিউ টাউন থেকে তাপসবাবুকে হারিয়ে জিতেছিলেন সব্যসাচীবাবু। সাত বছর আগে ওই গোলমালের জেরে নিজের এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হন তাপসবাবু।

এ দিনের গোলমালের পরে অবশ্য উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূলের সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘তাপসের পাশে দল রয়েছে। তাপসের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে দল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন