বাড়ছে বহুতল, চিড়িয়াখানায় কমছে পরিযায়ী

প্রশাসন সূত্রের খবর, চিড়িয়াখানায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমছে কেন, তা জানতে সম্প্রতি রাজ্য বন দফতর একটি সমীক্ষা চালায়। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পাখিরা একটি জায়গা থেকে অন্যত্র আসার সময়ে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রেখে আকাশ থেকে ধীরে-ধীরে নীচে কোনও জলাশয় অথবা ফাঁকা জায়গায় নেমে আসে।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৩
Share:

চিড়িয়াখানার এই জলাশয়ে ক্রমশ কমছে পরিযায়ী পাখি। নিজস্ব চিত্র

শহরে বহুতলের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যার ফলে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। সম্প্রতি বন দফতর ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাখি বিশারদদের একাংশ।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, চিড়িয়াখানায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমছে কেন, তা জানতে সম্প্রতি রাজ্য বন দফতর একটি সমীক্ষা চালায়। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পাখিরা একটি জায়গা থেকে অন্যত্র আসার সময়ে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা বজায় রেখে আকাশ থেকে ধীরে-ধীরে নীচে কোনও জলাশয় অথবা ফাঁকা জায়গায় নেমে আসে। কিন্তু বহুতলের কারণে পাখিদের জায়গা নির্বাচনে অসুবিধা হয়। এখন চিড়িয়াখানার আশপাশ-সহ শহরের নানা জায়গাতেই প্রচুর সংখ্যক বহুতল গড়ে উঠেছে। আর তাতেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পরিযায়ী পাখিদের যাত্রাপথ।

উপ মুখ্য বনপাল তথা চিড়িয়াখানার সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব বলেন, ‘‘চিড়িয়াখানা-সহ শহরের আশপাশে বহুতল গড়ে ওঠা পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তা ছাড়াও, পরিবেশ দূষণ, খাবারের অভাব এবং জলাশয়ের দুরবস্থাও গ্রহণযোগ্য কারণ।’’ তিনি জানান, চিড়িয়াখানার জলাশয় পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি কৃত্রিম ভাসমান হাঁস তৈরি করে সেখানে ছাড়া হবে। এর ফলে পরিযায়ী পাখিরা যেতে যেতে ওই কৃত্রিম হাঁস দেখে আকৃষ্ট হয়ে জলাশয়ে নামতে পারে। ওই জলাশয়ে থাকা একটি দ্বীপ পরিযায়ী পাখিরা বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করত। দ্বীপের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে আগে সেটি কেমন ছিল, তারও তুলনা করে দ্বীপটি সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিনোদবাবু।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে আ়ড়াই হাজার নতুন বাড়ি বা বহুতলের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন যে সমস্ত নকশার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তার সিংহভাগই হল সাততলা বা আটতলা বাড়ির। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই সব বহুতল পরিযায়ী পাখিদের পথে বাধার সৃষ্টি করছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

পক্ষী বিশারদ রূপঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে চিড়িয়াখানায় সরেল, নর্দান পিনটেল, কমন টিল, বালিহাঁস প্রচুর সংখ্যায় আসত। কিন্তু এখন তারা আসে না। চিড়িয়াখানার ঠিক সামনে একটি বহুতল তৈরি হওয়ার পর থেকেই এখানকার জলাশয়ে ধীরে ধীরে পাখি আসা কমতে শুরু করেছিল। এখন ওই পাখিগুলি চলে যায় সাঁতরাগাছি ঝিলে।’’ পক্ষী বিশারদ অর্জন বসু রায় বলেন, ‘‘আমরা সাঁতরাগাছিতে নতুন করে পাখিদের উপযোগী থাকার ব্যবস্থা করার ফলে এই বছর প্রচুর সংখ্যক পাখি এসেছে।’’

বহুতলের পাশাপাশি পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিড়িয়াখানার খালের দূষণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্প্রতি সেখানকার জলের যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল, তার প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, জলে কোনও

সমস্যা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন