এক মাসেও এগোল না বিক্রম-তদন্ত

ঠিক এক মাস আগে গত ২৯ এপ্রিল ভোরে লেক মলের সামনে বিক্রমের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। চালকের আসনে থাকা বিক্রম বেঁচে গেলেও তাঁর পাশের সিটে বসা মডেল সোনিকা মারা যান। সেই ঘটনায় পুলিশ বিক্রমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০২:১৪
Share:

স্মরণ: মৃত্যুর এক মাস পরে সোনিকার ছবি নিয়ে গির্জায় প্রার্থনা। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়িটির ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও খামবন্দি। অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টও পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার এক মাস পরেও লেক মলের সামনে গাড়ি দুর্ঘটনার তদন্ত সেই তিমিরেই। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সোনিকা ও বিক্রমের শুভাকাঙ্ক্ষীদের তৈরি করা দু’টি গ্রুপের পারস্পরিক ‘লড়াই’ও আগের তুলনায় থিতিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ঠিক এক মাস আগে গত ২৯ এপ্রিল ভোরে লেক মলের সামনে বিক্রমের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। চালকের আসনে থাকা বিক্রম বেঁচে গেলেও তাঁর পাশের সিটে বসা মডেল সোনিকা মারা যান। সেই ঘটনায় পুলিশ বিক্রমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরদিন আলিপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন বিক্রম। তদন্তকারীরা তাঁকে একাধিক বার জেরা করেন। প্রতি বারই তদন্তকারীদের কাছে দুর্ঘটনা নিয়ে একেক রকম দাবি করেছেন অভিনেতা। পরে অবশ্য জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পিছনে ঠিক কী কারণ রয়েছে, তা তাঁর মনে নেই।

রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির (এসএফএল) বিশেষজ্ঞদের তৈরি করা দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির ফরেন্সিক রিপোর্ট এসে গেলেও তা এখনও খামবন্দি বলে পুলিশের দাবি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ৯০-৯৫ কিমি। ঘটনার ন’দিন পরে বিক্রমের রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও তার রিপোর্টও এ দিন পর্যন্ত আসেনি। ফলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি দুর্ঘটনার সময়ে তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন কি না। চলতি সপ্তাহেই সমস্ত রিপোর্ট এসে যাবে বলে লালবাজারের একটি অংশ জানাচ্ছে। লালবাজারের এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিক্রম-সোনিকার একাধিক বন্ধুবান্ধব ওই ঘটনার আগে এবং পরের নানা ঘটনা নিয়ে অনেক তথ্য তদন্তকারীদের দিয়েছিলেন। সে সব ঠিক কি না, তা জানতেই ওই রিপোর্টগুলি পাওয়া জরুরি।’’ সোনিকার ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তাঁর দেহে একাধিক আঘাত ছিল। আর সেই আঘাতজনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিচারের অপেক্ষায় সোনিকার পরিবার

এক মাস পেরোনোর পরেও শুধুমাত্র এইটুকু তথ্যে তাঁরা কি সন্তুষ্ট? সোনিকার পরিজনদের এই প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানান, গোড়ায় তদন্তের গতি নিয়ে কিছু ক্ষোভ থাকলেও এখন তাঁরা পুলিশকে কিছুটা সময় দিতে চান। কারণ ঠিক পথে, সব দিক দেখেশুনে এগোতে গেলে পুলিশেরও যে আরও কিছুটা সময় চাই, তা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। এ দিন পার্ক স্ট্রিটের একটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিলেন সোনিকার মা-বাবা, বন্ধু সাহেব ভট্টাচার্য এবং অন্য আত্মীয়েরা।

দুর্ঘটনার জেরে বিক্রমের পেশাগত জীবনে কি কোন ছাপ পড়েছে? বিক্রম বা তাঁর পরিবার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হলেও টালিগঞ্জ পাড়ার একাংশের মতে, অবশ্যই পড়েছে। তাঁর অভিনীত ধারাবাহিকটি আচমকাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, বিক্রমের আগামী ছবির প্রচারও তেমন জমকালো হতে পারছে না। এক অভিনেতার কথায়, ‘‘ওই ছবিটিতে বিক্রম এক জন পুলিশকর্মীর ভূমিকায় রয়েছেন। এক জন অভিযুক্তকে পুলিশের ভূমিকায় দর্শক গ্রহণ করতে পারবেন কি?’’

বিক্রমের বাবা বিজয় চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছেন তাঁর ছেলে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইছেন। আর দুর্ঘটনার তদন্ত? না, সে নিয়ে একটি কথাও বলতে চান না তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন