এমনই অবস্থায় পানীয় জল ও শৌচাগার। —নিজস্ব চিত্র।
কলের উপরে লেখা রয়েছে ‘পানীয় জল’। তবে, জল পড়ে না। শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে মহিলাদের প্রায় এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে হয়। আর পুরুষেরা খুঁজে নেন নির্জন কোনও ঝোপঝাড়।
কোনও গণ্ডগ্রাম নয়। এমনই বেহাল দশা কলকাতা বিমানবন্দরের ৭ নম্বর গেটের কাছে অন্তর্দেশীয় পণ্য বিভাগের। যেখান থেকে রোজ প্রায় কয়েকশো টন পণ্য কলকাতা থেকে বাইরে পাঠানো বা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নানা কারণে আসা যাওয়া করেন। ইতিমধ্যেই ঝাঁ-চকচকে নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং ও যাত্রী পরিষেবার মানের জন্য কয়েকটি পুরস্কার ঝুলিতে এসেছে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ওই নতুন টার্মিনাল থেকে কিছুটা দূরে বিমানবন্দরের অংশ হয়েও পণ্য বিভাগ পড়ে রয়েছে সেই মান্ধাতার আমলে! উন্নত পরিষেবা দূরে থাক, পানীয় জল বা শৌচাগারের মতো সাধারণ পরিষেবাগুলিই পাওয়া যায় না সেখানে।
পণ্য বিভাগের ওই কমপ্লেক্সে রয়েছে গো এয়ার, স্পাইসজেট, ইন্ডিগো, জেট এয়ার ও এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস। রয়েছে একটি ক্যুরিয়ার সংস্থার নিজস্ব পণ্য অফিসও। ওই অফিসগুলিতে কয়েকশো কর্মী বিভিন্ন শিফ্টে কাজ করেন। ওই চত্বর ঘিরে নানা কাজে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে।
বৃহস্পতিবার মালপত্র ট্রাকে তোলার ফাঁকে ওই বিভাগের এক কর্মী জানালেন, এত লোকের যাতায়াত সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জন্য পানীয় জল বা শৌচাগারের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। পানীয় জল বাইরে থেকে কিনে আনতে হয় তাঁদের। যেখানে পানীয় জলের ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে, তার থেকে কয়েক হাত দূরেই রয়েছে দু’টি শৌচাগার। কিন্তু দেখা গেল, দু’টিই তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিমান সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, ওই শৌচাগার দু’টি ২৪ ঘণ্টাই তালাবন্ধ থাকে। তাঁরা জানালেন, শুধু তো পণ্য ওঠানো-নামানোই নয়, বিমানবন্দরের ওই পণ্য বিভাগ বা কার্গোতে অনেক সময় কফিনবন্দি শবদেহও আনা হয়। প্রিয়জনের কফিনের জন্য অপেক্ষারত পরিজনেরা অনেক সময় তৃষ্ণার জলটুকু পর্যন্ত পান না।
গো এয়ারের এক মহিলা কর্মী জানালেন, আগে পণ্য অফিসগুলির পাশে অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের শৌচাগার ব্যবহার করা যেত। এখন সেটি বন্ধ। ফলে শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে যেতে হচ্ছে প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসের এক কর্মী জানান, তাঁদের নিজস্ব শৌচাগার তাঁদের কর্মী বাদে অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারেন না। আন্তর্জাতিক পণ্য বিভাগে অবশ্য পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে।
নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং তৈরির পাশাপাশি নানা ভাবে সাজানো হচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দরকে। তবে পণ্য বিভাগে ঢুকলে বোঝা দায় এটি কলকাতা বিমানবন্দরের একটি অতি সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অভিযোগ, গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে পণ্য বিভাগের এমনই শোচনীয় অবস্থা। বিমান সংস্থাগুলির অভিযোগ, এ সব সমস্যার কথা একাধিক বার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁদের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।
কী বলছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ?
যে সময় থেকে এই সমস্যার উত্পত্তি, সে সময়ে বিমানবন্দরের অধিকর্তা ছিলেন বি পি শর্মা। এক মাস হল তাঁর পদ বদল হয়েছে। ফোনে তিনি অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বর্তমানে বিমানবন্দরের অধিকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন কৌশিক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে, পণ্য বিভাগের জন্য আমাদের নতুন পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে আসা মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য আগামী ছ’মাসের মধ্যে সেখানে শৌচাগারের পাশাপাশি প্রতিক্ষালয় বানানোরও চিন্তাভাবনা চলছে।”