খালের দায় নিয়ে দুই কাউন্সিলরের তরজা

গত বছর কলকাতায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নেওয়ার পরে চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রশাসনের নানা মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪১
Share:

দূষিত: সংস্কার হয়নি বাগজোলা খালের। ছবি: শৌভিক দে

পুরসভা বলছে ডেঙ্গির মরসুমে বাগজোলা খালই উত্তর কলকাতার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। অথচ, সেই খাল সংস্কারের দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়েই বিবাদ চরমে উঠেছে কলকাতা পুরসভার দুই কাউন্সিলরের মধ্যে। অবস্থা এমনই যে ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসতে হয়েছে মানিকতলা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেকে। সূত্রের খবর, তাতেও বিবাদ মেটেনি। দুই কাউন্সিলরই খাল সংস্কারের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।গত বছর কলকাতায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নেওয়ার পরে চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রশাসনের নানা মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে।

Advertisement

রাজ্যের এক মন্ত্রী ইতিমধ্যেই কলকাতাকে ডেঙ্গি-মুক্ত ঘোষণাও করে দিয়েছেন। সেই ঘোষণা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে পুর-প্রশাসনের অন্দরেই। খোদ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষকেই বৈঠক করে জানাতে হয়েছে, কলকাতা পুরসভার বেশ কিছু অংশে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার ৩ নম্বর বরোর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতিই ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সেখানে ৫০ জনেরও বেশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শহরের নানা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুরসভা এই জ্বরকে ডেঙ্গি-জ্বর মানতে না চাইলেও রোগীদের একটা বড় অংশেরই দাবি, তাঁরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।

এই প্রেক্ষিতে ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া খাল নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল সবচেয়ে বেশি। ক্যানাল ইস্ট এবং ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে ওই খাল। দুই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর অফিসের তরফে ফলাও করে ডেঙ্গি-কর্মসূচির কথা প্রচার করা হচ্ছে। তবে খাল সংস্কারে তাদের কারও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। রবিবার নিজের নিজের ওয়ার্ডে ডেঙ্গি কর্মসূচি নিয়েছিলেন ওই দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী এবং শুক্লা ভোঁড়। তবে খালের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেখা যায়নি তাঁদের কাউকেই। এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘এলাকা পরিষ্কার করতে যাচ্ছেন সকলেই, কিন্তু, যে খাল মশার আঁতুড়, তার দায় কেউ নিতে চাইছেন না।’’ ভীষ্মদেব কর্মকার নামে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে প্রায় সব সভায় গিয়ে খাল সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু, তিনি নিজে কিছুই করছেন না!’’

Advertisement

পুর আধিকারিকদের একাংশ অবশ্য খাল সংস্কারের দায় সেচ দফতরের উপরে চাপাতে চাইছিলেন। ওই খালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় দেখার জন্য পুরসভার নিজস্ব দফতর রয়েছে। খালের সংস্কারের সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় জড়িত থাকলে তা তাঁদেরই দেখার কথা। তা ছাড়া সেচ দফতর বহুদিনই পুরসভার সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাইছে।’’

৩ নম্বর বরো কমিটি সূত্রে খবর, বরো বৈঠকেও খালের সংস্কারকে অন্যতম ‘এজেন্ডা’ করে আলোচনা হয়েছিল। তবু কাজ হচ্ছে না কেন? ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমলের দাবি, ‘‘আমি নিজের মতো করে সব চেষ্টাই করছি। তবে সব দিক থেকে সমান ভাবে সাহায্য পাচ্ছি না। নৌকা নামিয়ে জল পরিষ্কারও করেছি। বাকিরা কী করছেন?’’ ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুক্লাদেবীকে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘খালের দায় সকলের। কিন্তু, কিছুই করা যাচ্ছে না।’’ করা যাচ্ছে না কেন? প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দিলেন তিনি। সাধনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ডেঙ্গি কারও রাগ-অভিমান মানে না। সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’’এক হয়ে কাজ করতে সমস্যা কোথায়? উত্তর মেলেনি সাধনবাবুর কাছেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন