উৎসব কাপের লড়াইয়ে প্রস্তুত নতুন শিল্পীরাও

কারও অভিজ্ঞতা সাত বছর, কারও আবার এ বছরই ‘হাতেখড়ি’। কারও ব্যাগে রয়েছে আর্ট কলেজের ডিগ্রি, কেউ বা আবার নিতান্তই গাঁয়ের ছেলে! এমনই নানা শিল্পী এ বার লড়ছেন মহানগরের উৎসব কাপে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩১
Share:

কারও অভিজ্ঞতা সাত বছর, কারও আবার এ বছরই ‘হাতেখড়ি’। কারও ব্যাগে রয়েছে আর্ট কলেজের ডিগ্রি, কেউ বা আবার নিতান্তই গাঁয়ের ছেলে! এমনই নানা শিল্পী এ বার লড়ছেন মহানগরের উৎসব কাপে। পুজো ময়দান বলছে, অভিজ্ঞতা কম হতে পারে, কিন্তু শৈল্পিক দক্ষতার নিরিখে এ বারের উৎসব কাপ জমিয়ে দিতে পারেন এই সব শিল্পীরা।

Advertisement

আর্ট কলেজের পড়ার পাশাপাশি পুজোর থিম গড়া শিখতে ‘নাড়া’ বেঁধেছিলেন থিম বাজারের এক নামী শিল্পীর কাছে। ক্রমে হয়ে উঠেছেন সেই শিল্পীর দলের অপরিহার্য সদস্য। দল ছাড়েননি বটে কিন্তু বন্ধু মধুময় মাইতিকে নিয়ে এ বার স্বাধীন ভাবে থিম গড়ছেন বিমল মাইতি। প্রথম বছরেই উত্তর কলকাতার সবচেয়ে পুরনো পুজো বলে পরিচিত শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীনের ভার এই নবীন জুটির হাতে। সেখানে ঘুড়ি, লাটাই, পুতুল দিয়ে ছোটবেলার স্মৃতি ফুটিয়ে তুলছেন দু’জনে। বিমল বলছেন, ‘‘অনির্বাণদার (দাস) দল ছাড়িনি। সেখানেও দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে।’’

বিমলের মতোই নামী শিল্পীর দলে কাজ করতেন পিন্টু মোল্লাও। কিন্তু এ বারের পুজোয় তাঁর গুরু দীপক ঘোষ কাজ করছেন না। তাই গুরুর ছত্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে স্বাধীন ভাবে থিম গড়ছেন পিন্টু। পূর্বাচল জাগরী সঙ্ঘে প্লাস্টিকের চায়ের কাপ, জলের গ্লাস দিয়েই থিম গড়েছেন তিনি। বিরাট মাপের ড্রাগনের পাশাপাশি এখানে থাকছে পাখি, খরগোশও। তিনি বলছেন, ‘‘একা একা কাজ করার আগে ওঁর অনুমতি নিয়েছি।’’

Advertisement

শিল্লী সুজিত লালের ‘টিম লি়ডার’ পরিমল পাল অবশ্য পুরোপুরি স্বাধীন ভাবে ছেড়ে দেননি ‘জুনিয়র’-কে। উত্তর কলকাতার অন্যতম নামী পুজো সিকদার বাগানে দেবীর উৎস এবং লড়াইয়ের বিবরণ নিয়ে থিমের মণ্ডপ তৈরি করছেন সুজিত। কিন্তু প্রতিমা গড়ছেন পরিমল নিজেই। পুজো ময়দানের খবর, প্রথম বারেই নজরকা়ড়া কাজ করছেন সুজিত। ভিড় টানাতেও পিছনে থাকবেন না, আশা করছেন সিকদার বাগানের পুজোকর্তারা।

পেশায় ফটোগ্রাফার কিন্তু কুমোরটুলি লাগোয়া হাটখোলায় বড় হওয়া মানস রায়ের নেশায় রয়েছে মণ্ডপ। তাই গোড়ায় পাড়ার পুজোতে হাত পাকালেও ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে শহরের উৎসব কাপে নেমে পড়েছিলেন তিনি। গত দু’বছরে ভবানীপুর চক্রবেড়িয়া, হাতিবাগানের সিকদার বাগানের মতো পুজোয় কাজ করেছেন। এ বার তাঁর হাতে উল্টোডাঙা পল্লিশ্রীর ভার। থিম হিসেবে শুধু মণ্ডপ নয়, সাজিয়ে তুলছেন গোটা পাড়াকেই। প্রথাগত শিল্পের পাঠ নেই। পুজোর থিম গড়তে কোথাও সমস্যা হয় না? মানসের জবাব, ‘‘ফোটোগ্রাফিতেও শিল্পের পাঠ পড়তে হয়। আর কুমোরটুলি, হাটখোলায় ছোটবেলা থেকেই পুজোর শিল্পের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল।’’

প্রথাগত শিল্পের পাঠ ছাড়াও যে উৎসব কাপে নেমে পড়া যায় তা দেখাচ্ছেন শিল্পী প্রশান্ত দাসও। বাঁকুড়ার বড়জোড়ার এই যুবকের হাতে এ বার দায়িত্ব সঁপেছে পোস্তার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিট। গোয়ালের ধাঁচে মণ্ডপ এবং গোয়ালিনীর ধাঁচে দুর্গা এ বার দর্শকদের নজর কাড়বে, সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন স্বপ্না দাস, রিঙ্কু মুখোপাধ্যায়ের, শিপ্রা সরকারের মতো পুজোকর্ত্রীরা।

ময়দানে নতুন না হলেও উৎসব কাপে তেমন অভিজ্ঞতা নেই শিল্পী মিঠুন দত্তের। এ বার বাগমারি ১৪ পল্লির পুজো মণ্ডপে তুলে ধরছেন ছোটবেলার কল্পকথাকে। তেমন ভাবেই নতুন শিল্পী হিসেবে নজর কাড়তে পারেন শঙ্কর মজুমদারও। পেশায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়ার সুবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াত এই যুবকের। এ বার বেলগাছিয়া যুব সম্মিলনীতে তুলে আনছেন এক টুকরো নাগাল্যান্ডকে। সেখানকার সংস্কৃতিকে তুলে আনার জন্য নাগা শিল্পীদেরও মণ্ডপে নিয়ে আসছেন তিনি। ব্যবহার করছেন সিসাহীন রং।

গত বছর বেহালা এলাকায় নজর কেড়েছিলেন নতুন শিল্পী রূপক বসু। এ বার তিনি ভবানীপুর রূপচাঁদ মুখার্জি লেনে। সরু গলিতে তুলে আনছেন এক টুকরো পানামা। কুনো ইন্ডিয়ানদের ব়ডি পেন্টিং এবং সংস্কৃতি দেখতে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়বে,
আশা করছেন পুজোকর্তারা। গত কয়েক বছর ধরে পুজোয় নজর কাড়ছেন শিল্পী বাপাই সেন। মহম্মদ আলি পার্কের মতো পুজোতেও কাজ করেছেন তিনি। এ বার দায়িত্ব নিয়ে বদলে দিয়েছেন গড়িয়া মিতালি সঙ্ঘের মণ্ডপ। এত দিন সেখানে মন্দির বা দুর্গের আদলে মণ্ডপ হতো। এ বার সেখানে আলোর বিবর্তনের থিমে মণ্ডপ গড়ছেন তিনি। লণ্ঠন, প্রদীপের পাশাপাশি অভিনবত্ব আনতে মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করছেন এলইডি আলোও।

নামী, উঠতি তারকা তো কোমর বেঁধে তৈরি। কিন্তু নতুন এই সব শিল্পীরা অনেক পুরনো হিসেব-নিকেশ বদলে দেবেন না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন