New Garia

নামেই স্টেশন, নজর নেই পরিকাঠামোয়

শিয়ালদহ-বারুইপুর শাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও নিউ গড়িয়া স্টেশনের অবস্থা কার্যত দুয়োরানির মতো।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪০
Share:

অবহেলা: নজরে পড়ে না ডিসপ্লে বোর্ড। স্টেশনে ঢোকার পথেই বাইকের ভিড়, ভেঙেছে স্টেশনের বোর্ডও। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

সপ্তাহের কাজের দিনে ১১৫ জোড়া লো‌কাল ট্রেন যাতায়াত করে নিউ গড়িয়া স্টেশন দিয়ে। দক্ষিণ শহরতলির কয়েক হাজার যাত্রী মেট্রো ধরে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্যও ব্যবহার করেন এই স্টেশন।

Advertisement

শিয়ালদহ-বারুইপুর শাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও নিউ গড়িয়া স্টেশনের অবস্থা কার্যত দুয়োরানির মতো। ২০১০ সালে টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষ স্টেশন (নিউ গড়িয়া) পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারিত হয়। তখনই মেট্রোর সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলির ট্রেনের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নিউ গড়িয়া রেল স্টেশনের সংস্কার করা হয়। নিউ গড়িয়াকে প্রান্তিক স্টেশন ধরে সেখান থেকেই যাতে দক্ষিণ শহরতলির আরও ট্রেন ছাড়তে পারে, তার জন্য পরে একটি নতুন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করা হয়। বছর দুয়েক আগে সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়ে গেলেও এখনও সেখান থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। এ দিকে অবহেলা এবং অযত্নে মলিন দশা নিউ গড়িয়া স্টেশনের। এমনকি, স্টেশনের নামফলকটিও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

অজস্র ট্রেন সারাদিন ধরে যাতায়াত করলেও ট্রেন আসা-যাওয়ার খবর যাত্রীদের জানানোর কোনও ব্যবস্থা ওই স্টেশনে নেই। প্ল্যাটফর্মে থাকা মাইক্রোফোন বা ডিসপ্লে বোর্ডের কোনওটিই কাজ করে না বলে অভিযোগ। গড়িয়া স্টেশনে ট্রেন আসার ঘোষণা হলেও এখানে ওই কাজের জন্য রেলের কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নেই। রাতের দিকে স্টেশনের সব আলোও ঠিক মতো জ্বলে না বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। স্টেশনের শেড ফুটো হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে যাত্রীরা দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও পাওয়া যায়না। একাধিক জায়গায় প্ল্যাটফর্মের ফেন্সিং বা লোহার পাতের বেড়া ভেঙে গিয়েছে। স্টেশনে পানীয় জলের কল রীতিমতো নোংরা। পুরুষ এবং মহিলাদের সব ক’টি শৌচালয়ের অবস্থা দুর্বিষহ বলে অভিযোগ যাত্রীদের। আপ এবং ডাউন প্ল্যাটফর্মে থাকা মহিলাদের সব শৌচালয়ের দরজাও ভাঙা। ভিতরে নেই জলের কোনও ব্যবস্থা।

Advertisement

সম্প্রতি ওই স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চসায়র মেন রোডের দিক থেকে স্টেশনের সামনের অংশ আবর্জনা এবং নর্দমায় ঘেরা। হকার না থাকলেও নিত্যযাত্রীদের অনেকেই যে যার মতো মোটরবাইক –স্কুটার দাঁড় করিয়ে রাখেন স্টেশনের প্রবেশ পথে। নির্দিষ্ট কোনও স্ট্যান্ড না থাকায় স্টেশনে ঢোকার রাস্তা আটকে রাখে অন্তত ৪০-৫০টি মোটরবাইক এবং স্কুটারের ভিড়।

সুকোমল ঘোষ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘যে যার মতো করে স্কুটার-বাইক এখানে রেখে চলে যান। পরে আবার বাড়ি ফেরার সময়ে নিয়ে যান।’’ আর এক নিত্যযাত্রী চৈতালি রায় বলেন, ‘‘রাতের দিকে এই স্টেশন ফাঁকা হয়ে যায়। আলোও ঠিক মত জ্বলে না। রক্ষীও চোখে পড়ে না। খুবই অসহায় লাগে।’’

দেখা গেল, প্ল্যাটফর্মে সিসি ক্যামেরা কিংবা রেলরক্ষী বাহিনীর কোনও নজরদারি নেই। স্টেশনের উত্তর প্রান্তে একটি সিগন্যাল এবং প্যানেল অপারেটরের ঘর থাকলেও স্টেশন মাস্টারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্টেশনের একটি টিকিট কাউন্টার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রয়েছে

একটি অটোম্যাটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন। যাত্রীদের অভিযোগ, অব্যবস্থায় নিউ গড়িয়া স্টেশনের কার্যত জুড়ি মেলা ভার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দক্ষিণ শহরতলির একাধিক স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বৃদ্ধির কাজ হচ্ছে।। কিন্ত ওই স্টেশন অনেক পরে তৈরি হওয়ায় বেশির ভাগ পরিকাঠামোই নতুন। সমস্যা নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগের কথা শুনিনি। তবে অভিযোগ এলে পরিস্থিতি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন