BJP

Kolkata Municipal Election 2021: ভোটপর্বে দ্বিতীয় ঢেউয়ের রক্তচক্ষু থেকে কী শিক্ষা হল

বিধানসভা ভোটের সময়ে কয়েক জন প্রার্থীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থেকে কি কিছুটা হলেও শিক্ষা নিয়েছেন পুর ভোটের যোদ্ধারা?

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

করোনা-বিধি না-মানার ক্ষেত্রে সমান সব দলই। মনোনয়ন জমা দিতে এসে প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূল, কর্মী-সমর্থকেরা। বুধবার, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

শিয়রে পুর যুদ্ধ। ইভিএমে লড়াইয়ের আগে চেনা ময়দানে নেমে জনসংযোগ আরও একটু ঝালিয়ে নেওয়া কিংবা অচেনা ময়দানকে চিনে নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে করোনাভাইরাস। তাতে নয়া সংযোজন ‘ওমিক্রন’-এর আতঙ্ক।

Advertisement

তাই, প্রশ্নটা উঠে আসছে পুর ভোটের প্রচার-পর্বেই। তা হল, বিধানসভা ভোটের সময়ে কয়েক জন প্রার্থীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থেকে কি কিছুটা হলেও শিক্ষা নিয়েছেন পুর ভোটের যোদ্ধারা? কারণ, বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রচার থেকে সভা— সবেতেই প্রার্থীদের নিয়ে চলে হুড়োহুড়ি। কে কত আগে হাত মেলাবেন, মালা পরাবেন তা নিয়েও কর্মীদের মধ্যে চলে ঠান্ডা লড়াই। পুরসভা ভোটের প্রচারেও সেই বিধি ভাঙার ছবি দেখা যাচ্ছে অনেক ওয়ার্ডেই।

যদিও ডান থেকে বাম সব দলেরই বেশির ভাগ ভোট-যোদ্ধা দাবি করছেন, প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার কৌশলের মতোই তাঁরা করোনাকেও প্রতিহত করার বিধি মেনে চলছেন। কেউ কেউ মেনে নিচ্ছেন, ‘সব সময়ে মাস্ক পরা সম্ভব হচ্ছে না।’ তা শুনে চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এমনটা না করাই ভাল। কারণ, করোনা ছড়ায় ড্রপলেটের মাধ্যমে। নিজেকে এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখাটা এক জন ভাবী জনপ্রতিনিধির কর্তব্য হওয়া উচিত।’’

Advertisement

কোনও অবস্থাতেই তিনি মাস্ক খুলছেন না বলে জানাচ্ছেন কলকাতার বিদায়ী মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বললেন, ‘‘কলকাতার মহানাগরিক ছিলাম। তাই জানি, নিজের মাস্ক পরে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। তাতে মানুষের কাছেও বিধি মানার বার্তা দেওয়া যাচ্ছে।’’ ফিরহাদ অবশ্য এটাও দাবি করছেন, শহরে ১০০ শতাংশ মানুষের (শহর সংলগ্ন এলাকার মানুষও এখানে প্রতিষেধক নিয়েছেন) প্রথম ডোজ় হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশের দ্বিতীয় ডোজ় হয়েছে। তাই কলকাতায় অতিমারির আশঙ্কা কম। পরক্ষণেই তিনি এটাও বলছেন, ‘‘তা-ও সকলকে মাস্ক পরে থাকতে বলা হচ্ছে। মালা পরানো, হাত মেলানো বন্ধ।’’

করোনা-বিধি না-মানার ক্ষেত্রে সমান সব দলই। মনোনয়ন জমা দিতে এসে প্রার্থীর সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা।

মানুষের দোরগোড়ায় যাওয়া থেকে তিনি বিরত থাকছেন বলেই দাবি ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর (প্রদীপ)। বদলে, বহুতলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত-মাইকে প্রচার সারছেন। প্রদীপবাবু বললেন, ‘‘মানুষকে জানাচ্ছি, তাঁদের যেমন প্রত্যাশা রয়েছে, তেমন আমারও ইচ্ছে সকলের ঘরে যেতে। কিন্তু কোভিড-বিধি মেনে পারছি না। আক্রান্তদের বাড়ি গিয়ে পাশে থেকেছি। এখন যখন বাড়িতে না যাওয়ার কথা বলছি, মানুষ খুশিই হচ্ছেন।’’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত হয়ে মারা গিয়েছেন তাঁর এক পরিজন। তাই ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, ‘‘নিজে মাস্ক পরে, দূরত্ব-বিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। সঙ্গীদেরও বলছি বিধি মানতে। কিন্তু লোকের সংখ্যা বেশি হলে নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে। বস্তি এলাকায় প্রচারে গিয়ে দেখছি অনেকেই মাস্ক পরেননি। প্রচারের সঙ্গে সচেতন করছি, করোনা এখনও যায়নি।’’ সব সময়ে মাস্ক পরা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ। ‘‘বক্তব্য রাখার সময়ে মাস্ক খুলতে হচ্ছে। চেষ্টা করব বিধি মেনে চলতে’’— বলছেন তিনি।

করোনা-বিধি না-মানার ক্ষেত্রে সমান সব দলই। মনোনয়ন জমা দিতে এসে প্রার্থীর সঙ্গে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।

করোনা থেকে বাঁচতে হলে বিধি মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই বলেই দাবি ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্ম শিবিরের প্রার্থী, চিকিৎসক দেবজ্যোতি মজুমদারের। তাঁর কথায়, ‘‘যত কম লোক নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার করা যায়, সেই পরিকল্পনা হয়েছে। সভায় চেয়ার তিন ফুট অন্তর রাখতে বলা হয়েছে। মঞ্চও জীবাণুনাশ করা হবে। কর্মীদের বলা হয়েছে ঠিক মতো মাস্ক পরতেই হবে।’’ অশীতিপর মানুষের কাছে কোভিড মারাত্মক ঝুঁকির। তাই প্রচারে মাস্ক খোলার চেষ্টাও করছেন না বলেই দাবি ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী, ৮৮ বছরের করুণা সেনগুপ্তের। বৃদ্ধা বলছেন, ‘‘বস্তি এলাকায় যখন ঢুকছি, চার-পাঁচ জনের বেশি সঙ্গে থাকছেন না। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করছি।’’

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস একেবারেই নয়। বরং, প্রতিপক্ষকে গোল দেওয়ার পাশাপাশি করোনাকে কত জন হারাতে পারলেন, সেটাই সব শেষে দেখার বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন