Nepal Violence

জ্বলছে নেপাল! মুলুকের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সোনাগাছির নেপালি যৌনকর্মীরা উদ্বিগ্ন, ঘনঘন মোবাইলে নজর খবরে

একটা সময়ে সোনাগাছিতে প্রচুর নেপালি যৌনকর্মী ছিলেন। শুধু সোনাগাছি নয়। কালীঘাট থেকে শুরু করে হাওড়া-হুগলির যৌনপল্লিগুলিতেও নেপালি মেয়েদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। গত কয়েক বছর ধরে তা অনেকটাই কমেছে।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৮
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অগ্নিগর্ভ নেপাল! ছাত্র-যুব অভ্যুত্থানের পর বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে জনতা। চোর পেটানোর মতো করে রাস্তায় ফেলে পেটানো হচ্ছে সাংসদ এবং মন্ত্রীদের। পড়শি দেশের এ হেন পরিস্থিতির আঁচ পড়েছে কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে। সোনাগাছির বাসিন্দা নেপালি যৌনকর্মীরা যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁদের মুলুকে। পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন না। প্রয়োজনে আদৌ টাকা পাঠাতে পারবেন কিনা, বুঝতে পারছেন না। এ-ও বুঝতে পারছেন না যে, পরিস্থিতি কবে শান্ত হবে।

Advertisement

দেশে ফিরে যেতে চাইলেও তাঁদের যাওয়ার উপায় নেই। আন্তর্জাতিক সীমান্ত ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সহ নেপালের সমস্ত বিমানবন্দরও বন্ধ। সমস্ত উড়ান বাতিল হয়ে গিয়েছে। কবে তা চালু হবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।

পরিস্থিতি যে ‘উদ্বেগজনক’, তা মানছে যৌনকর্মীদের সন্তানদের সহায়তা দেওয়ার সংগঠন ‘আমরা পদাতিক’। সংস্থার তরফে মহেশ্বতা মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলছিলেন, ‘‘নেপালি দিদিদের উৎকণ্ঠা স্বাভাবিক। ওঁরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। পুরো বিচ্ছিন্ন। বুধবার আমাদের বৈঠক রয়েছে। ওঁদের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে।’’

Advertisement

দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মূল সংগঠক বিশাখা লস্কর আপাতত রয়েছেন শ্রীলঙ্কায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতা থেকে কলম্বো গিয়েছেন। ফলে তিনি সোনাগাছির পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনিই সংযোগ করিয়ে দিলেন দুর্বারের অন্য এক সংগঠকের সঙ্গে। ওই সংগঠক বললেন, ‘‘প্রবল উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নেপালি মেয়েরা। মঙ্গলবারেই দু’জনকে দেখলাম, যাঁরা মুদিখানার জিনিস কিনতে গিয়ে বলছেন, বাড়ির লোকজন কেমন আছেন, তা জানেন না। বার বার মোবাইল খুলে খবর দেখছেন।’’ পরিবার-পরিজনদের খবর না-পেলেও আপাতত খবর দেখে দেশের পরিস্থিতি বুঝতে চাইছেন ওই নেপালি যৌনকর্মীরা।

একটা সময়ে সোনাগাছিতে প্রচুর নেপালি যৌনকর্মী ছিলেন। শুধু সোনাগাছি নয়। কালীঘাট থেকে শুরু করে হাওড়া-হুগলির যৌনপল্লিগুলিতেও নেপালি মেয়েদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। গত কয়েক বছর ধরে তা অনেকটাই কমেছে। তবে সোনাগাছিতে এখনও বেশ কয়েকটি বাড়িতে নেপালি যৌনকর্মীরা রয়েছেন। আপাতত উৎকণ্ঠায় দিন-রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নেপাল সরকার। তাকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পথে নামে নেপালের ছাত্রযুবরা। সোমবার বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ গুলি চালালে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার পরে বিক্ষোভের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রাতে সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে নেপাল সরকার। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ জোরালো হয়। কাঠমান্ডু-সহ গোটা নেপাল জুড়ে অশান্তি শুরু হয়। জনবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর কথায় মঙ্গলবার বেলার দিকে ওলি প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেন। মনে করা হচ্ছে, শেষপর্যন্ত তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দুবাইয়ে আশ্রয় নিতে পারেন, এমন খবরও অশান্ত নেপালের বাতাসে উড়ছে। কিন্তু এখনও সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। ওলির পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর ইস্তফা দিয়েছেন নেপালের রাষ্ট্রপতিও। কিন্তু তার পরেও অশান্তি দ্রুত কমবে, এমন নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না। সেই কারণেই উদ্বেগ আরও বাড়ছে সোনাগাছির নেপালি যৌনকর্মীদের মধ্যে।

ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের পানিট্যাঙ্কিতে নেপাল সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও নেপালের আগুনের আঁচ থেকে রেহাই পাচ্ছে না কলকাতা। সোনাগাছির নেপালি যৌনকর্মীদের কুঠিতে এখন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement