হলুদ ট্যাক্সিতে লাক্সারি থাবা

জনপ্রিয়তা বাড়ছিলই। এ বার লাক্সারি ক্যাব সরাসরি হাত বাড়াল হলুদ ও নীল-সাদা ট্যাক্সি-সাম্রাজ্যে। ওলা, উবেরের মতো লাক্সারি ট্যাক্সি পরিষেবা বন্ধের দাবিতে আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি ট্যাক্সিমালিক এবং চালক সংগঠন। তার মাত্র ক’দিন আগে কলকাতা শহরে পরিষেবা দেয়, এমন হাজারখানেক সাধারণ ট্যাক্সি গাঁটছড়া বাঁধল ওলা-র সঙ্গে। শুক্রবার থেকে সংস্থাটির ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’-এ অন্য গাড়ির মতো হলুদ এবং নীল-সাদাও ‘বুক’ করা যাবে।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত ও অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫২
Share:

জনপ্রিয়তা বাড়ছিলই। এ বার লাক্সারি ক্যাব সরাসরি হাত বাড়াল হলুদ ও নীল-সাদা ট্যাক্সি-সাম্রাজ্যে। ওলা, উবেরের মতো লাক্সারি ট্যাক্সি পরিষেবা বন্ধের দাবিতে আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি ট্যাক্সিমালিক এবং চালক সংগঠন। তার মাত্র ক’দিন আগে কলকাতা শহরে পরিষেবা দেয়, এমন হাজারখানেক সাধারণ ট্যাক্সি গাঁটছড়া বাঁধল ওলা-র সঙ্গে। শুক্রবার থেকে সংস্থাটির ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’-এ অন্য গাড়ির মতো হলুদ এবং নীল-সাদাও ‘বুক’ করা যাবে।

Advertisement

দীর্ঘ দিন ধরে একচেটিয়া ব্যবসা চালানোর কারণে শহরের ট্যাক্সির দাদাগিরি ছিল সীমাহীন। যাত্রী-প্রত্যাখ্যান, যাত্রীদের হেনস্থা করা— এ সবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন আমজনতা। স্বভাবতই ওলা-উবের শহরে আসায় সেই ট্যাক্সিকে এখন পাল্টা প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছেন যাত্রীরা। টাচ ফোনে অ্যাপের সাহায্যে অনায়াসেই দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াচ্ছে এসি ট্যাক্সি। নিস্তার মিলেছে গন্তব্য বা ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থেকেও। ভাল পরিষেবা পেতে কিছুটা বেশি টাকা খরচেও তাই আর পিছপা নন যাত্রীরা।

এ বার ওলা সরাসরি মিটার ট্যাক্সির সংসার ভাঙার দিকে এগনোয় ট্যাক্সিমালিক সংগঠনগুলি আরও বিপদে পড়ল বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। স্বভাবতই ট্যাক্সিমালিকদের একাংশ মনে করছে, এতে ট্যাক্সি সংসারে দু’টি পক্ষ তৈরি হতে পারে। ভবিষ্যতে যে সব ট্যাক্সি ওলার মতো ‘ক্যাব’-এর সংসারে চলে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে থেকে যাওয়া ট্যাক্সিমালিকদের লড়াইয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই।

Advertisement

এই আশঙ্কার সুর শোনা গিয়েছে শাসক দলের ট্যাক্সি সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি মেন্স ইউনিয়ন’-এর নেতা শম্ভুনাথ দে-র গলায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিষেবা আরও কী ভাবে যাত্রীমুখী করে তোলা যায়, ভাবতে হবে। ছেড়ে যাওয়া চালকদেরও ভাল করে বোঝাতে হবে।’’ তবে উল্টোসুরও রয়েছে। ধর্মঘটী ট্যাক্সিমালিকদের প্রধান সংগঠন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা বিমল গুহর দাবি, ‘‘এতে আখেরে চালকেরা লাভবান হবেন। ক্ষতি কিছু নেই।’’

গত নভেম্বরে কলকাতায় আগাম গাড়ি বুকিং পরিষেবা শুরু করেছিল। এই ক’মাসে ওই পরিষেবা যাত্রীমহলে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। এ বার তাই আরও এগোচ্ছে ওলা। এ দিন সংস্থাটির কর্তা আনন্দ সুব্রাহ্মণ্যম ও নীতেশ প্রকাশ জানান, তাঁদের মোবাইল-অ্যাপে অন্য গাড়ির মতোই সরকার নির্ধারিত মিটারচালিত সাধারণ ট্যাক্সিও বুক করার সুযোগ থাকবে। কোথা থেকে কোথায় যাবেন, দুই তথ্যই যাত্রীকে সেই অ্যাপে জানাতে হবে। এর পরে যাত্রীর অবস্থানের এক কিমি-র মধ্যে কতগুলি সাধারণ ট্যাক্সি আছে, মোবাইলে দেখা যাবে। ভাড়া দিতে হবে সরকারি হারের থেকে ১০ টাকা বেশি। এই অতিরিক্ত টাকা পাবে ওলা। মোবাইল-ওয়ালেটের পাশাপাশি নগদেও ভাড়া দেওয়া যাবে।

তবে ওলা-র মাধ্যমে পরিষেবার ক্ষেত্রেও প্রত্যাখ্যানের সুযোগ থাকছে সাধারণ ট্যাক্সির। ওলা-র অন্য গাড়ির ক্ষেত্রে যাত্রীকে গন্তব্য জানাতে হয় না। মিটার ট্যাক্সির ক্ষেত্রে জানাতে হবে। যাত্রীর আবেদনে সাড়া না দেওয়ারও স্বাধীনতা রয়েছে এই চালকদের। যদিও এর মানেই যে প্রত্যাখ্যানের সুযোগ থাকছে, এমনটা মানতে চাইছে না ওলা কিংবা মিটার ট্যাক্সি— কোনও পক্ষই। ট্যাক্সিচালকদের দাবি, ওলা-র তালিকাভুক্ত হওয়ায় খালি ট্যাক্সি চালিয়ে আমাদের যাত্রী খুঁজতে হবে না। এতে তেলের খরচ বাঁচবে। স্বভাবতই এতে প্রত্যাখ্যানের প্রবণতাও কমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট মহলের হিসেবে, রোজ একটি ট্যাক্সি গড়ে ১২০ কিমি যাতায়াত করে। এর প্রায় ৪০ শতাংশ রাস্তাই সওয়ারি ছাড়া ঘুরতে হয়। এই ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হলে ভবিষ্যতে কি সব ট্যাক্সিচালকই এই ধরনের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইবেন? সে ক্ষেত্রে ইউনিয়নের দাপট কতটা থাকবে? এ ধরনের সংস্থাগুলির দাবি, নিয়মিত যাত্রী মেলায় চালকদের আয় অনেক বেড়ে যায়। তাই সাধারণ ট্যাক্সিচালকেরা এতে যুক্ত হতে চাইবেন বলেই তাদের ধারণা।

ওলা-র কর্তারা জানান, যাত্রী চাইলে অ্যাপ থেকে এসএমএস মারফত যাত্রা ও চালকের তথ্য অন্য কাউকে জানাতে পারবেন। বিপদে পড়লে ‘এসওএস’ বোতাম টিপে নিকটজনের কাছে এসএমএস এবং ই-মেল মারফত বিপদবার্তা পাঠানো যাবে। তবে অ্যাপে সেই নিকটজনের ফোন নম্বর-সহ বিভিন্ন তথ্য আগে নথিভুক্ত করতে হবে।

তবে কি ক্রমশই কোণঠাসা হবে মিটার ট্যাক্সি? বিমল গুহের মতে, ‘‘খালি ট্যাক্সির যাত্রীর খোঁজে ঘুরে বেড়ানোই যে প্রত্যাখ্যানের কারণ, তা আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি। অথচ, কোনও সরকারই আমাদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি। ওলা যদি সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়, তা হলে অসুবিধের কিছু নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন